হরলান্ডকে আনার মিথ্যা দাবি করা সেই বার্সেলোনা প্রার্থীর ‘বিদায়’
অধীর আগ্রহে এবার বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে আছেন, ভক্ত-সমর্থক এবং ফুটবলমোদীরা। নিকট অতীতে কোনো ক্লাবের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে এত ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় হয়েছে কি না, বলা কঠিন।
বিশেষ করে সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ এতটাই অজনপ্রিয় ছিলেন সমর্থকদের মাঝে, তাঁর পতনের পর কে আসবেন, যিনি আসবেন তিনি মাঠ ও মাঠের বাইরে বার্সার ভাগ্যকে বদলাতে পারবেন কি না, সেই আশা থেকে নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে অনেক বেশি।
সেটা নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরাও জানেন। আর জানেন বলেই একের পর এক ইশতেহারের তুবড়ি ছুটিয়ে সমর্থকদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর কাজ করা শুরু করেন প্রত্যেকেই।
এমিলি রুশোও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। বার্সার সভাপতি পদের জন্য লড়তে থাকা অন্যান্য প্রার্থীরা যেখানে মেসি-স্তুতি, গার্দিওলাকে দলে ফেরানো কিংবা জাভির মতো সাবেক কিংবদন্তিকে কোচ করার কথা বলেছেন বারবার, এই সভাপতি পদপ্রার্থী হেঁটেছিলেন একটু ভিন্ন পথে। জানিয়েছিলেন—অতীতচারী হওয়ার দিন শেষ।আগামীতে তাকানোর এটাই সময়।
আগামীর সমৃদ্ধ বার্সেলোনা গঠন করতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের স্ট্রাইকার হরলান্ডকে দলে আনতে চেয়েছিলেন তিনি।
দাবি করেছিলেন, নরওয়েজিয়ান এই স্ট্রাইকারের মুখপাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করা শেষ তাঁর। এখন শুধু এমিলি রুশোর সভাপতি হওয়ার অপেক্ষা। রুশো সভাপতি হলেই মেসির সঙ্গে ন্যু ক্যাম্পে খেলতে নেমে পড়বেন হরলান্ড!
বলা বাহুল্য, যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী ঘোষণা। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল সেই রুশো নিজেই নির্বাচন করতে পারছেন না। ঘোষণাটা এই প্রার্থী নিজেই জানিয়েছেন।
নির্বাচনে দাঁড়াতে চাওয়া প্রার্থীদের পেছনে সমর্থনের মাত্রা কেমন, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চূড়ান্ত তিন প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে প্রত্যেক প্রার্থীকেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সমর্থকদের প্রমাণসিদ্ধ সই জোগাড় করতে হয়।
এবার এই ন্যূনতম মাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ২,২৫৭টি। রুশো ২,৫১০টি সই জোগাড় করতে পারলেও এর মধ্যে ৫০০–এর মতো সই আসল কি না, সন্দেহ ছিল। ফলে নির্বাচনী দৌড় থেকে ছিটকে গেছেন এই ভদ্রলোক।
ছিটকে গিয়েই বার্সার নির্বাচনী যুদ্ধকে ‘নোংরা খেলা’ বলে অভিহিত করেছেন, ‘আমাদের ক্রীড়াবিষয়ক ও অর্থনৈতিক প্রস্তাবনাগুলো সবার সেরা ছিল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই, চক্রান্ত করে আমাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হলো না। এসব নোংরা খেলায় নামতে রাজি নই আমি, তাই আমি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছি না আর।’
শুধু রুশোই নন, নির্বাচনী লড়াই থেকে ছিটকে গেছেন অগুস্তি বেনেদিতো, জাভি ভিলাহোয়ানা, জর্দি ফারে, লুইস ফের্নান্দেস ও পেরে রিয়েরা। চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছেন সাবেক সভাপতি জোয়ান লাপোর্তা, ভিক্তর ফন্ত ও টনি ফ্রেইসা।
