হিসাব–নিকাশ পাল্টে দেওয়া দলবদল

অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড ঘটিয়ে এবার ক্লাব বদলেছেন মেসি, রোনালদো, রামোসের মতো মহাতারকারা। দলবদলের বাজারে হয়েছে নতুন রেকর্ডও।

এবারের ইউরোপীয় দলবদল ফুটবলপ্রেমীরা মনে রাখবেন অনেক দিনকোলাজ: প্রথম আলো

এটাই কি ইতিহাসের সবচেয়ে পাগলাটে দলবদলের মৌসুম?

পাগলাটে—বলার কারণ, কল্পনাতীত সব ঘটনা! করোনাভাইরাস মহামারিতে আগের দলবদলের মৌসুমটা ছিল ম্যাড়মেড়ে। মহামারি না কাটায় এবারও সাদামাটা মৌসুম ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু গত ৯ জুন (ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স) থেকে শুরু হওয়া দলবদলে দিন গড়ানোর সঙ্গে কপালে ভাঁজও বেড়েছে। রোমেলু লুকাকু, সের্হিও রামোস, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, এমনকি লিওনেল মেসির ঠিকানাও পাল্টে গেল!

যে মেসিকে বার্সেলোনার বাইরে কেউ কল্পনা করেনি, তাঁকে দেখা যাচ্ছে পিএসজির জার্সিতে। যে রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কখনো ফিরবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল যথেষ্ট, এমনকি নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার সম্ভাবনাও যখন প্রবল হয়ে উঠেছিল, ঠিক তখনই ভোজবাজির মতো পাশার দান পাল্টে গেল—রোনালদোর গায়ে এখন ম্যানচেস্টারের ‘লাল’ অংশের জার্সি। পাগলাটে মৌসুম নয় তো আর কী! তারই পর্দা নামল আজ বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায়।

ইউরোপে শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে জার্মানি, স্পেন ও ইতালিতে দলবদলের মৌসুম শুরু হয় ১ জুলাই। সেদিনই পাগলা ঘণ্টিটা প্রথম বেজে ওঠে স্পেনে। বার্সার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোয় ফ্রি এজেন্টে পরিণত হন মেসি। কাতালান ক্লাবটি তাঁর সঙ্গে চুক্তি করবে করবে করে একবার জানা গেল পাঁচ বছরের চুক্তি মৌখিকভাবে হয়ে গেছে, এখন আনুষ্ঠানিক সই–স্বাক্ষর বাকি। কিন্তু গত মাসে জানা গেল, বার্সা মেসিকে ধরে রাখতে পারছে না লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতনসীমার কারণে।

এরপরই পিএসজির ‘লাভ ফ্রম প্যারিস’ এবং মেসি তা দুহাতে গ্রহণ করে বিচ্ছেদ ঘটান বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কের। মেসিকে প্যারিসে দেখে এখন ভাবতে হচ্ছে, এই বিশ্বসংসারে আসলে সবকিছুই সম্ভব! তা না হলে রামোস মেসির সতীর্থ হন কীভাবে!

রোনালদো ফিরলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ফাইল ছবি

তেমনি রোনালদোকে নিয়েও ভাবা যায়নি। জুভেন্টাস ছাড়তে চান, তা ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। একবার গুঞ্জন উঠল, রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা করছে। কেউ কেউ অঙ্ক কষলেন, রিয়াল যেহেতু এমবাপ্পেকে চায় এবং এমবাপ্পেও যেতে চান, তাহলে পিএসজি তাঁকে ছেড়ে দিয়ে রোনালদোকে আনতে পারে। এ নিয়ে হিসাব–নিকাশ চলার মাঝেই বাজারে আবির্ভাব ঘটল ম্যানচেস্টার সিটির। ইউরোপে বেশির ভাগ আস্থাভাজন সংবাদকর্মী জানালেন, সিটি রোনালদোকে প্রায় কিনেই ফেলেছে, দুই বছরের চুক্তিও নাকি হয়ে গেছে।

লুকাকু ছাড়লেন ইন্টার মিলান
ফাইল ছবি

আশ্চর্যের বিষয়, এই খবর প্রকাশের পরদিনই সিটি দৌড়ে নেই! একদম ভোজবাজির আলোচনায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রোনালদো–শিকে ছিঁড়ল তাদের ভাগ্যেই। ওদিকে সিটি অ্যাস্টন ভিলা থেকে জ্যাক গ্রিলিশকে ১১ কোটি ৭০ লাখ ইউরোয় কিনে রেকর্ড গড়ে—ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে এটাই সবচেয়ে দামি দলবদল। গ্রিলিশকে না কিনলে হয়তো রোনালদোকে নিয়ে ম্যানচেস্টারের দুই অংশের লড়াইটা দেখা যেত। রোনালদোকে টানাটানির নাটক শেষ হলেও এমবাপ্পে–আখ্যান শেষ হতে সময় লেগেছে। বাংলাদেশ সময় গত রাত পর্যন্ত খবর, ফরাসি ফুটবলের ‘পোস্টার বয়’কে কিনতে রিয়াল ১৮ কোটি ইউরো পর্যন্ত দাম বলেও পায়নি।

রিয়ালের রামোস গেলেন পিএসজিতে? তিনি এখন মেসির সতীর্থ
ফাইল ছবি

ইতালির ইউরোজয়ী গোলকিপার দোন্নারুম্মা (ফ্রি এজেন্ট), ডাচ অধিনায়ক ভাইনালডাম (ফ্রি এজেন্ট) এবং এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা ফুলব্যাক আশরাফ হাকিমিকে (৭ কোটি ইউরো) কিনে পিএসজি এবার দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিলেও আরেকটু হলে গ্রিলিশের রেকর্ড ভেঙে দিত চেলসি। ইন্টার মিলান থেকে ১১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় তারা রোমেলু লুকাকুকে ফিরিয়ে আনে স্টামফোর্ড ব্রিজে। এক মৌসুমে একসঙ্গে এত সব তারকার দলবদল কি আগে কখনো দেখা গেছে? এসব নিয়ে যখন সবাই ঘোরের মধ্যে ঠিক তখনই গ্রীষ্মকালীন দলবদলে দেখা গেল আরেক চমক। বার্সেলোনা ছেড়েছেন আতোয়ান গ্রিজমান। তাঁকে আতলেতিকো মাদ্রিদে এক বছরের জন্য ধারে পাঠিয়েছে বার্সা। মেসির ক্লাব ছাড়ার পর এটি বার্সা সমর্থকদের জন্য একটা বড় ধাক্কাই। আর্থিক সংকটের এ সময় খেলোয়াড়দের বেতন–ভাতা বাবদ খরচে সমন্বয় আনতেই বার্সার এ সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।

১৯৭৭ সালে দলবদলের উদাহরণ টানা যেতে পারে। সেবার ফর্মের তুঙ্গে থাকা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কার্লোস বিয়াঞ্চি রেঁস থেকে নাম লেখান পিএসজিতে। সেল্টিক থেকে লিভারপুলে যান কেনি ডালগ্লিশ। তাঁর লিভারপুল-কিংবদন্তি হওয়ার দ্বার খোলার সে মৌসুমে অলরেডদের ছেড়ে যান আরেক কিংবদন্তি কেভিন কিগ্যান—নাম লেখান হামবুর্গে। টটেনহাম কিংবদন্তি প্যাট জেনিংস যোগ দেন উত্তর লন্ডনেরই প্রতিবেশী আর্সেনালে। বরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ থেকে রিয়ালে যোগ দেন জার্মান মিডফিল্ডার উলি স্টিলিক।