হারের পর লালকার্ডও দেখলেন নেইমার

কাল মার্শেই–পিএসজি ম্যাচ পরিণত হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে।ছবি: এএফপি

এবার মৌসুমের শুরুটা ভালো হয়নি পিএসজির। দুদিন আগেই লাঁসের বিপক্ষে লিগের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল তাঁরা। যদিও সে ম্যাচে পিএসজির আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ কেউই মাঠে নামেননি। মাঠে ছিলেন না কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার, মাউরো ইকার্দি কিংবা আনহেল ডি মারিয়ার কেউ। গতকাল অবশ্য তেমন ছিল না। মাঠে নেইমার-ডি মারিয়া দুজনই ছিলেন। তাও পিএসজির ভাগ্যবদল হয়নি। উল্টো পিএসজির হার ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে নেইমারের লাল কার্ড দেখা।

প্রথম থেকেই নেইমারের সঙ্গে কারওর না কারওর লেগেই ছিল। ছবি : এএফপি
ছবি: এএফপি

হ্যাঁ, মাঠে নেমেই নেইমার লাল কার্ড দেখেছেন। মার্শেই-পিএসজি লড়াই সব সময় অন্য মাত্রা যোগ করে ফরাসি ফুটবলে। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। দর্শক না থাকলেও, উত্তেজনার বিন্দুমাত্রও কমতি ছিল না এই ম্যাচে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রেফারি দুই দলের মোট ৫ জন খেলোয়াড়কে দেখিয়েছেন লাল কার্ড, পিএসজির তিনজন, মার্শেইয়ের দুজন। পিএসজির লাল কার্ড পাওয়া তারকাদের ভেতর আছেন নেইমারও। সব মিলিয়ে পুরো ৯০ মিনিটে রেফারিকে হলুদ কার্ডই দেখাতে হয়েছে মোট ১৭ বার। তার আগেই অবশ্য ঘরের মাঠে মার্শেইয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে পিএসজি। এই নিয়ে লিগে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। পয়েন্ট এখনো শূন্য।

মার্শেইয়ের স্প্যানিশ সেন্টারব্যাক আলভারো গঞ্জালেজের মাথায় পেছনে চড় মেরে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন নেইমার। ম্যাচ শেষে নেইমার দাবি করেছেন মাঠে আলভারো নেইমারকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছেন। টুইট করে শাস্তি চেয়েছেন নেইমারের। গঞ্জালেজকে উদ্দেশ্য করে টুইটারে লিখেছেন, 'আমার একমাত্র আফসোস ওই বদমাশটার মুখে ঘুষি মারতে পারিনি। মেরে সামনে মারতে না পারা।"

পরে আরেক টুইটে নেইমার লিখেছেন, 'আমি হিংস্র আচরণ করেছি কি না, ভিএআর দিয়ে সেটা বিচার করা সহজ। তাহলে যে বর্ণবাদী আমাকে মাঠে বাঁদর বলে গালি দিল তার ছবিটাও সামনে আসুক। আমি রেইনবো ফ্লিক করলে তো ঠিকই আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আমি চড় দিলে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওদের কী হবে? এখন ওদের কী হবে?'

ম্যাচের কোনো অংশই ম্যাড়মেড়ে ছিল না। প্রথম ১৩ মিনিটের মধ্যেই রেফারিকে হলুদ কার্ড বের করতে হয়েছে চারবার। ১১ মিনিটে বল দখল করতে গিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন পায়েত ও নেইমার। হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করা হয় দুজনকেই।

৩১ মিনিটে ফরাসি উইঙ্গার দিমিত্রি পায়েতের ফ্রি কিক থেকে ভলি করে গোল করেন ফরাসি মিডফিল্ডার ফ্লোরাঁ থোভাঁ। দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজি গোল করার বেশ কিছু সুযোগ পেলেও কখনো মার্শেই গোলরক্ষক স্টিভ মানদান্দা কিংবা কখনো নিজ স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় গোল আসেনি। দ্বিতীয়ার্ধে মার্শেইর আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার দারিও বেনেদেত্তো ও পিএসজির ডি মারিয়া দুইজনেরই একটি করে গোল বাতিল হয়েছে ভিএআরে। নেইমার, ডি মারিয়া - কেউই একদম ছন্দে ছিলেন না।

কিন্তু খেলার বাইরেও আরেক 'খেলায়' জড়িওয়ে পড়েছিলেন নেইমার-গঞ্জালেজ। প্রথমার্ধ থেকেই দুজনের মধ্যে খিটমিট লেগেই ছিল। বিরতির সময়ও নেইমারকে টিভিতে "বর্ণবাদ" শব্দটি ব্যবহার করতে শোনা গেছে। তবে ম্যাচের আসল মারামারি শুরু হয় একদম শেষ দিকে। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে মার্শেইয়ের একটি গোলকিকের আগে নেইমার আর গঞ্জালেজ কথা-কাটাকাটি করছিলেন। এরপর ওই গোলকিকের দখল নিতে গিয়ে মাঝমাঠে দারিও বেনেদেত্তো গুঁতো মেরে বসেন স্বদেশি মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। দুই আর্জেন্টাইনের ওই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে দুই শিবিরে। হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় দুই দলের খেলোয়াড়দের। এই ফাঁকে মার্শেইর ফরাসি উইঙ্গার জর্ডান আমাভি আর পিএসজির লেফটব্যাক লেভিন কুরজাওয়া দুজন একে অপরকে লাথি মেরে বসেন। আমাভি, কুরজাওয়া, পারেদেস, বেনেদেত্তো সবাইকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি। নেইমারকে অবশ্য মাঠ থেকে বের করে দেন ভিএআরের পরামর্শে। একবিংশ শতাব্দীতে এত হলুদ কার্ড ফরাসি লিগের কোনো ম্যাচ দেখেনি আগে, ১৭টা।

৩৬ বছর পর লিগের প্রথম দুই ম্যাচেই হারল পিএসজি। সেবার লিগে ত্রয়োদশ হয়েছিল প্যারিসের দলটা। শুধু হারই নয়, এবার প্রথম দু ম্যাচে গোলের খাতাই খুলতে পারেনি দলটা, যা সর্বশেষ হয়েছিল সেই ১৯৭৮ সালে।