ক্লাবের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য যা যা করা দরকার, সব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রুশো—যার একটি হরলান্ডের মতো তরুণ তারকাকে ক্লাবে ডেকে আনা।
রুশোর পরামর্শক পদে ছিলেন জোসেপ মারিয়া মিনগেয়া।
ভবিষ্যৎ সহসভাপতি হওয়ার আশায় থাকা এই কর্মকর্তাই দাবি করেছেন, ২৪ জানুয়ারি রুশো জয় পেলেই আগস্টের মধ্যে বার্সেলোনার জার্সিতে দেখা যাবে নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারকে।
মিনগেয়া দাবি করেছিলেন, এরই মধ্যে কথা পাকা হয়ে আছে দুই পক্ষের। হরলান্ডের এজেন্ট বিখ্যাত মিনো রাইওলা। খেলোয়াড় দলবদলের জন্য ক্লাবের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা খসানোর জন্য বিখ্যাত এই এজেন্ট।
মিনগেয়া ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাইওলার সব শর্ত পূরণ করে হলেও হরলান্ডকে বার্সেলোনায় নেবেন তাঁরা, ‘আমরা সব শর্তের কথা জানি এবং যদি জিতি, তাহলে পরদিনই আমি মিনো রাইওলাকে ফোন দেব এবং সব শর্ত মেনে নেব, আমি এরই মধ্যে এ পরামর্শ দিয়ে রেখেছি তাঁকে (রুশোকে)।’
শুধু হরলান্ড নয়, রিয়ালের অন্য দলবদলের লক্ষ্য কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকেও নজর ছিল রুশোদের। তবে হরলান্ডের মতো এমবাপ্পেকে অত সহজে যে টানা যাবে না, সেটা স্বীকার করে নিয়েছিলেন মিনগেয়া, ‘এটা একটু জটিল কারণ ওর চুক্তি আগামী বছর শেষ হয়ে যাবে। তবে আমরা সবকিছুই ভালোভাবে নজরদারিতে রেখেছি এবং এর মধ্যেই আমরা যোগাযোগ করেছি। আমরা পথে আছি।’
ক্যাম্প ন্যুর নাম মেসির নামে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই এমিলি রুশো। নেইমারকে বার্সেলোনায় ফেরানোর আশা জানিয়েছিলেন এবং হরলান্ডকেও নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
নির্বাচনে জেতার জন্য বড় খেলোয়াড়কে দলে টানার টোপ দেওয়াটা নতুন কিছু নয়। রিয়ালের ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দুবার নির্বাচিত হওয়ার পথে লুইস ফিগো ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম ব্যবহার করেছেন।
বার্সেলোনার হুয়ান লাপোর্তা ব্যবহার করেছিলেন ডেভিড বেকহামের নাম। তবে সে সময়টায় দুই ক্লাবেরই আর্থিক শক্তি নিয়ে কারও মনে সন্দেহ ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ক্লাব যেন দেউলিয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই বেতন কমাতে হয়েছে মেসিদের। আর রাইওলাকে রাজি করাতে পারলেও ডর্টমুন্ডকে হরলান্ডের ব্যাপারে রাজি করানো কঠিন হবে, এটা নিশ্চিত।
শেষমেশ সেই সন্দেহটাই সত্যি প্রমাণ করেছিলেন হরলান্ডের মুখপাত্র রাইওলা। রুশো এবং তাঁর পরামর্শক মিনগেয়ার দাবি অস্বীকার করেছিলেন তিনি। দলবদলের বাজারের খবর নিয়ে সংবাদকর্মী হিসেবে সবার আস্থা অর্জন করা ফ্যাব্রিজিও রোমানো এ নিয়ে টুইটও করেছিলেন।
রোমানোর মাধ্যমে জানা গিয়েছিল রাইওলা বলেছেন, ‘ভুয়া খবর! হরলান্ডকে নিয়ে বার্সেলোনার কোনো প্রার্থীর সঙ্গে আমার কথা হয়নি এবং হবেও না। জানুয়ারিতে নতুন সভাপতি আসার পর তিনি আমাকে ফোন করতে পারেন।’
রুশোর সরে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাই হরলান্ডকে পাওয়তার যে অল্প আশা ছিল, সেটাও হয়তো আপাতত নিভে গেল বার্সেলোনার জন্য!