‘হ্যাজার্ডের আর এক সেকেন্ডও রিয়ালে থাকার যোগ্যতা নেই’

রিয়ালের জার্সিতে হ্যাজার্ডের পারফরম্যান্স কখনোই আশা পূরণ করতে পারেনি সমর্থকদের।ছবি: রয়টার্স

এডেন হ্যাজার্ড চোট কাটিয়ে ফিরেছেন মাঠে, এ কারণেই হয়তো আরও বেশি আশা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের। হ্যাজার্ড ছন্দে থাকলে কী হয়, সেটা রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের গত দুই বছরে দেখার সুযোগ তেমন মেলেনি ঠিকই; তবে যখন হ্যাজার্ড ছন্দে ছিলেন, রিয়ালের ফুটবল হয়েছে দেখার মতো। ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের সময়টাতে রিয়ালের চোখধাঁধানো ফুটবল কে ভুলতে পারে!

কিন্তু নিজের সাবেক ক্লাব চেলসির মাঠে কাল আর সে হ্যাজার্ডের দেখা মেলেনি। রিয়াল মাদ্রিদও ছিল বিবর্ণ। গত সপ্তাহে নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র করে এমনিতেই পিছিয়ে ছিল রিয়াল। কারণ, চেলসির হাতে ‘অ্যাওয়ে গোল’ ছিল, এর ওপর কাল দ্বিতীয় লেগ চেলসির মাঠে রিয়াল হেরে গেল ২-০ গোলে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে আর ওঠা হলো না রিয়ালের!

সে যদি হয় ক্ষত, তাতে নুনের ছিটা হয়ে এসেছে ম্যাচ শেষে চেলসিতে সাবেক সতীর্থ-বন্ধুদের সঙ্গে হ্যাজার্ডের হাসি–ঠাট্টা। দলের এমন হারের পর একজন খেলোয়াড় এভাবে হাসাহাসি করছেন, এ দেখে রিয়াল সমর্থকেরা আরও খেপেছেন। শুধু কী সমর্থক! স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল চিরিঙ্গিতোতে হ্যাজার্ডকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা সরাসরিই বলে দিয়েছেন, হ্যাজার্ডের আর এক সেকেন্ডও রিয়ালে থাকার যোগ্যতা নেই! হ্যাজার্ড–ভক্তদের জন্য উদ্বেগের হতে পারে এই তথ্য যে এই এল চিরিঙ্গিতো এবং এর সাংবাদিক ইয়োসেপ পেদ্রেরল রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের ঘনিষ্ঠ বলে স্পেনে শোনা যায়।

হ্যাজার্ডের এই রূপ দেখে রাগ করেছেন মাদ্রিদ সমর্থকেরা।
ছবি: টুইটার

কাল কেমন খেলেছেন হ্যাজার্ড, সে প্রশ্ন করার আগে অবশ্য পুরো রিয়ালের খেলায় একবার চোখ বুলিয়ে আসতে হবে। জিনেদিন জিদান সম্ভবত কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে দল সাজানোতে এত বড় বাজি ধরে হেরে গেলেন। ৩-৫-২ ছকে দল সাজিয়েছেন লেফট উইঙ্গার ভিনিসিয়ুসকে রাইট উইংব্যাক হিসেবে খেলিয়ে। রামোসকে খেলিয়েছেন তিন সেন্টার ব্যাকের একজন হিসেবে। আক্রমণে বেনজেমা হয়ে পড়েছিলেন একা, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে কাসেমিরো সামলাতে পারেননি চেলসির মাউন্ট-কান্তে-হাভার্টজদের ‘প্রেসিং।’ পুরো দলই আশানুরূপ খেলতে ব্যর্থ, হ্যাজার্ডও ছিলেন অদৃশ্য।

দৌড়েছেন বটে হ্যাজার্ড। ৮৯ মিনিটে মারিয়ানোর বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে দৌড়েছেন ১০.৬৪ কিলোমিটার, যা রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে কাল সর্বোচ্চ। চেলসির তিন খেলোয়াড় হাভার্টজ, কান্তে ও জর্জিনিও যদিও ম্যাচে এর চেয়ে বেশি দৌড়েছেন। তা রিয়ালের সবচেয়ে বেশি দৌড়ানো হ্যাজার্ড বল পায়ে করেছেন কী? পুরো ম্যাচে শট নিয়েছেন একটি। বলে পা ছুঁইয়েছেন ৫৩ বার। প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে বেরিয়ে গেছেন ২ বার। ফাউলের শিকার হয়েছেন ৪ বার। বল হারিয়েছেন ৩ বার। বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ভুল করেছেন ২ বার। ৩৬টি পাস দিয়েছেন, যার ৮৬.১ শতাংশ সঠিক। কিন্তু তাঁর কোনো পাস থেকে কোনো শট হয়নি (কি পাস ০)। বক্সে কোনো ক্রস ফেলতে পারেননি।

