সেই কুংফু, কারাতের ছবিটা এখন বদলে গেছে...

সুশান্ত ত্রিপুরাকে ফ্লাইং কিক মারছেন মামুন মিয়াফাইল ছবি

২৪ নভেম্বর ২০১৮, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সে ফ্লাইং কিকের দৃশ্যটা এখনো চোখের সামনে জীবন্ত। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বল দখলের লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন আবাহনী লিমিটেডের স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ ও বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। একপর্যায়ে সুশান্তকে ঘুষি মারেন নাবীব। জীবনকে পাল্টা লাথি মারেন সুশান্ত। এর পাল্টা জবাব দিতে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে সুশান্তকে ফ্লাইং কিক মারেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মামুন মিয়া।

প্রেস বক্স থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, কিক বক্সিংয়ের কোনো হাইলাইটস। টিভিতে বারবার রিপ্লে দেখানো হয়েছিল সে দৃশ্যটি। সে মারামারি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দুই দলের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাগ আউট থেকেও কোচিং স্টাফদের নেমে পড়তে হয় মাঠে। লাল কার্ড দেখেন উভয় দলের দুজন করে মোট ৪ খেলোয়াড়।

আবাহনী লিমিটেডের মাঠে অনুশীলনে সুশান্ত ত্রিপুরা ও মামুন মিয়া (ডানে)
ছবি: প্রথম আলো

খেলোয়াড়দের কুংফু-কারাতে এতটাই আলোড়ন তুলেছিল যে বসুন্ধরাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আবাহনীর চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা পড়ে গিয়েছিল আড়ালে। ১ লাখ টাকা জরিমানার সঙ্গে ৬ ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুশান্ত। ৫০ হাজার টাকাসহ ৫ ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মামুন। দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন নাবীব।

প্রায় দুই বছর আগের সেই গল্পটা দিন কয়েক আগের এক বিকেলে আবার ফিরে এসেছিল। সেই কারাতের ‘খলনায়ক’ মামুন ও সুশান্তের সৌজন্যেই। না, নতুন করে মারামারি করে নয়; এবার সৌহার্দ্যের বাতাবরণে। ফুটবল উষ্ণতার হাত ধরেছেন তাঁরা। মামুন তো আবাহনীতে ছিলেনই, এবার বসুন্ধরা ছেড়ে ধানমন্ডির ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছেন সুশান্তও।

সে ম্যাচের উত্তেজনাকর দৃশ্য
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ধানমন্ডিতে আবাহনীর অনুশীলনে দুজনে পাশাপাশি চেয়ারে বসে প্রথমে বুটের ফিতা বাঁধলেন। অনুশীলনের শুরুতে বল নিয়ে জুটি বেঁধে পাসিং অনুশীলনের মধ্য দিয়ে করে নিলেন গা গরম। এটাই ফুটবল, আর ফুটবলের চিরন্তন সৌন্দর্য। কাল মাঠের প্রতিপক্ষ আজই সতীর্থ ও পরম বন্ধু। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৈরি হয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।

এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে ছবি তোলার জন্য আহ্বান জানানো হলে বাঁকা হাসিতে মামুনের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘ও বুঝছি, আমাদের ছবি কেন একসঙ্গে তুলতে চাচ্ছেন!’ পরে ছবির জন্য হাসিমুখেই দাঁড়ালেন। নিজ থেকেই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মামুন বললেন, ‘খেলার মাঠে যা হয়, ওখানেই শেষ। এগুলো নিয়ে আমরা পড়ে থাকি না। আমরা পেশাদার খেলোয়াড়।’

দুজনের সৌহার্দ্যের গল্পটি অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁরা থাকেনও একই রুমে (১৫ নম্বর)। প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন রুমে উঠলেও পরে বদল করে মামুনের রুমে গিয়ে ওঠেন সুশান্ত। তরুণ এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘মামুন ভাই তো আমার গুরুর মতো। ছোটবেলা থেকেই তাঁর খেলা দেখি। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও অনেক ভালো। সে মারামারির ঘটনাটা আমরা সেদিনই ভুলে গিয়েছি। এরপর আমাদের মধ্যে অনেকবার কথা হয়েছে। এখন তো আমরা একই রুমে থাকছি।’

টুকরা টুকরা গল্প আছে আরও। সে ম্যাচে বসুন্ধরার অধিনায়ক ছিলেন কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা দানিয়েল কলিনদ্রেস। ২০২০ সালে কোস্টারিকায় ফিরে যাওয়া সে ফরোয়ার্ডকে এবার উড়িয়ে এনে চমক দেখিয়েছে আবাহনী। ওদিকে আবাহনী থেকে বসুন্ধরা নিয়ে গেছে সেরা স্থানীয় খেলোয়াড় সোহেল রানাকে। পেশাদার ফুটবলের গল্পটা যেমন হয়! প্রসঙ্গক্রমে তাঁরা হয়তো এখন একে অপরের সঙ্গে সে ম্যাচ নিয়ে গল্পও করবেন।