স্পেনের টিকিটাকা আর অন্য ইতালিকে দেখার রাত

জমে উঠেছে ইউরো ২০২০-এর লড়াই। জমজমাট নকআউট পর্বে বাংলাদেশ থেকেই চোখ রাখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক। সেই দেখা থেকেই প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তাঁর বিশ্লেষণ—

মারুফুল হক

ইউরোর শেষ আটের প্রথম দিনে আজ শেষ হাসি হাসবে কারা? স্পেনকে এগিয়ে রাখছি সুইসদের বিপক্ষে। ইতালি-বেলজিয়াম পঞ্চাশ-পঞ্চাশ।

গত দুই ম্যাচে স্পেন ১০ গোল করেছে। গোলের সুযোগ তৈরি হলেই দলটির যে কেউ গোল করতে পারছে। পজেশনাল ও পাসিং ফুটবলের সঙ্গে প্রান্ত বদল করছে স্পেন। এটিকে আমি বলব, আধুনিক টিকিটাকা। কোচ লুইস এনরিকে টিকিটাকার সঙ্গে প্রান্ত বদলের ধারা যোগ করেছেন দলে। ফেরান তোরেস ও পাবলো সারাবিয়া ঘন ঘন প্রান্ত বদল করছে। স্পেনের সামনে তৈরি হওয়া সুযোগগুলো তাই গোলে পরিণত হচ্ছে। আজকের ম্যাচেও এটা অব্যাহত থাকতে পারে।

বল পজেশনের সঙ্গে লম্বা পাসের বৈচিত্র্য এসেছে স্পেনের খেলায়। এই ইউরোতে এখন পর্যন্ত গড়ে ৭৫ শতাংশ বল পজেশন স্পেনের এবং প্রায় ৯০ শতাংশ পাসই সঠিক। মাঝমাঠে খেলা তৈরির পাশাপাশি পাসের রাস্তাগুলো নিপুণভাবে খুলতে পারেন সের্হিও বুসকেতস। নিজেদের রক্ষণের সামনে একটা পর্দা হিসেবেও কার্যকর তিনি। আজও বুসকেতস ছন্দে থাকলে স্পেনের জয়ের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ।

সুইজারল্যান্ড গত ম্যাচে ১-৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ২ গোল ফেরত দিয়েছে। এটা তাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। তবে জাকার অনুপস্থিতি ভোগাতে পারে সুইসদের। জাকার জায়গা নেওয়ার মতো খেলোয়াড় সুজারল্যান্ড দলে নেই। গত ম্যাচে দেখেছি, কান্তে একবারও বল দখলের লড়াইয়ে জাকার সঙ্গে জেতেননি। জাকা নিচ থেকে খেলাটা তৈরি করেন এবং চূড়ান্ত পাসগুলো দেন। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ ভালো করতে পারলে হয়তো সুযোগ থাকবে সুইসদের। সুইস রাইট ও লেফটব্যাক গত ম্যাচে প্রতিনিয়ত ওভারল্যাপ করেছে। আজও তারা সেটা পারলে সুইসদের ভালো সম্ভাবনা থাকবে। সুইস কোচ পেতকোভিচের খেলোয়াড় বদল এবং ম্যাচ রিডিং দারুণ লাগে আমার।

বেলজিয়ামের ডি ব্রুইনা ও হ্যাজার্ডের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তবু কোচ মার্তিনেজ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হয়তো দেখবেন। বেলজিয়াম দলে এই দুজনের প্রভাব অনেক। তবে তারা না থাকলে লুকাকু হবেন বেলজিয়ামের মূল অস্ত্র। সে ক্ষেত্রে কারাসকো ও মের্তেনস খেলতে পারেন। প্রতি–আক্রমণে তাঁরা দুজন কতটা কার্যকর হবেন, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে।

গত বিশ্বকাপ থেকে দেখে আসছি, বেলজিয়ামের ট্রেডমার্ক প্রতি–আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ছারখার করা। এই কাজে ডি ব্রুইনা-লুকাকুর একটা সমন্বয় থাকে। তবে ডি ব্রুইনা না থাকলে প্রতি–আক্রমণগুলো অতটা ক্ষুরধার না–ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেলজিয়ামের রাইট আর লেফটব্যাকের ধারাবাহিকভাবে ওপরে যাওয়া হয়তো ঠিক হবে না। কোচ মার্তিনেজ সম্ভবত ৩-৪-৩ ফরমেশনেই শুরু করবেন আজও। খেলোয়াড়দের ৯০ মিনিট লড়াইয়ের মধ্যে রাখতে পারছেন তিনি। নিজের কৌশলটা মাঠে কার্যকর করার ব্যাপারে খেলোয়াড়দের ওপর তাঁর আস্থা আছে।

বেলজিয়ামের প্রতি–আক্রমণ রুখতে ইতালির মাঝমাঠে জর্জিনিওর বড় ভূমিকা চাই। তবে ইতালি দলে গভীরতা অনেক। তাদের হয়তো লুকাকু, ডি ব্রুইনা বা হ্যাজার্ডের মতো খেলোয়াড় নেই। তবে এ পর্যন্ত দলটির ৯ গোলের ৬টিই করেছেন বদলি খেলোয়াড়েরা। এটি বড় শক্তি ইতালির। তা ছাড়া ঐতিহ্যবাহী রক্ষণনির্ভর ফুটবল ছেড়ে আক্রমণাত্মক ও পজেশনাল ফুটবল খেলছে মানচিনির দল। খেলোয়াড়দের খোলস ছেড়ে বের করে আনতে তাঁর জুড়ি নেই। তবু আজ তাঁর বড় পরীক্ষাই নেবে বেলজিয়াম।