সুয়ারেজের হুমকিতে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল বার্সা

বার্সায় সুয়ারেজের ছয় বছরের সম্পর্ক শেষ হচ্ছে।ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনায় সম্ভবত সময়টাই এমন, সোজা পথে কোনো কাজ হয় না। লুইস সুয়ারেজেরও হলো সে অভিজ্ঞতা। সোজা পথে কাজ হচ্ছিল না, তাই আঙুল বাঁকাতে হলো ৩৩ বছর বয়সী উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে।

তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে নাটক তো কম হলো না! দুদিন আগে সেটির শেষ হতে গিয়েও যেন হচ্ছিল না। বার্সেলোনার সঙ্গে হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদে চলেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাঁধ সাধলেন বার্সা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ। সুয়ারেজ আর কী করবেন, বার্সার বোর্ডের ক্ষেত্রে যেমনটা করতে হয়, তা-ই করলেন। দিলেন হুমকি—আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে সব ব্যাখ্যা করেন। ব্যস, ১৮০ ডিগ্রি বদল বার্সার সুরে। সুয়ারেজকে আতলেতিকোকে যেতে দিচ্ছে বার্সা।

বিবিসির স্প্যানিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ গিয়েম বালাগ জানাচ্ছেন, আতলেতিকো সুয়ারেজের জন্য বার্সাকে ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ ইউরো দেবে, তবে সেটিও বার্সা পাবে নানা শর্ত পূরণসাপেক্ষে। যার মধ্যে একটি আতলেতিকোর চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়া। আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনের সঙ্গে আলোচনার পর সুয়ারেজ নিজেও বেতন অনেক কমাতে রাজি হয়েছেন। স্কাই স্পোর্টসের তথ্য, সুয়ারেজ বার্সায় বছরে পেতেন ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ইউরো, আতলেতিকোতে পাবেন তার অর্ধেক।

সুয়ারেজকে বার্সায় চান না নতুন কোচ রোনাল্ড কোমান, সে তো পুরোনো খবর। এরপর থেকে সুয়ারেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাটকের শুরু। প্রথমে শোনা গেল, তিনি জুভেন্টাসে যাচ্ছেন। সেখানে প্রায় সব নিশ্চিতই ছিল, ঝামেলা বাধল তাঁর ইতালিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উতরে যাওয়া আর ইতালিয়ান ভিসা পাওয়া নিয়ে। ইতালিয়ান ভাষা পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত উতরে গেছেন সুয়ারেজ, কিন্তু ভিসা পাচ্ছিলেন না। এদিকে গতকাল খবর এল, ইতালিয়ান ভাষা পরীক্ষায়ও জালিয়াতি করেছেন সুয়ারেজ—এমন অভিযোগ উঠেছে। তা যা-ই হোক, তাঁর ভিসা পেতে দেরি হচ্ছিল দেখে জুভেন্টাস আর অপেক্ষা করেনি। আন্দ্রেয়া পিরলোর অধীনে এই মৌসুমে নতুন পথচলা শুরু করা ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা আতলেতিকো থেকেই দলে টেনেছে স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতাকে।

আতলেতিকো সে জায়গাটা সুয়ারেজকে দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছিল। দুই পক্ষে সমঝোতাও হয়ে গেল। অপেক্ষা ছিল বার্সার সঙ্গে চুক্তির বাকি এক মৌসুমের দেনাপাওনা বুঝে নিয়ে সুয়ারেজ কবে বার্সা থেকে ‘মুক্ত’ হবেন, সেটির। তা যখন হলো, তখন বাধ সাধলেন বার্তোমেউ। সুয়ারেজকে ‘ফ্রি এজেন্ট’ হতে দেওয়ার সমঝোতাপত্রে উল্লেখ ছিল, পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ—এই চার ক্লাবে যেতে পারবেন না সুয়ারেজ। কিন্তু বার্তোমেউ যখন জানতে পারলেন, সুয়ারেজ আতলেতিকোতে যাচ্ছেন, তিনি চুক্তিতে ওই চার দলের সঙ্গে আতলেতিকোর নামও জুড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

আতলেতিকো লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের একটি, এমন এক দলের কাছে সুয়ারেজের মতো একজন স্ট্রাইকারকে বিক্রি করে আতলেতিকোকে শক্তিশালী করতে দিতে চান না বার্তোমেউ। এর আগে ২০১৩ সালে দাভিদ ভিয়াকে এভাবে যেতে দিয়ে চড়া মাশুল গুনেছিল বার্সা, ওই মৌসুমে লিগ জেতে আতলেতিকো। পাশাপাশি বাজারে গুঞ্জন ছিল, সুয়ারেজের ও লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপোর পাশাপাশি কিছু অর্থ দিয়ে ইন্টার মিলান থেকে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজকেও আনার চেষ্টা করছে বার্সা।

মেসি ও নেইমারের সঙ্গে সুয়ারেজ মিলে বার্সায় গড়েছিলেন ‘এমএসএন’ নামের ত্রিফলা।
ছবি: এএফপি

কিন্তু সব তো বার্তোমেউর কথায় হতে পারে না! সুয়ারেজকে বার্সা রাখবে না, আবার তাঁর বড় ক্লাবে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেবে, শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই ভাববে—এতটা সুয়ারেজ মানতে পারছিলেন না। বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন বার্সার বোর্ডের ওপর। সংবাদমাধ্যমে এসে কথা বলার কথা ভাবছিলেন সুয়ারেজ—এমনটাই জানাচ্ছে স্কাই স্পোর্টস ও বার্সেলোনাভিত্তিক দৈনিক স্পোর্ত। এরপর সুয়ারেজের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর এখন ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদলেছে বার্সা।

সুয়ারেজের আতলেতিকোতে যাওয়া এখন তাই সময়ের ব্যাপার। বার্সার সঙ্গে তাঁর ছয় বছরের সম্পর্কের শেষও হতে যাচ্ছে। যে ছয় বছরে বার্সাকে তিনি রাঙিয়েছিলেন ২৮৩ ম্যাচে ১৯৮ গোলে। ক্লাব ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার সম্মানের পাশাপাশি সুয়ারেজ বিদায় নিতে যাচ্ছেন চারটি লিগ শিরোপা, চারটি কোপা দেল রে ও ২০১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগের আনন্দ নিয়ে। আর প্রিয় বন্ধু মেসি আর নেইমারের সঙ্গে মিলে ফুটবল ইতিহাস রাঙানো ‘এমএসএন’ জুটির হয়ে আলো ছড়ানোর স্মৃতিটাও উজ্জল হয়ে রইবে।