হাকিম-দিয়াবাতের গোলে মোহামেডানের জয়

ব্রাদার্সকে হতাশ করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মোহামেডান।
ছবি: বাফুদে

ম্যাচ শেষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির দিকে হেঁটে এলেন মোহামেডানের ফুটবলার, কোচ ও কর্মকর্তারা। হাততালি দিয়ে সাদাকালোদের অভিনন্দন জানালেন মোহামেডানের সব সমর্থক। ঠিক এমন দৃশ্যই তো সমর্থকেরা নিয়মিত দেখতে চান। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই জয় ধারবাহিকভাবে দর্শককে উপহার দিতে পারে না মোহামেডান। তবে আজ ঠিকই জয় পেয়েছে মোহামেডান। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২-১ গোলে হারিয়ে জয়োল্লাস করেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। মোহামেডানের হয়ে একটি করে গোল করেছেন আমির হাকিম ও সোলেমান দিয়াবাতে। ব্রাদার্সের একটি গোল করেছেন জোসেফ নূর।
     
৮ ম্যাচে এটা মোহামেডানের তৃতীয় জয়। এর আগে মোহামেডান হারিয়েছে আরামবাগ ও পুলিশকে। ৩ জয়, ৩ ড্র ও ২ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের ছয়ে উঠে এল মোহামেডান। ব্রাদার্সের দুরবস্থা যেন কিছুতেই কাটছে না। ৭ ম্যাচে এ পর্যন্ত একটিও জয় পায়নি কমলা দলটি। ১ ড্র ও ৬ হারে ১ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের লিগে ১২তম স্থানে ব্রাদার্স।

অথচ লিগের প্রথম জয় নিয়েই আজ ফিরতে পারত গোপীবাগের দলটি। ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ব্রাদার্সই! কিন্তু তিন মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো ব্রাদার্স। তিন মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল করে ব্রাদার্সের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় মোহামেডান।
মূলত ব্রাদার্সকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জোসেফ নূর। গত ৬ ম্যাচে চোটের কারণে মাঠে ছিলেন না তিনি। আজ মাঠে নেমেই গোল পেয়েছেন। ১০ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে আসা লং বল ধরে বক্সে ঢোকেন জোসেফ। ততক্ষণে মোহামেডানের গোলরক্ষক মোহাম্মদ সুজন জায়গা ছেড়ে একটু এগিয়ে আসেন। মুহূর্তেই আলতো টোকায় সুজনের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে।

ধারার বিপরীতে গোল খেয়ে হকচকিত হয়ে পড়ে মোহামেডান। গোল শোধে মরিয়া মোহামেডান আক্রমণে আক্রমণে দিশেহারা করে তোলে ব্রাদার্সকে। কিন্তু মোহামেডানের আক্রমণের বড় অস্ত্র সোলেমান দিয়াবাতে বেশ কয়েকবার সুযোগ নষ্ট করেছেন ম্যাচে। এমনিতেই চোট ও কার্ড সমস্যায় জাফর ইকবাল এবং আবিওলা নুরাতকে খেলাতে পারেননি কোচ শন লেন। নুরাত আর দিয়াবাতে জুটির যে রসায়ন নিয়মিত দেখা যায়, সেটা মাঠে দেখা যায়নি। নুরাতের অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মোহামেডান। অবশ্য বাঁ প্রান্ত দিয়ে শাহেদ মিয়া বারবার আক্রমণে উঠেছেন। কখনো শাহেদ বক্সে ক্রস ফেলেছেন, কখনো পাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গোলের নিশ্চিত কয়েকটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠু ও দিয়াবাতে।

মোহামেডানের দুই গোলদাতা।
ছবি: বাফুফে

মোহামেডান অবশ্য কখনোই হাল ছাড়েনি। আগের সাত ম্যাচেই গোল পেয়েছে মোহামেডান। আজও তাই গোল পেতে আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন ফুটবলাররা। অবশেষে আমিনুর রহমানের বদলি হিসেবে নেমে আমির হাকিম গোল করে সমতায় ফেরান মোহামেডানকে। ম্যাচের ৭১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে দিয়াবাতের ক্রস, হাকিম আলতো টোকায় করেন ১-১। এরপর ৭৩ মিনিটে দিয়াবাতের গোলে তো এগিয়েই গেল মোহামেডান। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে হেডে দিয়াবাতে স্কোরলাইন করেন ২-১। মালির এই স্ট্রাইকারের লিগে এটি ষষ্ঠ গোল। বসুন্ধরা কিংসের রবিনিও ও আবাহনীর ফ্রান্সেসকো তোরেসের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। ৮ গোল করে সবার ওপরে আছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের স্ট্রাইকার ওমর জোবে।

এগিয়ে থেকেও ব্রাদার্স সেভাবে আক্রমণে ওঠেনি। বরং রক্ষণ সামলাতেই বেশি মনোযোগ ছিল। মূলত অতি রক্ষণাত্মক কৌশলেই সর্বনাশটা হয়েছে ব্রাদার্সের। ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাদার্সের মিডফিল্ডার ফয়সাল মাহমুদ। বাকি ৪ মিনিট দশ জনের দলে পরিণত হয়ে আর গোল শোধের কোনো সুযোগই পায়নি ব্রাদার্স।