ফাইনালের সমীকরণ মেলাতে পারবে বাংলাদেশ?

আরেকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে পারবে বাংলাদেশ?ছবি: বাফুফে

১৮ বছর পর মালদ্বীপকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জয়টা আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে এসেছে বলেই, সেটি নিয়ে খুব উচ্চবাচ্য নেই। তা ছাড়া মালদ্বীপকে হারাতে কেন ১৮ বছর লাগল, এ আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক দিন ধরেই মালদ্বীপ ফুটবলে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। একসময়ের দুর্বল মালদ্বীপ এখন দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের বড় শক্তিই। মানের দিক দিয়ে ভারতের পরপরই তাদের অবস্থান। তাই ২০০৩ সালের পর ভারত মহাসাগরের ছোট্ট এই দ্বীপদেশটিকে হারাতে পারাটাকে হালে অর্জন হিসেবেই ধরে নিতে হবে। এটাই বাংলাদেশের ফুটবলের বাস্তবতা।

মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়টা দেশের ফুটবলে একধরনের প্রশস্তির হাওয়াই বইয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠানরত মাহিন্দা রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন ফাইনাল। মঙ্গলবার স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেলেই আরেকবার আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ।

গত ১ অক্টোবর মালদ্বীপের মালেতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১–০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ৪৬ দিন পর আবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ—আরেকটি জয় তো প্রত্যাশা করাই যায়। জয় না না পেলে নিদেনপক্ষে ড্রর প্রত্যাশা তো বাড়াবাড়ি কিছু নয়। তবে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য যে জয়, সেটি বলাই বাহুল্য। মঙ্গলবার কলম্বোর রেসকোর্স স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায়।

শ্রীলঙ্কার চারজাতি ফুটবলের ফাইনালের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে
ছবি: বাফুফে

অক্টোবরের শুরুর দিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই লড়াইয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে নভেম্বরের ১৬ তারিখের বাংলাদেশের কিছু পার্থক্য আছে। দলের ডাগআউটে সাপোর্ট স্টাফরা প্রায় সবাই পরিবর্তিত। সেদিন কোচ হিসেবে ছিলেন অস্কার ব্রুজোন। মঙ্গলবার থাকবেন পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। তবে লক্ষ্যটা ব্রুজোনের মতো লেমোসেরও একই—জয়। তবে তিনি এক পয়েন্ট পেলেও অখুশি হবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, লেমোস চান সব বিভাগে শৃঙ্খলা,অখণ্ড মনোযোগ। এ ব্যাপারগুলো হলেই দল অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলেই মত তাঁর, ‘এটা আমাদের শেষ ম্যাচ এবং আমরা এমন একটা অবস্থায় আছি, ফাইনালে যেতে হলে আমাদের পয়েন্টের প্রয়োজন। প্রতিটি বিভাগের দিকেই দৃষ্টি আছে এবং জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের আরও বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হবে।’

চার দলের টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলের সামনেই খোলা আছে ফাইনালের সুযোগ। ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে বাংলাদেশ। সমান পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সেশেলস। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলে তাদের সামনেও খুলে যাবে ফাইনালের দরজা। লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রয়োজন ড্র আর সে আশা বাঁচিয়ে রাখতে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন জয়। নিজেদের দর্শকদের সামনে মরণ কামড় দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চটাই উজাড় করে দেবেন লঙ্কানরা। নিজেদের আয়োজনে কেই–বা ফাইনালের দর্শক হয়ে থাকতে চায়!

বাংলাদেশের থিংকট্যাংক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততেই চায়
ছবি: বাফুফে

সে কারণেই ম্যাচের আগাম পরিস্থিতি ভেবে রাখছেন লেমোস ,‘শ্রীলঙ্কাকে ঝুঁকি নিতে হবে, জেতার জন্য তারা সেটি নেবেও। তাই আমাদের ভুল করা যাবে না। ভুল করলে শাস্তি পেতে হবে।’

পরিসংখ্যানে এগিয়ে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ১২ ম্যাচ। বিপরীতে ৪টি হার ও ২টি ড্র। এর মধ্যে কলম্বোতে খেলা সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই কলম্বোতে এবার ২–১ গোলে মালদ্বীপ–গেড়ো খুলে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার আত্মবিশ্বাস যথেষ্টই, ‘ছেলেরা এখন বেশি ক্ষুধার্ত। ওই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে আমরা এই টুর্নামেন্টে কিছু করতে পারি। আমরা জিততে চাই। তবে শ্রীলঙ্কার প্রতি শ্রদ্ধা আছে।’

টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয়েছিল চমক জাগানিয়া। মালদ্বীপের কাছে ৪ গোলে পিছিয়ে পড়ে পাল্টা ৪ গোল দিয়ে নাটকীয় ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ১–০ গোলে হেরে যায় সেশেলসের বিপক্ষে। আফ্রিকার এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ড্র করে ১–১ গোলে।