১২ ম্যাচে ১২ উইকেট, ইকোনমি ৮.৬৮, তবু আইপিএলে দাম কেন ১৬ কোটি?

ঝাই রিচার্ডসনকে এবার কিনে নিয়েছে পাঞ্জাব কিংস।ছবি : টুইটার

১৪ কোটি রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। অস্ট্রেলিয়ার ২৪ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার ঝাই রিচার্ডসনকে এবার আইপিএলের নিলামে চোখ কপালে তোলা এই দামেই কিনে নিয়েছে প্রীতি জিনতার দল পাঞ্জাব কিংস (আগের কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)। গত মাসে আইপিএলের নিলামে ক্রিস মরিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কাইল জেমিসনদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন রিচার্ডসন।

অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে তাঁর পরিসংখ্যান দেখলে অঙ্কটা আরও অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। এই মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বোলিং করছেন রিচার্ডসন। আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। এই ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ১১টি টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১২ উইকেট পেয়েছেন রিচার্ডসন। এর মধ্যে কোনো ইনিংসে ২ উইকেটের বেশি পাননি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.৬১ করে। তাহলে এমন একজনের জন্য পাঞ্জাব ১৬ কোটিরও বেশি কেন খরচ করেছে? ভারতের টিভি চ্যানেল ডব্লুআইওএনকে সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের প্রধান নির্বাহী সতীশ মেনন।

ঝাই রিচার্ডসনের জন্য কেন এত আগ্রহ ছিল, সেটি বুঝতে গেলে অবশ্য জাতীয় দল নয়, দেখতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর হয়ে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর পারফরম্যান্স। রিচার্ডসন পাদপ্রদীপে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশে বল হাতে ঝলক দেখিয়ে। সেখানে ৫৩ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ডানহাতি ফাস্ট বোলারের উইকেট ৬৯টি। ইকোনমি ৭.৭৭। সেরা বোলিং, ১৯ রানে ৪ উইকেট। এর মধ্যে সর্বশেষ বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন রিচার্ডসন। ১৭ ম্যাচে ২৯ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছেন। স্ট্রাইক রেট ১২.৭০, অর্থাৎ প্রতি উইকেটের পেছনে তাঁর ১৩ বলেরও কম লেগেছে।

বিগ ব্যাশে এবার আলো ছড়িয়েছেন ঝাই রিচার্ডসন।
ছবি : টুইটার

বিগ ব্যাশের পরই আইপিএলের নিলাম হয় বলে সেখানে রিচার্ডসনের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়বে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। তা-ই হয়েছে। ডব্লুআইওএনে রিচার্ডসনকে কেনার পেছনে তাঁদের ভাবনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পাঞ্জাবের প্রধান নির্বাহী সতীশ মেনন, ‘ঝাইকে কেনা সব সময়ই আমাদের লক্ষ্য ছিল। সাদা বলের ক্রিকেটে বল হাতে সে সেরাদের একজন। ক্রিস মরিসের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমরা, কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস ওকে পেয়ে গেছে। ম্যাচের যেকোনো অবস্থায় ঝাইয়ের বল করতে পারার ক্ষমতা আমাদের ম্যাচের অবস্থা বুঝে যেকোনো সময় পরিকল্পনা অদলবদল করায় সুবিধা এনে দেবে, যে নমনীয়তার খোঁজে আমরা ছিলাম।’

সতীশ মেনন আলাদা করে বললেন ঝাই রিচার্ডসনের ব্যাটিং দক্ষতার কথাও, ‘আর ব্যাট হাতেও ও বেশ কার্যকরী একজন খেলোয়াড়। পাঞ্জাব কিংসের জার্সিতে আইপিএলে ঝাইকে দেখতে আমরা সত্যিই বেশ রোমাঞ্চিত।’ এখানেও অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে নয়, রিচার্ডসনের ব্যাটিং দক্ষতার কথা বলবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ১১ ম্যাচে ২৮ রান তাঁর। তবে এর বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৬৪ ম্যাচে ২৫৬ রান তাঁর। গড় প্রায় ২০ (১৯.৬৯), সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৩৩ রানের। এটা দেখে ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই, লোয়ার অর্ডারে নামা ঝাই রিচার্ডসনের কাছ থেকে নিশ্চয়ই কেউ কোহলি-ওয়ার্নারের ব্যাটিং আশা করবে না। আশা করবে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে অল্প কয়েক বলে বেশ কিছু রান। সেটা যে ঝাই রিচার্ডসন একেবারে খারাপ পারেন না, তা বলবে তাঁর স্ট্রাইক রেট—১৩৬.৮৯।

রিচার্ডসন ছাড়া এবারের নিলামে বিদেশি বলতে ডেভিড ম্যালান, রাইলি মেরেডিথ, ফাবিয়ান অ্যালেন ও মইজেস হেনরিকেসকে কিনেছে পাঞ্জাব। এর মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ডেভিড ম্যালানকে পাঞ্জাব পেয়েছে মাত্র দেড় কোটি রূপিতে। এত কম দামে ম্যালানকে পেয়ে পাঞ্জাবই চমকে গেছে। সতীশ মেনন তা-ই জানিয়েছেন, ‘ডেভিডকে এত দ্রুত (কম দর হাঁকিয়ে) পেয়ে আমরা নিজেরাই আশ্চর্য হয়ে গেছি। অন্য দলগুলোর সমন্বয় এখানে হয়তো ভূমিকা রেখেছে। মাঝেমধ্যে আপনার নাম কখন নিলামে উঠবে, সেটাও ভূমিকা রাখে। ও দারুণ মানসম্পন্ন খেলোয়াড়, মিডল অর্ডারে আমাদের দারুণ মান ও নির্ভরতার নিশ্চয়তা দেবে, যেটা আমাদের নেই বলে মনে হয়েছিল।’