কিন্তু সেটি নিয়ে যদি হতাশা থেকে থাকে রিয়ালের অনেক ভক্তের, ম্যাচের শেষের আরেকটি চিত্র জন্ম দিয়েছে তাঁদের ক্ষোভের। সেখানে দেখা যায়, হ্যাজার্ড বেশ হাসি-ঠাট্টায় মেতেছেন চেলসির ডিফেন্ডার কার্ট জুমার সঙ্গে। ২০১৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার আগে ছয় বছর চেলসিতে খেলেছেন হ্যাজার্ড, গত দুই দশকে ইউরোপে নাম কামানো ক্লাবটার হাতেগোনা কয়েকজন কিংবদন্তির একজন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। সেখানে তাঁর অনেক স্মৃতি আছে, কিছু বন্ধু আছে। ম্যাচ শেষে তাঁদের সঙ্গে হ্যাজার্ড কথা বলতেই পারেন। পেশাদার ফুটবলারের কাছে জয়-পরাজয় তো থাকবেই, কিন্তু দিন শেষে এটি তো একটি খেলাই!

হ্যাজার্ডের পারফরম্যান্স কালও ছিল ভুলে যাওয়ার মতো।
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু মাদ্রিদ সমর্থকদের অনেকের আবেগের সঙ্গে যে তা যায় না। দলের হারের কষ্টের মধ্যে দলেরই এক খেলোয়াড়ের প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা ভালোভাবে নিতে পারছেন না অনেকে। মাদ্রিদভিত্তিক এল চিরিঙ্গিতোর অনুষ্ঠানে আসা সাংবাদিকেরাও তেমনই। অনুষ্ঠানে জুমার পাশে দাঁড়িয়ে হ্যাজার্ডের সেই হাসির ছবিই বড় করে দেখানো হয়েছে। আর অনুষ্ঠানে চলেছে হ্যাজার্ডের এভাবে হাসির চাঁছাছোলা সমালোচনা। এক সাংবাদিক বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষে হ্যাজার্ড যা করেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’ আরেকজন বললেন, ‘খুব রাগ হচ্ছে। ওর এই আচরণ বুঝতেই পারছি না। ও আর এক সেকেন্ডও রিয়াল মাদ্রিদে থাকতে পারে না!’

অনুষ্ঠানেই পরে দাবি করা হয়, রিয়াল মাদ্রিদ নাকি ঠিক করেই রেখেছে, আগামী গ্রীষ্মে ভালো কোনো প্রস্তাব পেলে হ্যাজার্ডকে বেচে দেওয়া হবে। রিয়াল আসলেই তেমন সিদ্ধান্ত নিলে তা যে শুধু কাল ম্যাচের পরে হ্যাজার্ডের অমন হাসি-ঠাট্টার জন্য নেওয়া হবে, তা নয়। গত দুই মৌসুমে হ্যাজার্ড রিয়ালের হয়ে মাঠের চেয়ে যে হাসপাতালের খাটেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। এই মৌসুমেও সব মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ৮২২ মিনিট! ১০ কোটিরও বেশি ইউরো খরচ করে আনা একজনের কাছ থেকে রিয়াল নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করে!

৩০ বছর বয়সীকে নিয়ে ম্যাচের পর প্রশ্ন করা হয়েছিল রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানকেও। ফরাসি কোচের পছন্দের খেলোয়াড় হ্যাজার্ড, বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড নিজেও জিদানকে আদর্শ মেনেই বড় হয়েছেন। জিদানের আগ্রহেই মূলত হ্যাজার্ডের রিয়ালে আসা। শিষ্যকে কালও আগলেই রেখেছেন জিদান, ‘হ্যাজার্ডের কিছুদিন টানা খেলে যাওয়া দরকার, খেলতে থাকলেই ওর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’
কিন্তু রিয়ালে কি আর অত সুযোগ মেলে?