সুয়ারেজকে কোমান নয় বার্সেলোনা বোর্ডই চলে যেতে বলেছে

মেসির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতেই হবে কোমানের।ছবি: রয়টার্স

লুইস সুয়ারেজ বার্সেলোনা ছেড়ে আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়েছেন দুদিন হলো। এরই মাঝে আতলেতিকোর হয়ে অনুশীলনে নেমেও পড়েছেন। এ দলবদল নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। পরশু বিদায়বেলায় ক্লাব সভাপতিকে হালকা খোঁচা দিয়েছেন সুয়ারেজ। পরদিন লিওনেল মেসিও সুয়ারেজের বিদায় নিয়ে রাগ-ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ক্লাবের দিকে। সে কথায় আবার সায় দিয়েছেন বার্সেলোনা থেকে বিদায় নেওয়া নেইমার-দানি আলভেজরা। ক্লাব কিংবদন্তি সুয়ারেজকে এভাবে বিদায় দেওয়া মানতে পারছেন না তাঁরা।

সুয়ারেজের বিদায়ের পেছনে বোর্ডের ভূমিকা তো আছেই, নতুন কোচ রোনাল্ড কোমানের দায়ও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। কারণ, ক্লাবের দায়িত্ব পেয়ে প্রথম দিনই সুয়ারেজকে বলে দিয়েছেন, তাঁর পরিকল্পনায় নেই এই স্ট্রাইকার। এ কারণেই তো লিগ প্রতিদ্বন্দ্বীরা আচমকা শক্তিশালী হয়ে গেল উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ডকে পেয়ে। তবে আজ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সুযোগ পেয়েই কোমান জানিয়ে দিয়েছেন, সুয়ারেজের বার্সেলোনা-পর্ব শেষ করার পেছনে তিনি নন, ক্লাবই দায়ী।

নিজের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনেই সুয়ারেজ জানিয়েছেন কোমানের ওপর তাঁর কোনো রাগ ক্ষোভ নেই। তাঁকে বার্সেলোনা ছাড়া বাধ্য করার পেছনে নতুন কোচের খুব বেশি ভূমিকা দেখেননি, ‘এমন কিছু হবে ধরেই নিয়েছিলাম। তিনি (কোমান) আমাকে জানানোর আগেই এমন কিছু বলাবলি হচ্ছিল। সরে যেতে আমার আপত্তি ছিল না। তবে পরের ক্লাব খুঁজে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টাতে এখানেই অনুশীলন করে যেতে চেয়েছিলাম। কোমান তাতে সম্মত হয়েছেন।’

সুয়ারেজের এমন বার্তার পরও সমর্থক বা সাবেক খেলোয়াড়দের ক্ষোভ কমেনি। আগামীকাল ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে লা লিগা শুরু হবে বার্সেলোনার। আজ ম্যাচপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়ে কথা খুব কমই বলতে পেরেছেন। তাঁকে বড় একটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে সুয়ারেজ ও মেসির ক্ষোভ নিয়ে। সমালোচনার মুখে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন কোমান, ‘দেখে মনে হচ্ছে এই গল্পে আমিই খলনায়ক, কিন্তু সুয়ারেজের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি ওকে মানুষ ও খেলোয়াড় হিসেবে শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। আমি বলেছি সে যদি থাকে, ওর জন্য খেলার সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে। তবে যদি থেকে যায় তবে দলের অংশ বলেই গণ্য হবে।’

আতলেতিকোর হয়ে আগামীকালই হয়তো মাঠে দেখা যাবে সুয়ারেজকে।
ছবি: রয়টার্স

ইদানীং বার্সেলোনার নেতিবাচক খবর মানেই সেটার সঙ্গে জড়িত ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তাঁর পরিচালিত বোর্ড। কোমানের কথা সত্যি হয়ে থাকলে সুয়ারেজকে এভাবে ‘বের করে দেওয়া’র পেছনেও মূল ভূমিকা বার্সেলোনা বোর্ডেরই, ‘আমি দলে যোগ দেওয়ার আগেই ক্লাব কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল এবং আমি সেই সিদ্ধান্তগুলোতে সায় দিয়েছি। কিন্তু সিদ্ধান্ত আমার নেওয়া নয়।’

কোমানের দায় দেখছেন কি না জানা নেই, তবে প্রিয় বন্ধুর এমন বিদায়ে বোর্ডের ভুল ভালোভাবেই খুঁজে পেয়েছেন মেসি। এমনিতেই তাঁর ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশের পর ক্লাব সভাপতির আচরণ তাঁকে রাগিয়ে দিয়েছিল। এর কদিন পরই বন্ধুকে এভাবে চলে যেতে দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারেননি। কাল ইনস্টাগ্রামে ক্লাবকে কড়া বার্তা দিয়েছেন এভাবে, ‘ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবেই বিদায়টা প্রাপ্য ছিল তোমার, ব্যক্তিগত ও দলীয় শিরোপা জয়ের আনন্দের মধ্যে। যেভাবে তোমাকে ক্লাব থেকে বের করে দিল ওরা, এটা তোমার প্রাপ্য ছিল না কোনোভাবেই। কিন্তু সত্যিটা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে (ক্লাবে) যা হচ্ছে, তাতে আমি কোনো কিছুতেই আর অবাক হই না।’

দলের প্রাণভোমরার এভাবে ক্ষেপে ওঠা কোনো কোচের জন্যই সুখকর কিছু নয়। হাজার হলেও মাঠে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকেই। তবে কোমানের ধারণা ‘পেশাদার’ মেসি মন খারাপ ভাবটা কেটে যাবে মাঠে নামলেই, ‘বন্ধুদের একজন ক্লাব ছাড়লে মেসির মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনুশীলন ও ম্যাচে মেসির সবার জন্য উদাহরণ হয়েছিল। একবারও তাকে অপ্রস্তুত পাইনি আমি। দারুণ নিবেদন দেখাচ্ছে। এ ব্যাপারে (মেসির নিবেদন) আমার কোনো সন্দেহ নেই।’

সুয়ারেজকে পছন্দ নয় বলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো বিকল্প আনা হয়নি ক্লাবে। দলে নিখাদ নম্বর নাইন বলতে আছেন মার্টিন ব্রাথওয়েট, যাঁকে বার্সেলোনার জার্সিতে দেখা যায় না বহুদিন। এ ব্যাপারে অন্তত প্রকাশ্যে উদ্বেগ দেখাচ্ছেন না কোমান, ‘দলের মান বাড়াতে পারে, এমন খেলোয়াড় আমরা সব সময় খুঁজি। হতে পারে ক্লাবের আর্থিক অবস্থার কারণে যাদের চাচ্ছি, পাচ্ছি না। কিন্তু সেটা মেনে নিয়েছিও, আমি আগেই এটা জানতাম। আমাদের অনেক ভালোমানের খেলোয়াড় আছে সামনে। স্কোয়াড যদি এমন থাকে, আমরা সেটা মেনে নেব।’