১১৮ মিনিটের গোলে পুলিশের হৃদয় ভেঙে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

অতিরিক্ত সময়ের ২৮ মিনিটে গোল করে বসুন্ধরাকে জিতিয়েছেন ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাতছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ঘরোয়া ফুটবলের ম্যাচে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা বুঝি আর ছড়াতে পারত না!

মঙ্গলবার স্বাধীনতা কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচে কী না ছিল? গোল, পাল্টা গোলে সমতা। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে অতিরিক্ত সময়ের খেলা প্রায় টাইব্রেকারে যাওয়া। এর আগে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাতাহাতিতে জড়ানো। গ্যালারি থেকে মাঠে বোতল ছুড়ে মারা। সমর্থকদের চাপে সহকারী রেফারিকে প্রান্ত বদল করে দুই সহকারী রেফারিকে এক পাশে নিয়ে এসে ম্যাচ পরিচালনা করা—সবই ছিল।

সব উত্তেজনার শেষ হয়েছে অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে বসুন্ধরার ২-১ গোলের জয়ে। অতিরিক্ত সময়ে ২৮ মিনিট বা ১১৮ মিনিটে বসুন্ধরার জয়সূচক গোলটি করেছেন ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত। এর আগে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ছিল ১-১ গোলে ড্র।

বসুন্ধরার প্রথম গোলটি করেছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯ নম্বর)
ছবি: প্রথম আলো

মাঠের খেলার মতো গ্যালারির উত্তেজনা ছিল চরমে। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পূর্ব গ্যালারি থেকে বোতল ছুড়ে মারেন সমর্থকেরা। সে গ্যালারিতে পুলিশ দলের পতাকা উড়তে দেখা যায়। সে পাশে থাকা সহকারী রেফারির উদ্দেশেও বোতল ছুড়ে মারা হলে তাঁকে পশ্চিম পাশে নিয়ে আসা হয়। পরে দায়িত্বরত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে তিনি আবার তাঁর জায়গায় ফিরে যান।

১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ফাইনালে আবাহনীর সঙ্গী হবে কোন দল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার লড়াইটি যে এতটা উপভোগ্য হবে, তা হয়তো কারও ভাবনায় ছিল না। যেহেতু ম্যাচটি পুলিশের সঙ্গে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে দুর্দান্ত খেলে সেমিফাইনালে এসেছিল পুলিশ। তবে তারা যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরারও কঠিন পরীক্ষা নেবে, এটা ভাবা ছিল কষ্টকর। সেই কাজটিই করেছেন পুলিশের খেলোয়াড়েরা।

চার ডিফেন্ডারের সামনে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার খেলিয়ে জমাট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল পুলিশের রোমানিয়ান কোচ আরিস্তিকা চিয়োবা। প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জমাট করতে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দেনিলসন রোলদাকেও বেঞ্চে বসিয়ে রেখে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলানো হয়েছে প্রথাগত রাইটব্যাক মোহাম্মদ রকিকে। বসুন্ধরার পায়ে বল থাকলে দলটির চরিত্র হয়ে যাচ্ছিল ৪ রক্ষণভাগের সামনে ৫ মিডফিল্ডারের ‘ডাবল ব্লক’। সেই দুর্ভেদ্য দেয়াল ভেদ করাই ছিল রবসন রবিনিও, স্তোয়ান ভ্রানিয়েসদের জন্য কষ্টকর। রক্ষণদেয়াল তুলে দিয়ে প্রতি–আক্রমণনির্ভর ফুটবল বেছে নেয় পুলিশ।

দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

৮ মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। মরক্কোর মিডফিল্ডার আদিল কুসকুসের ফ্রি-কিক থেকে বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানিলো আগুস্তো। ১২ মিনিটে একটি ফ্রি-কিক কেন্দ্র করে দুই দলের খেলোয়াড়েরা ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। পরের মিনিটেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বসুন্ধরার মাঝমাঠের প্রাণভোমরা জোনাথন ফার্নান্দেজ। তাঁর মাঠ ছাড়াটাই বসুন্ধরার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

তবু ৩০ মিনিটে বসুন্ধরাকে সমতায় ফেরান মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ডান প্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের কাটব্যাকে স্তোয়ান ভ্রানিয়েস শট নিলে পুলিশের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে দুরূহ কোণ থেকে শট নিয়ে গোলটি করেন ইব্রাহিম।
৫২ মিনিটে বসুন্ধরাকে গোললাইন থেকে গোল বঞ্চিত করেন পুলিশের রকি। রবসনের ফ্রি-কিক থেকে ইয়াছিনের হেড গোলে ঢোকার সময় গোললাইন থেকে রক্ষা করেন তিনি। ৭৬ মিনিটে এই ইয়াছিনের হাস্যকর ভুলেই গোল খেতে যাচ্ছিল বসুন্ধরা। কিন্তু রকি ঠিকমতো শট নিতে ব্যর্থ হওয়ায় রক্ষা।

ম্যাচ শেষে হতাশ বাংলাদেশ পুলিশ দলের ফুটবলাররা
ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এলিটা কিংসলি, মাহবুবুর রহমান সুফিল ও বিশ্বনাথ ঘোষ বদলি হিসেবে মাঠে পাঠায় বসুন্ধরা। তিন বদলিতে বাড়তি প্রাণের সঞ্চার হয়। ১০৮ মিনিটে রবসনের জোরালো শট রক্ষা করেন পুলিশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। ৪ মিনিট পর বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুরকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি পুলিশের ফরোয়ার্ড আল আমিন। ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়াতে যাচ্ছে, ধরেই নিয়েছিল সবাই।

এমন সময় পুলিশের গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দিলেন ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত। রবিনহোর ফ্রি-কিক থেকে মাহবুবুর হেড নিলে সে বলেই টোকা দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন ইয়াছিন। বসুন্ধরা গ্যালারি হয়ে উঠে লাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ আবাহনী লিমিটেড।