১৯ বছর পর ‘শত্রু’ মেসিকে সামনে পাবেন তিনি

ইকুয়েডরের গোলবার সামলানোর দায়িত্ব পাবেন গালিন্দেজ?ছবি: টুইটার

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার ভোর রাত থেকে। সেদিন নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। দুই দলই ম্যাচ সামনে রেখে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। ইকুয়েডর দলকে ঝামেলায় ফেলেছেন গোলরক্ষক ইয়োহান পাদিলা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। পাদিলার বিকল্প হিসেবে গোলরক্ষক হেরনান গালিন্দেজকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকেছেন ইকুয়েডরের আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাভো আলফারো। এই গালিন্দেজ আবার জন্মসূত্রে আলফারোর দেশি লোক। জন্মেছেন রোজারিও-তে। ঠিক ধরেছেন, লিওনেল মেসির জন্মও সেখানে।

ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ইকুয়েডের গোলরক্ষক গালিন্দেজ ২০১২ থেকে রয়েছেন ইকুয়েডরে। তার আগে খেলেছেন আর্জেন্টাইন ক্লাব ফুটবলে। ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন সাম্প্রতিককালে। এক সময় স্ট্রাইকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা গালিন্দেজ এখন গোলরক্ষক। তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়াল? যে দেশে নাড়ি পোঁতা সেই দেশের বিপক্ষে গোলপোস্ট সামলাতে হবে গালিন্দেজকে, মুখোমুখি হতে হবে শৈশবের প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বীর—মেসি!

শৈশবের প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী? মেসি এবং গালিন্দেজ সমবয়সী—৩৩ বছর বয়স। ২০০৮ সালে রোজারিও সেন্ট্রালের মূল দলে যোগ দেন গালিন্দেজ। খেলেছেন আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগ ফুটবলে। তার আগে অন্যান্য বয়সভিত্তিক দলে মুখোমুখি হয়েছেন মেসির। তখন ফরোয়ার্ড হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা গালিন্দেজ ৫ বছর বয়সে মোড় পাল্টে হয়ে যান গোলরক্ষক। এক ম্যাচে তাদের গোলরক্ষক চোট পাওয়ায় সেই যে গোলপোস্টের নিচে দাঁড়ালেন আর উঠে আসা হয়নি। গোলরক্ষক হিসেবে তাঁর প্রথম গোল হজমেও অবদান ছিল মেসির। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসকে গালিন্দেজ বলেন, ‘পজিশন পাল্টানোর পর ওদের প্রথম গোলটা বানিয়েছিল মেসি। আমরা ছিলাম সমবয়সী, একই এলাকা থেকে উঠে আসা, পরে সে আমার চেয়ে ভালো হয়ে যায় (কৌতুকের স্বরে)।’

৩৩ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পেলেন হচ্ছে গালিন্দেজ।
ছবি: টুইটার

মেসি তখন কতটা ভালো ছিলেন সে নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন গালিন্দেজ, ‘আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। সব ফাইনালেই একে অপরের মুখোমুখি হয়েছি। তবে একটা ম্যাচে হারানোর ডিভিডি এখনো সংগ্রহে আছে। ওরা প্রায় জিতেই গিয়েছিল। ছোট থাকতেই সে বুঝিয়ে দিয়েছিল কত বড় খেলোয়াড় হবে। সবাই ওর কথা বলত। এরপর তো ১২ বছর বয়সে স্পেন চলে গেল। এরপর আমরা আর কখনো একে অপরের মুখোমুখি হইনি।’

আর্জেন্টিনা অধিনায়কের বিপক্ষে এক ম্যাচে সাইকেল জিতেছিলেন গালিন্দেজ। এ ঘটনা ফুটবলপ্রেমীদের জানা থাকলেও কীভাবে জিতেছিলেন সে কথা বলেছেন ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘ওলে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। ‘সুইস শট নামে এক দল রোজারিওতে এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল। সেটা ছিল ফাইনাল। শিরোপা না দিয়ে তারা চ্যাম্পিয়ন দলকে ১০টি সাইকেল উপহার দিত। রোজারিওতে ঘাসের মাঠে তখন প্রতি দলে ৭জন করে খেলোয়াড় খেলত। এস্ত্রেলা জুনিয়র্সের হয়ে ফাইনালে উঠে মেসিদের হারাই। তার ডিভিডি আছে আমার কাছে।’

একই এলাকায় বড় হলেও মেসি-গালিন্দেজ কখনো বন্ধু ছিলেন না। ১০-১১ বছর বয়সের সে সময়ে ওই অঞ্চলের খুদে ফুটবলারদের সবাই মেসিকে (মেসির দলকে) হারাতে চাইত। বার্সেলোনা তারকা সে সময়ই বড় কিছু হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। গালিন্দেজের ভাষায়, ‘আমরা বন্ধু ছিলাম—কথাটা বললে মিথ্যা বলা হবে। একসঙ্গে কখনো খেলিনি, বন্ধুত্ব ছিল না। রোজারিওতে সে সময় তাকে সবাই হারাতে চাইত। এ কারণে ফাইনালে তাদের হারানো ছিল দারুণ এক অর্জন।’

ইকুয়েডর দলে তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে ডাক পেলেন গালিন্দেজ। ‘লা ত্রি’দের হয়ে এই প্রথম ডাক পেলেন তিনি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে শৈশবের সে প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘অটোগ্রাফ’ নেবেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে গালিন্দেজ প্রতিদ্বন্দ্বিতাই ধরে রাখলেন, ‘এটা ভাবিনি। আমার কাজ দলকে সাহায্য করা। ম্যাচ শেষে দেখা যাবে, আপাতত আমরা শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী।’

সাইকেল জয়ের সেই রোমাঞ্চ তাহলে গালিন্দেজ এখনো ভোলেননি!