১২ মাসে তাঁর ১৩ ব্যারাম, বার্সার ১০ কোটি জলে

বার্সেলোনার জার্সিতে দেম্বেলেকে খুব কমই দেখা যায়!ফাইল ছবি: এএফপি

দুঃসময় যখন যায়, তখন কোনো কিছুই ঠিকমতো হয় না। বার্সেলোনার এখন বুঝি সে অভিজ্ঞতাই হচ্ছে।

মাঠে ক্লাবটার সময় মোটেও ভালো যাচ্ছে না। মাঠের বাইরেও ক্লাবের প্রশাসনে আছে অস্থিরতা। আর্থিক অবস্থাও তথৈবচ! ১৪ বছর পর এবার স্পেনের শীর্ষ স্তরে উঠে আসা ‘পুঁচকে’ কাদিজের মাঠে কালই লিগে ২-১ গোলে হেরেছে বার্সা। তাতে লিগে এবার প্রথম ১০ ম্যাচ শেষে বার্সার পয়েন্ট হলো মাত্র ১৪!

সব মিলিয়ে কাল ম্যাচের পর কোনো বার্সা সমর্থকের যদি মনে হয়ে থাকে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর হতে পারে না, তাহলে তাঁর জন্য আরেকটি ধাক্কা হয়ে আসবে ওসমানে দেম্বেলের চোট।

কাল কাদিজের বিপক্ষে নেমেছিলেন দেম্বেলে।
ছবি: বার্সেলোনা

১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে ২০১৭ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বার্সায় আসার পর থেকেই একের পর এক চোটে মাঠের বাইরে থাকা ২৩ বছর বয়সী ফরাসি উইঙ্গার নতুন করে আবার হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েছেন। তবে এবারের চোট অত গুরুতর নয়। স্প্যানিশ দৈনিক এএস জানাচ্ছে, ডান ঊরুর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটটা গুরুতর নয় ঠিকই, তবে দেম্বেলের ডান ঊরুতে আগের চোটের ইতিহাস বিবেচনায় রেখে দুই সপ্তাহের মতো তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে।

এ নিয়ে বার্সায় মোট ৯টি ছোট-বড় চোটে পড়েছেন দেম্বেলে। তাতে সব মিলিয়ে ৫১২ দিন ছিলেন মাঠের বাইরে। ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট জানাচ্ছে, চোটের কারণে বার্সার জার্সিতে দেম্বেলে ম্যাচ মিস করেছেন ৬০টি। আর বার্সার জার্সিতে তিনি এখন পর্যন্ত কয়টি ম্যাচ খেলেছেন জানেন? ৮৬টি! অর্থাৎ প্রতি তিন ম্যাচের মতো খেলার বিপরীতে দুটি করে ম্যাচে দেম্বেলেকে পাননি বার্সার কোচেরা! ১০ কোটি ইউরো বুঝি জলেই গেল বার্সার!

ফুটবলে চোট নিয়ে ইংরেজিতে একটা কথা বেশ প্রচলিত—‘দ্য বেস্ট অ্যাবিলিটি ইজ অ্যাভেইলেবিলিটি।’ একজন খেলোয়াড় কেমন খেলেন, প্রতিপক্ষকে কতটা নাচিয়ে ছাড়তে পারেন, কিংবা গোল করা বা করানোয় কত দক্ষ, সেসব পরের বিবেচনা, আগে কোচ ডাকলে তাঁকে খেলার মতো অবস্থায় থাকতে তো হবে। এই সামর্থ্যের দিক দিয়ে যে দেম্বেলে যোজন যোজন পিছিয়ে আছেন, তা নিয়ে আর সংশয় কি!

গত কিছুদিন ভালো ফর্মে ছিলেন দেম্বেলে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মজার ব্যাপার, বার্সায় আসার আগে অবশ্য তাঁর চোটের ইতিহাস তেমন নেই। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, বার্সায় আসার আগে রেনে ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড মিলিয়ে তিন মৌসুমে মাত্র দুবার চোটে পড়েছিলেন দেম্বেলে। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল হালকা আঘাত, যেটির কারণে মাঠের বাইরে থাকতে হয়নি তাঁকে। পরেরটি ২০১৬–১৭ মৌসুমে ডর্টমুন্ডে থাকার সময়ে নিতম্বে হালকা চোট। সে চোটের কারণে ১০ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন বটে, তবে চোটটা জার্মান লিগে শীতকালীন বিরতির সময়ে হওয়াতে কোনো ম্যাচ মিস করতে হয়নি দেম্বেলেকে।

বার্সা তাঁর স্বপ্নের ক্লাব, ডর্টমুন্ড তাঁকে ২০১৭ সালে প্রথমে বার্সার কাছে বেচতে চায়নি বলে রীতিমতো ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। ক্লাবকে কিছু না জানিয়ে অনুশীলনে যাওয়া বন্ধ করে দেন! ওদিকে সে সময় নেইমার পিএসজিতে চলে যান বলে বার্সাও প্রতিভাবান কাউকে চাইছিল, বিকল্প হিসেবে ডর্টমুন্ডকে তিতিবিরক্ত করেই দেম্বেলেকে নিয়ে আসে। সেই দলবদলের ফল এমন হবে, তা যদি দেম্বেলে বা বার্সা কোনো পক্ষই আগে থেকে জানত!

দেম্বেলে অবশ্য বার্সায় যে চোটের কারণে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠের বাইরে থেকেছেন, সেটি এই হ্যামস্ট্রিংয়েরই চোট! বার্সায় আসার পরই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ১০৬ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন দেম্বেলে, সে সময় ২০টি ম্যাচ মিস করেন। আর এই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণেই মাঠের বাইরে ছিলেন ১৯১ দিন! এবারে ১৯টি ম্যাচে তাঁকে পায়নি বার্সা। করোনার কারণে এ সময়টাতে অবশ্য অনেক দিন ফুটবল বন্ধ ছিল। হ্যামস্ট্রিংয়ের দুই চোটের বাইরে গত বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে এই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৬ দিনে ১৫টি ম্যাচ দেম্বেলে মিস করেছেন মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়ায়।

এবার চোট থেকে ফিরে ধীরে ধীরে ফর্মে ফেরার আভাসই দিচ্ছিলেন দেম্বেলে। লিগে ৮ ম্যাচে (৪টিতে বদলি নেমেছেন) মাত্র ১ গোল করলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচে (২টিতে বদলি নেমেছেন) গোল করেছেন ৩টি, করিয়েছেন আরও ২টি।

দেম্বেলের মতো বার্সাও এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালো করলেও লিগে ধুঁকছে। ১০ ম্যাচ শেষে ১৪ পয়েন্ট মেসিদের। এই মুহূর্তে শীর্ষে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদের চেয়ে পিছিয়ে ১২ পয়েন্টে, অথচ অবনমন অঞ্চলের প্রথম দল (পয়েন্ট তালিকায় ১৮তম) ওসাসুনার সঙ্গে বার্সার পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ৩!

চ্যাম্পিয়নস লিগে অবশ্য গ্রুপ পর্বের প্রথম পাঁচ ম্যাচের সব কটিতে জিতেছে বার্সা। আগামী মঙ্গলবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে জিতলেই ২০০২–০৩ মৌসুমের পর প্রথমবার গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচ জেতার রেকর্ড গড়বে।

অবশ্য বার্সার সাম্প্রতিক ইতিহাস মানলে, চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বে কিংবা শেষ ষোলোতে বার্সার ঝামেলা হয় না। মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল তো আছেই!