১০ মিনিটে ২ গোল দিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগের বাইরে ইউনাইটেড

ফার্নান্দেসদের হতাশ করে শেষ ষোলোতে লাইপজিগ।ছবি: উয়েফা

লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে এবার যে পাঁচ ম্যাচ খেলেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, পাঁচটিতেই প্রথমে পিছিয়ে পড়েও জিতেছে। সর্বশেষ জয়টি গত শনিবার, ওয়েস্ট হামের মাঠে ৩-১ গোলে। তার আগে ২৯ নভেম্বর সাউদাম্পটনের মাঠে জয়টা তো ছিল আরও দুর্দান্ত, দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধের ঝলকে ইউনাইটেড জিতেছিল ৩-২ গোলে।

লাইপজিগের মাঠে কাল জয় না হোক, অন্তত ড্র করতেও তেমনি তিনটি গোলের দরকার ছিল ইউনাইটেডের। কিন্তু হলো না। শেষ ১০ মিনিটে দুই গোল করে আবারও ফিরে আসার আশা জাগিয়েছিল বটে ইউনাইটেড, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ৩-২ গোলে।

শেষ ষোলোতে যেতে অন্তত ড্র দরকার—এমন সমীকরণ নিয়ে নামা ম্যাচে এই হার চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে দিয়েছে ইউনাইটেডকে। ইউরোপের ক্লাবগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ এখন স্বাগত জানাচ্ছে উলে গুনার সুলশারের দলকে।

হারের দায়টা ইউনাইটেডের ভুলে ভরা রক্ষণের তো বটেই, হয়তো ইউনাইটেড কোচ সুলশারের একাদশ গড়ার ওপরও পড়ে অনেকটা। নেইমার-এমবাপ্পেদের পিএসজির বিপক্ষে যে ছক খুব কাজে এসেছিল, সেই ৩-৪-১-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন কালও। কিন্তু তারুণ্যে, গতিতে দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক লাইপজিগ ৩-৪-২-১ ছকে মাঝমাঠ দখলে রেখে প্রথমার্ধে আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে ইউনাইটেডকে।

পগবার সুবাদে আসা দ্বিতীয় গোলটি ইউনাইটেডে আশার সঞ্চার করেছিল।
ছবি: উয়েফা

১৩ মিনিটের মধ্যেই দুই গোলে এগিয়ে যায় লাইপজিগ! তৃতীয় মিনিটে মাঠের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় মার্সেল সাবিৎসারের দারুণ পাস আসে লাইপজিগের লেফট উইংব্যাক আনহেলিনিওর কাছে, ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ধারে লাইপজিগে যাওয়া লেফটব্যাকের শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না ইউনাইটেড গোলকিপার দাভিদ দে হেয়ার।
১০ মিনিট পর আবার লাইপজিগের উল্লাস। এবার গোলের জোগানদাতা আনহেলিনিও, গোল করলেন লাইপজিগের রাইট-উইংব্যাক আমাদু হাইদারা। দুটি গোলেই দায় অনেকটা যায় ইউনাইটেড রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকার ওপর।

পোস্টের খুব কাছ থেকে এমিল ফোর্সবার্গ একটা শট বাইরে না মারলে কিছুক্ষণ পরই ৩-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত লাইপজিগ। দলটার ডিফেন্ডার ইব্রাহিমা কোনাতের একটা গোলও বাতিল হয়েছে অফসাইডে। অন্যদিকে প্রথম ৩০ মিনিটে ইউনাইটেডের আক্রমণ বলতে স্ট্রাইকার ম্যাসন গ্রিনউড দারুণভাবে বক্সে ঢুকেও লাইপজিগ গোলকিপার পিটার গুলাশির দিকে একটা দুর্বল শট নেওয়া, গ্রিনউডেরই একটা হেড আর মার্কাস রাশফোর্ডের একবার গোলের আশা জাগানো।

দ্বিতীয়ার্ধে ছক বদলে ৪-২-৩-১ ছকে ফেরে ইউনাইটেড, লেফট উইংব্যাক আলেক্স তেলেসের বদলে নামায় আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ডনি ফন ডি বিককে। ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টায় যেতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নেমানিয়া মাতিচের বদলে নামেন পল পগবা, এই ম্যাচের আগেই যাঁর এজেন্ট মিনো রাইওলা ‘পগবা ইউনাইটেডে বেশি দিন থাকবে না’ বলে উটকো বিতর্ক তৈরি করেছেন।

কিন্তু গোল করা তো পরের ব্যাপার, উল্টো ৬৯ মিনিটে তৃতীয় গোলটা খেয়ে যায় ইউনাইটেড। এবার দায় ইউনাইটেডের ৮ কোটি ইউরোর সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়ারের। বল ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে পারলেন না, সুযোগটা নিয়ে দা হেয়াকে দারুণ চিপে পরাস্ত করেন লাইপজিগের বদলি ফরোয়ার্ড জাস্টিন ক্লাইভার্ট। নেদারল্যান্ডস কিংবদন্তি পাত্রিক ক্লাইভার্টের ছেলে এই মৌসুমে লাইপজিগে ধারে এসেছেন রোমা থেকে।

তা যে ম্যাচে অন্তত ড্র দরকার, তাতে ৩-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়া ইউনাইটেডের এ বেলায় বুঝি হুঁশ ফিরল! ব্রুনো ফার্নান্দেজের শট একবার গেল পোস্ট ঘেঁষে, আরেকবার পোস্টেই লাগল। দানে দানে তিন দানে এসে সফল ফার্নান্দেজ, তবে ৮০ মিনিটে তাঁর গোল এসেছে পেনাল্টি থেকে।

এই বুঝি জেগে উঠল ইউনাইটেড! দুমিনিট পর আবার গোল! কর্নার থেকে পগবার হেড বক্সে হাঁচোড়পাঁচোড়ের মধ্যে লাইপজিগ ডিফেন্ডার মুকিয়েলের গায়ে লেগে ঢোকে জালে। আত্মঘাতী গোল, তবে গোলের আগে বলটা আসলে পগবার মাথায় লেগেছে না হাতে, তা ভিএআরে দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই গোল!

যেভাবেই আসুক, গোল তো! ইউনাইটেড তখন রক্তের গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু অতটুকুই! শিকার আর করা হয়নি। এবার আর ফিরে আসা হয়নি সুলশারের দলের।

‘দ্বিতীয় গোলের আগপর্যন্ত আমরা ঠিকমতো চেষ্টাই করিনি। জানতাম ওরা দ্রুত আক্রমণে উঠে বক্সে অনেক ক্রস ফেলবে, কিন্তু দ্রুত দুটি গোল খেয়ে গেলাম, এরপর আর খেলতেই পারিনি ঠিকমতো’ ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড কোচ সুলশারের ক্ষোভ।