হাতে হাত রেখে বার্সা-রিয়াল বলছে, ‘এসো কথা বলি’

এখনো লড়ে যাচ্ছেন তাঁরা তিনজন।ছবি: রয়টার্স

উয়েফা অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাস্তি পেতে হবে বিদ্রোহীদের। গত ১৮ এপ্রিল ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নামে যে লিগ চালু করতে চেয়েছিল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসসহ ১২ ক্লাব, সে প্রস্তাব দুই দিনের মধ্যেই ভেস্তে গিয়েছিল। উয়েফা ফুটবল বিশ্বের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির এই চেষ্টাকে সহজভাবে নেয়নি। গতকাল তাই আনুষ্ঠানিকভাবেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে ক্লাবগুলোকে।

সুপার লিগের স্বপ্ন দেখা ক্লাবগুলোর মধ্যে ৯টি ক্লাবই হাল ছেড়ে দিয়েছে। উয়েফার কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়ে এরই মধ্যে ‘সুবোধ বালক’ বনে গেছে। নাম সরিয়ে নিয়েছে এই লিগ থেকে। এ কারণে তাদের কম শাস্তি দিচ্ছে উয়েফা।

সম্মিলিতভাবে ৯ ক্লাবকে অনুদান দিতে হবে দেড় কোটি ইউরো। ২০২৩-২৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগ খেলে যা আয় করবে, তার ৫ শতাংশ জরিমানাও দিতে হবে। ক্লাবগুলো এ শাস্তি মেনে নিয়েছে।

উয়েফা সে সঙ্গে সতর্ক করে দিয়েছে এখনো হাল না ছাড়া রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও বার্সেলোনাকে। আগামী দুই বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগ থেকে এই তিন ক্লাবকে নাকি বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা! এরই জবাব দিয়েছে তিন ক্লাব। ‘হাতে হাত’ রেখে তিন ক্লাবই অভিন্ন বিবৃতি দিয়েছে, যার মোদ্দাকথা হলো, সুপার লিগ চালু করতে চেয়ে তারা ভুল করেনি। তবু ফুটবলের ভালো চেয়ে উয়েফার সঙ্গে এখনো কথা বলতে রাজি আছে তারা।

ক্লাবের কারণে ভুগতে হবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে?
ফাইল ছবি: এএফপি

বিশাল এক বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে তিন ক্লাব। গতকাল উয়েফা সুপার লিগ নিয়ে দেওয়া বিবৃতি ও প্রতিষ্ঠাতা ৯ ক্লাবকে দেওয়া শাস্তি নিয়ে লেখা সে বিবৃতিতে ছয়টি বিষয় আলাদা করে ব্যাখ্যা করেছে তিন ক্লাব।

প্রথমেই নিজেদের ‘ভুক্তভোগী’ বলে দাবী করেছে তিন ক্লাব। বলেছে সুপার লিগ আয়োজন করার কারণে তাদের অহেতুক হেনস্থা করা হচ্ছে এবং এই প্রকল্প বাতিল করার জন্য তৃতীয় পক্ষ থেকে হুমকি, চাপ দেওয়া হচ্ছে। ‘ফুটবলকে বাঁচানো’র জন্য তাদের চেষ্টাকে এভাবে বাধাগ্রস্থ করা যে আইনের চোখে বেআইনি এবং আদালতের নির্দেশের বাইরে গিয়ে ফিফা ও উয়েফার এভাবে বারবার শাস্তি দেওয়ার হুমকি যে অন্যায় সেটা মনে করিয়ে দিয়েছে তিন ক্লাব।

দ্বিতীয় পয়েন্টে নতুন কিছু জানায়নি তিন ক্লাব। ১২ ক্লাব মিলে কেন এই সুপার লিগ প্রকল্প চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফুটবল এখন যেভাবে চলছে তাতে আর্থিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে খুব দ্রুত পরিবর্তন দরকার সেটা আবার জানিয়েছে তারা। বর্তমানের চেয়ে কয়েক গুণ অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা সুপার লিগে, সেটা আবারও জানিয়েছে ক্লাবগুলো। সে সঙ্গে এটাও বলেছে, সুপার লিগ চালু হলেও সেটা উয়েফা বা ফিফার কাছ থেকে স্বীকৃতি নিয়েই করা হতো।

তৃতীয় পয়েন্টে নতুন প্রজন্মের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই সুপার লিগ আয়োজন করে আগ্রহ বাড়ানো এবং বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলের উন্নয়নের চেষ্টার কথা জানানো হয়েছে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে দেখা যাবে না এ দুই দলকে?
ফাইল ছবি: এএফপি।

চতুর্থ পয়েন্টে বলা হয়েছে, সুপার লিগ নিয়ে ভিন্ন ধরনের (পড়ুন বিরূপ) প্রতিক্রিয়া পাওয়ার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল তিন ক্লাব। এর পেছনের কারণ বোঝার চেষ্টা ও প্রয়োজন হলে পরিবর্তন আনার কথাও ভাবছে তারা। কিন্তু যে কারণে ও দুর্দশার কথা ভেবে সুপার লিগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ফুটবলের সে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা বন্ধ করে দেওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক হবে, সেটাও জানিয়েছে তারা।

পঞ্চম পয়েন্টে, চাপের মুখে উয়েফার বিভিন্ন শর্ত মেনে খুবই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠাতা বাকি ৯ ক্লাবের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বার্সা-রিয়াল-জুভেন্টাস। এরপরই জানিয়েছে, যে সমস্যার কারণে সুপার লিগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেগুলো দূর হয়নি। তাই উয়েফার অগ্রহণযোগ্য চাপ ও হুমকির মুখেও সমর্থক ও ফুটবলের ‘ভালো’র জন্য এ ব্যাপারে সমাধান খোঁজাটা তাদের দায়িত্ব।

একেবারে শেষ পয়েন্টে এসেই নিজেদের মূল অবস্থান জানিয়েছে তিন ক্লাব। তারা বলেছে, প্রথম থেকেই সবার ভালোর জন্য উয়েফার সঙ্গে বসতে চেয়েছে, কথা বলতে চেয়েছে। এখনো সুপার লিগ নিয়ে নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে এবং ‘ফুটবলের ভালো’র জন্য সেরা সমাধান বের করার জন্য কথা বলতে আগ্রহী। তবে সেটা অসহনীয় কোনো চাপ (নিষেধাজ্ঞার হুমকি) ছাড়া এবং আইন মেনেই সে আলোচনায় বসতে হবে।