১ ভোট পাওয়া নিয়ে যা বললেন শফিকুল

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম।
ছবি: প্রথম আলো

কে দিল এই একটা ভোট?—ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এটা যেন কোটি টাকার প্রশ্ন। গত ৩ অক্টোবরের বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন মাত্র এক ভোট। যেহেতু বাফুফের নির্বাচনে শফিকুল ভোটার নন, তাই তাঁকে এই ভোটটা অন্য কোনো কাউন্সিলরই দিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে একজন কাউন্সিলরকে প্রস্তাবক এবং অন্য আরেক কাউন্সিলরকে সমর্থনকারী হিসেবে প্রার্থিতার ফরমে সই করতে হয়। শফিকুল নিশ্চিতভাবেই এই দুজনের অন্তত একজনের ভোট পাননি।

আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে এক ভোট পাওয়া নিয়ে নিজের হতাশার কথা লুকাতে পারেননি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, ‘আমারও প্রশ্ন কে দিল এই এক ভোট? এখানে কাউন্সিলদের অনেকে আছেন যারা আমার অধীনে খেলেছেন। আমার সতীর্থ কোচ আছেন। কেউ কি আমাকে ভোট দেননি? কেউ আমাকে যোগ্য মনে করেনি?’

নাম প্রকাশ না করে শফিকুল বলেছেন, কয়েকজন কাউন্সিলরের ভোট তাঁর হাতছাড়া হওয়ার কথা ছিল না, ‘একজন কাউন্সিলরের কথা বলব, ২০ বছর আগে যার খেলা দেখে ৫০ টাকা দিয়েছিলাম। ওই ৫০ টাকা সে আজও তুলে রেখেছে। ও আমাকে কথা দিয়েছিল ভোট দেবে। শীর্ষ পর্যায়ের একজন কাউন্সিলর বলেছে, তুমি ভোট চাওনি কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চিত করলাম, ভোট তোমাকেই দেব। এই ভোটগুলো কোথায় গেল? আমি এক ভোট পাওয়ার যোগ্য কিনা সেটা ভেবে আশ্চর্য হয়েছি।’

আমাকে হয়তো দয়া করে ফেডারেশন একটা ভোট দিয়ে নির্বাচন হালাল করেছে।
শফিকুল ইসলাম, বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী

ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে সুর পাল্টে আবারও সভাপতি প্রার্থী পদে প্রচারণায় নামেন বাদল রায়। মাত্র এক ভোট পাওয়ার পেছনে বাদল রায়ের ভোটের লড়াইয়ে ফেরাটাকেও দায়ী করলেন শফিকুল, ‘কিছু ভোট ছিল সালাউদ্দিন ভাইয়ের বিপক্ষে। সে সংখ্যাটা অনেক বেশি। এখানে বাদল ভাই আমার ভোট পেতে বাধাগ্রস্ত করেছেন। বাদল ভাই নিজের অবস্থানটা সুসংহত করেননি। আমি যদি একা থাকতাম তাহলে কাউন্সিলরদের আস্থা অর্জনে আরও বেশি সক্ষম হতে পারতাম।’

নির্বাচনী বিধিমালার ১০ নম্বর ধারায় বলা আছে, ভোট গণনার সময় প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে উপস্থিত থেকে ভোট গণনা দেখতে পারবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই তারা ভোট গণনায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু নির্বাচনের দিন শফিকুলকে ভোট গ্রহণ কক্ষে ঢুকতে অনুমতি দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। এটা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন শফিকুল, ‘যারা এত দিন বলেছিল পরিবর্তনে বিশ্বাসী, সবাই আশ্বাস দিয়েছে শেষ দিন পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকুন। আমি তো থাকলাম। তাহলে কি আমি একটি ভোটের জন্য থেকেছি? নিশ্চয় না। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু আমি উপস্থিত ছিলাম না ভোট গণনার সময়, জানি না গণনায় স্বচ্ছতা ছিল কিনা। যদি এই ভোটটি ফেডারেশন কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে একটি ভোট দিয়ে সম্মান করেছে। আমি যেহেতু ছিলাম না, এর মানে আমাকে হয়তো দয়া করে ফেডারেশন একটা ভোট দিয়ে নির্বাচন হালাল করেছে।’

যদিও শফিকুলের এ আপত্তির জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, ভোট গণনার সময় প্রার্থীদের উপস্থিত থাকার সুযোগ থাকলেও আগে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে শফিকুল এ ব্যাপারে কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত বা মৌখিক কোনো আবেদন করেননি।

সোনার গাঁও হোটেলে বিমর্ষ চেহারায় শফিকুল ইসলাম।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ভোটাররা অনেকেই অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে থাকতে পারেন, দাবি শফিকুলের, ‘এখন নীতি নৈতিকতা বলে কিছু নেই। আমি ওটা (টাকা দিয়ে ভোট কেনা) করতে পারব না। এ জন্য আমি দূরে আছি। নির্বাচনে অর্থ একটা বড় ব্যাপার। এভাবে পরাজিত হওয়া বড়ই দুঃখজনক। আমি মনে করি বিবেকের কাছে পরাজিত হয়েছে মানুষ। অনেকে বলেছেন আমি ব্যর্থ হয়েছি। আসলে আমি ব্যর্থ হইনি। ব্যর্থ হয়েছে ফুটবল।’

নির্বাচনী বিধি অনুসারে প্রাপ্য সুযোগ পাননি বলে আইনি লড়াইয়ে নামার কথাও ভাবছেন তিনি, ‘আমার একজন সিনিয়র আইনজীবী বন্ধু আছে, তার সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করে আইনি পদক্ষেপ নেব। ভবিষ্যতের প্রার্থীদের নিশ্চয়তার জন্য এই কাজটুকু আমি করে রাখতে চাই।’