১০–১২ বছর বয়সীদের নিয়ে কাজ না করলে ভবিষ্যৎ নেই

অনেক ঘাটতি খেলোয়াড়দেরছবি: বাফুফে

দেশের ফুটবলের আধুনিক কোচরা সব সময় বলে থাকেন, খেলতে খেলতে খেলোয়াড় হওয়ার দিন আর নেই! যার সারমর্ম হলো অল্প বয়স থেকে খেলোয়াড় তৈরি করতে না পারলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে হালে পানি পাওয়া যাবে না।

সেটা প্রতি টুর্নামেন্টেই ফুটে উঠছে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলেই বাংলাদেশ এখন আর কোনো সাফল্য পাচ্ছে না। কাল শেষ হওয়া এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বও দেখিয়ে দিল, কোথায় পড়ে আছে বাংলাদেশ।

আসলে অন্যান্য দেশের একাডেমি থেকে ওঠে আসা খেলোয়াড়দের সঙ্গে এখন আর পেরে ওঠে না বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।

এখন পর্যন্ত কোনো ক্লাবের নিজস্ব একাডেমি নেই, একাডেমি বলতে যা বোঝায়, তা তো ফুটবল ফেডারেশনেরও নেই। তাই উপযুক্ত বয়সে ফুটবল শেখাটা হয়ে ওঠে না বাংলাদেশের ফুটবলারদের। ওই খেলতে খেলতে খেলোয়াড় হওয়া আর কি।

ফুটবলার তৈরির কোনো পদ্ধতি ও প্রথাগত পরিবেশ না থাকায় আন্তর্জাতিক পরিসরে দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশের ফুটবল। ফুটবলের মৌলিক বিষয় পাসিং, রিসিভিং, বল পায়ে রাখা, গোলে শট নেওয়ার মতো বিষয়গুলোতেও অনেক ঘাটতি।

মাঠে এমন উদযাপন খুব কমই করতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা গোল করতে পারেন না এটা যেমন সত্য, প্রতিপক্ষের আক্রমণের মুখে কীভাবে রক্ষণভাগ সামলাতে হয়, সে টেকনিকেও চোখে পড়ে বড় ঘাটতি। এত সব দুর্বলতা সঙ্গে নিয়ে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের তিন ম্যাচের সব কটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। কাল শেষটা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানের হারে।

বাংলাদেশ দলের খেলা কেমন দেখলেন? এমন প্রশ্নে দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘পুরোনো কথা নতুন করে আর কী বলব! আমাদের খেলোয়াড়দের টেকনিকে যে ঘাটতি আছে, তা দিয়ে এই পর্যায়ে খেলা সম্ভব নয়। ট্যাকটিক্যাল ধারণা জিরো।’

এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ মারুফুল, ‘জাতীয় দল শেখানোর জায়গা নয়। খেলোয়াড় তৈরির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। খেলোয়াড়দের ১০-১২ বছর বয়সের মধ্যে টেকনিক শেখাতে না পারলে আরও খারাপ হতে পারে ভবিষ্যৎ।’

কাল মালয়েশিয়া ম্যাচসহ গত ১৪ দিনে চারটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া ম্যাচটি এক পাশে সরিয়ে রেখে আগের তুলনায় উন্নতিই দেখছেন দেশের আরেক অভিজ্ঞ কোচ শফিকুল ইসলাম।

জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ বলছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হারটা বড় ব্যবধানে হয়ে গিয়েছে। এটা অনেক বড় দলেরও হয়। তবে এর আগে ইন্দোনেশিয়ার ম্যাচ থেকে শুরু করে যে তিনটি ম্যাচ দেখেছি, এতে অনেক জায়গায় উন্নতি করার আছে।’

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
ছবি: প্রথম আলো

সেই উন্নতির জায়গাগুলো দেখালেন মোহামেডানের কোচ, ‘দলের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। এখন শুধু গোল ঠেকায় না, গোল করার মনোভাবও তৈরি হয়েছে। এই উন্নতিটার খুব প্রয়োজন ছিল।’

একই দাবি কাল ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও করেছেন জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা, ‘আমরা উন্নতি করেছি। এটা ধরে রাখতে হবে এবং সামনে আরও উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশ উন্নতির ধারায় আছে।’