সেই কিংসের কাছেই ৩ গোল খেয়ে বিদায় মারুফুল হকের দলের

বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের উল্লাসছবি: বাফুফে

নতুন মৌসুমে চট্টগ্রাম আবাহনীর আগের অর্ধেক শক্তিও নেই। দলটির কোচ মারুফুল হক আছেন বলেই তাদের গোনায় রাখতে হচ্ছে। তবু বসুন্ধরা কিংসের সামনে চট্টগ্রাম আবাহনী বলে কথা।

বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া ফুটবলে অপরাজেয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এত দিন দলটি মারুফুলের চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে পড়লেই যেন ভড়কে যেত। এর আগে মারুফুলের দলটিকে একেবারেই হারাতে পারেনি, এমন নয়; তবে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে বসুন্ধরা হেরেছে তিনবার। কিন্তু আজ ক্ষয়িষ্ণু দল নিয়ে আর বসুন্ধরার সঙ্গে পেরে উঠলেন না মারুফুল। ৩–০ গোলে হেরে তাঁর দলকে বিদায় নিতে হয়েছে স্বাধীনতা কাপ থেকে।

স্কোরলাইন দেখে মনে হতে পারে, বসুন্ধরার সামনে একেবারেই উড়ে গেছে আবাহনী। আসলে তা নয়। আবাহনী প্রথমে দিয়েছে গোল মিসের খেসারত। দ্বিতীয়ত, শেষ দুটি গোল খায় ৮০ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর। ১টি করে গোল করেছেন রবসন রবিনিও, মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও মতিন মিয়া।

রবসন (১০ নম্বর জার্সি) করেন দলের প্রথম গোল
ছবি: বাফুফে

ন্যূনতম ব্যবধানে হারলেও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ থাকত আবাহনীর। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশের সমান ২ পয়েন্ট নিয়েও গোল গড়ে পিছিয়ে থেকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো মারুফুলের দলকে।

নিয়মিত বিদেশি ও অনিয়মিত স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে আজ একাদশ সাজিয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন। এলিটা কিংসলিকে নাম্বার নাইনে খেলিয়ে নিজের প্রথাগত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার পজিশনে খেলার সুযোগ দেওয়া হয় স্তোয়ান ভ্রানিয়েসকে। ফরোয়ার্ড ও রক্ষণভাগের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু গড়ার চেষ্টা ছিল বসনিয়া জাতীয় দলের এই খেলোয়াড়ের।

তবে চট্টগ্রাম আবাহনীর আঁটসাঁট প্রতিরক্ষা কৌশল ভাঙা সহজ ছিল না। ৪ ডিফেন্ডারের সঙ্গে ৫ মিডফিল্ডারের সমন্বয়ে দুটি রক্ষণ ব্লক গড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী, সেখানে ফাঁকফোকর বের করাই কষ্টকর ছিল বসুন্ধরা কিংসের জন্য।

কিংসলেও গোল পেয়েছেন
ছবি: বাফুফে

সে তুলনায় প্রথাগত মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান-কেষ্ট কুমারদের নিয়ে গড়া বসুন্ধরার রক্ষণ নড়বড়ে। রক্ষণভাগের দুর্বলতায় ছয় মিনিটেই গোল করার ভালো সুযোগ পান চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার থ্যাঙ্কগড, কিন্তু তাঁর শট একেবারে বসুন্ধরা গোলকিপার সুলতান আহমেদের হাতে।

২৫ মিনিটে সুলতানের ভুলের সুযোগও নিতে পারেনি আবাহনী। সুলতানের ভুল পাস গিয়ে পড়ে আবাহনীর উইঙ্গার রুবেল মিয়ার পায়ে। গোলপোস্ট তখন ফাঁকা। কিন্তু বল পোস্টেই রাখতে পারলেন না রুবেল।

এর আগে ২২ মিনিটে রবসনের গোলে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। মাঝমাঠে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার আরাফাত হোসেনের ভুল পাস রবসনের পায়ে জমা পড়ে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে ড্রিবল করে বক্সের কাছাকাছি গিয়ে জোরালো শটে গোল ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকারের। চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলকিপার আজাদ শটটা ঠেকাতে ঝাঁপিয়েছিলেন, কিন্তু ঝাঁপানোর পর হাতের নিচ দিয়ে বল চলে যাওয়ার দায় তিনি এড়াতে পারেন না।

চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলকিপার শেষদিকে লাল কার্ড দেখেন
ছবি: বাফুফে

৮০ মিনিটেই এই গোলকিপারকে তো সরাসরি লাল কর্ড দেখেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। স্তোয়ান ভ্রানিয়েসের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে বক্সের বাইরে বল ধরার অপরাধে সরাসরি লাল কার্ড দেখানো হয় তাঁকে। তবে রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, আজাদ বাইরে থাকলেও বল ছিল বক্সের মধ্যে।

লাল কার্ডের সঙ্গে ফ্রি-কিক। সেই ফ্রি-কিক থেকেই আসে দ্বিতীয় গোলটি। ভ্রানিয়েস শট নিলে বদলি গোলকিপার সাইফুল ইসলাম ঠেকিয়ে দেন, কিন্তু ফিরতি বলে টোকা দিয়ে জালে জড়ান বদলি মোহাম্মদ ইব্রাহিম। আবাহনীর ফুটবলাররা অফসাইডের দাবি জানালেও সাড়া দেননি রেফারি। ৮৮তম মিনিটে বসুন্ধরা কিংসকে তৃতীয় গোল এনে দেন বদলি ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া।

১২ নভেম্বর সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ধানমন্ডি।