১০ জনের আতালান্তাকে হারাতেই ঘাম ঝরল রিয়ালের

৮৬ মিনিটে দারুণ এক গোল করে রিয়ালের মুখরক্ষা করলেন মেন্দি।ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের ১৭ মিনিটেই লাল কার্ড খেয়ে বসেছিলেন আতালান্তার রেমো ফ্রয়েলার। রিয়াল মাদ্রিদের জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল ১০ জনের আতালান্তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচটা জেতা। ‘ব্লাঙ্কোস’রা ম্যাচটা জিতেছে ঠিকই, কিন্তু সেই জয়টা ঠিক ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া’ ‘উড়িয়ে দেওয়া’ ধরনের হয়নি। উল্টো ঘাম ঝরিয়ে, সংগ্রামমুখর এক জয়ই রিয়াল পেয়েছে ফারলাঁ মেন্দির ৮৬ মিনিটের গোলে।

চোটের কারণে রিয়ালের বেশ কয়েকজন তারকা অবশ্য কাল খেলেননি। সের্হিও রামোস, করিম বেনজেমা, দানি কারভাহাল, এডেন হ্যাজার্ড প্রমুখ খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতির ছাপই পড়ছিল তাদের খেলায়। আতালান্তার রক্ষণ ভাঙতে হিমশিম খেয়েছেন রিয়াল ফুটবলাররা। ভাবা যায়, ১০ জনের আতালান্তার বিপক্ষে রিয়ালের মতো দল ম্যাচের প্রথমার্ধজুড়ে গোলে মাত্র একটি শট নিয়েছে! দ্বিতীয়ার্ধেও আতালান্তার প্রাণপাত করা রক্ষণের সামনে অসহায় লেগেছে রিয়ালকে। তবে ৮৬ মিনিটে মেন্দির দুর্দান্ত এক গোল রিয়ালের মুখ রক্ষা করেছে।

তবে রিয়ালের এই জয় কীভাবে এসেছে, এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে রাজি নন কোচ জিনেদিন জিদান। দল জয় পেয়েছে, ফরাসি গ্রেটের কাছে এটিই আসল কথা, ‘আমি জয় নিয়ে ভাবি। কীভাবে জয়টা এল, সেটি আমার বিষয় নয়। আতালান্তার বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি, এটিই বড় কথা। তবে এটা ঠিক, ম্যাচে আমরা মোটেও ভালো খেলতে পারিনি।’

রিয়ালকে খেলার জায়গাই দেয়নি আতালান্তা।
ছবি: রয়টার্স

আতালান্তা গোটা ম্যাচেই রিয়ালের ফুটবলারদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়েনি। এটা তাদের কৃতিত্ব। বিশেষ করে কোনো দল যখন খেলার শুরুতেই ১০ জনের দলে পরিণত হয়। জিদান অবশ্য এটিকে নিজেদের দলের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন, ‘আপনি ১০ জনের একটা দলের বিপক্ষে খেলছেন, কিন্তু সেখানে খেলার পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়া কঠিন। তবে আমাদের জন্য গোল পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটি পেয়েছি। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের মাঠের গোল।’

গত মৌসুমে আতালান্তা সবাইকে চমকে দিয়ে ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। কোচ জিয়ান পিয়েরো গাসপিরিনি রীতিমতো অসাধ্যই সাধন করেছিলেন। নিজেদের মাঠেও তারা গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতে পারেনি। সংস্কারকাজের জন্য সেটি বন্ধ থাকায় তাদের প্রতিটি ‘হোম’ ম্যাচ খেলতে হয়েছিল মিলানের সান সিরোয়।

মেন্দির গোলটি ছিল অসাধারণ।
ছবি: টুইটার

গত রাতে নিজেদের মাঠ বেরগামোয় চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ‘নকআউট’ ম্যাচ খেলতে নেমে শুরুটা অবশ্য দুঃস্বপ্নের মতোই হয়েছে আতালান্তার। ম্যাচের ১৭ মিনিটেই মেন্দির একটি আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বাজে ফাউল করে বসেন ফ্রয়েলার। রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই লাল কার্ড দেখান তাঁকে।

খেলার শুরুতেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়সংখ্যা একজন কমে গেছে, কিন্তু সেই সুবিধাটুকু নিতে পারেনি রিয়াল। আক্রমণে করিম বেনজেমা, হ্যাজার্ড আর রদ্রিগোর অনুপস্থিতি টের পাচ্ছিল তারা। লুকা মদরিচ আর ভিনিসিয়ুস জুনিয়ারের দুটি হাফ চান্স কাজে লাগাতে পারলে অবশ্য পরিস্থিতি অন্য রকমই হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি!

মেন্দির ৮৬ মিনিটের জয়সূচক গোলটি মুগ্ধ হয়ে দেখার মতোই। আতালান্তার রক্ষণে যখন ফাটল ধরাবার কোনো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিল না রিয়ালের ফরোয়ার্ডরা, তখন মেন্দি লক্ষ্যভেদ করলেন ডি বক্সের বাইরে থেকেই। দারুণ বাঁকানো এক শটে আতালান্তার রক্ষণকে বোকা বানান তিনি। কাল প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্যায়ে শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল রিয়াল। মেন্দির চমৎকার গোলটি সেই উপলক্ষের মুখ রক্ষা করেছে। গোলের পর কোচ জিদানের হাসি সে কথাই বলছিল যেন।