হারতে হারতে আবাহনীর ড্র

গোল করে সমতা ফেরানোর পর চট্টগ্রাম আবাহনীর নিক্সনের উল্লাস।
ছবি: প্রথম আলো

এ কী হাল আবাহনীর! প্রিমিয়ার লিগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের এমন দুর্দশা! অথচ এবার লিগে মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলেছে ধানমন্ডির দলটি। এখনো যেতে হবে অনেক দূর। কিন্তু শিরোপাপ্রত্যাশীদের খুঁড়িয়ে চলা দেখে সমর্থকেরা শুধু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে হাপিত্যেশই করেছেন আজ।  
 
গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের সঙ্গে ড্র করে লিগে প্রথম পয়েন্ট খুইয়েছিল আবাহনী। আজ তো বলতে গেলে কোনো রকমে হার এড়িয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ কোচ মারিও লেমোস।

ম্যাচের ৮৭ মিনিটে সমতায় থাকা চট্টগ্রাম আবাহনী পেয়েছিল পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ। কিন্তু সেই সহজ সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি চট্টগ্রামের দলটি। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিক্সন গিয়াহামের বলটা ঠেকিয়ে দেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম।

দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আবাহনীর ফ্রান্সিসকো।
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের দুটি গোলও পেনাল্টি থেকেই হয়েছে। আবাহনীর গোলদাতা ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজ। চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলটি ওই নিক্সনের।

৫ ম্যাচে পরপর দুটি ড্র আবাহনীর। ৩ জয় ও ২ ড্রয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে আবাহনী। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস ৫ ম্যাচের সব কটিতে জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। আর সমান ৫ ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর ২ জয় ও ১ ড্র। ২ ম্যাচে হার। ৭ পয়েন্ট চট্টগ্রাম আবাহনীর।

আবাহনী দলের বেশির ভাগ ফুটবলারের বয়স নিয়ে প্রচুর সমালোচনা স্টেডিয়াম অঙ্গনে। প্রাণতোষ কুমার দাস, দেড় যুগ ধরেই আবাহনীতে! বয়স হয়েছে ৩৮ বছর। মামুনুল ইসলাম, ওয়ালী ফয়সাল, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মামুন মিয়া, আতিকুর রহমান মিশুদেরও ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে। মাঠে আবাহনীর পারফরম্যান্সে এর একটা প্রভাব তো থাকছেই। এর ওপর দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়েরাও চোটে।

মাঠের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল চট্টগ্রাম আবাহনী।
ছবি: প্রথম আলো

স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ চোটের কারণে দর্শক। কারভেন্স বেলফোর্টকেও আজ মাঠে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। চোটের কারণে তো মাঠ থেকে তাঁকে বাধ্য হয়েই আজ তুলে নিলেন কোচ। মামুনুলের বদলি হিসেবে যিনি নামলেন, সেই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্টোও পুরো ফিট নন! আবাহনীর বেঞ্চের অবস্থা এতটাই করুণ যে সেরা একাদশ গড়তেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কোচকে। আর সেই পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে খেলায়। আজ যা-ও দু-একবার মিডফিল্ডার জুয়েল রানা বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনেক সময় বল কাকে দেবেন, সেটাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

ম্যাচের প্রথম আধঘণ্টা চট্টগ্রাম আবাহনীই বেশি আক্রমণে উঠেছে। কিন্তু উল্টো পেনাল্টি থেকে প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় ঢাকা আবাহনী। ম্যাচের ৩১ মিনিটে বক্সের মধ্যে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার সাকের উল্লাহ অহেতুক ফেলে দেন ঢাকা আবাহনীর ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিসকোকে। রেফারি মিজানুর রহমান পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ফ্রান্সিসকোর গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী।

ব্যবধান দ্বিগুণ করার একটা ভালো সুযোগ পেয়েছিল আবাহনী। কিন্তু ৩৮ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন শেখ রাসেল থেকে আসা মিডফিল্ডার সোহেল রানা। রায়হান হাসানের লম্বা এক থ্রো বক্সের মধ্যে পড়লে চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলামের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। সামনেই দাঁড়িয়ে তখন সোহেল। কিন্তু মাথাটা ছোঁয়াতেই পারলেন না এই মিডফিল্ডার।

আবাহনীর খেলায় কোনো প্রাণ ছিল না।
ছবি: প্রথম আলো

গোল শোধে মরিয়া চট্টগ্রাম আবাহনী সমতায় ফেরে বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে। বক্সের মধ্যে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার রাকিব হোসেন হেড করলে বল আবাহনী ডিফেন্ডার টুটুল হোসেনের হাতে লাগে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন নিক্সন।

আবাহনীর মাঝমাঠ একেবারে অগোছালো ছিল। পরিকল্পিত কোনো আক্রমণ ছিল না। বরং ৬৭ মিনিটে যখন চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক চিনেদু ম্যাথুর বদলি হিসেবে মান্নাফ রাব্বিকে নামালেন, আক্রমণের ধার আরও বাড়ে চট্টগ্রামের দলটির। এরপর অবশ্য বেশ কয়েকবার সুযোগ পান চট্টগ্রাম আবাহনীর রাকিব ও মান্নাফ রাব্বি। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। এই দুজন কখনো বল মেরেছেন বাইরে, কখনো তুলে দিয়েছেন আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলমের হাতে।

ম্যাচে নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল নিক্সনের। উল্টো খলনায়ক হয়ে গেলেন। ৮৭ মিনিটে টুটুল হোসেনের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নাসির উদ্দিন। নেমেই বক্সের মধ্যে অহেতুক ফাউল করেন। দিদিয়েরকে ফেলে দেন ধাক্কা দিয়ে। পেনাল্টি পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু পেনাল্টি থেকে নিক্সন গোল করতে পারেননি। দুর্বল শটটি ডান দিকে লাফিয়ে ঠেকিয়ে দেন শহীদুল। বাকি সময়ে চেষ্টা করেও কোনো দল গোল পায়নি।