২১ বছরেই চক্র পূরণের অপেক্ষায় এমবাপ্পে

চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে?রয়টার্স

জিয়ানলুইজি বুফনের বুঝি এখন আক্ষেপ হচ্ছে!


এই মৌসুমে পিএসজি ছেড়ে আবার জুভেন্টাসে না ফিরে গেলেই হতো। ক্যারিয়ারে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্নটা পূরণ হতো কি না তাঁর, কে জানে! অন্তত আরেকবার ফাইনালে তো খেলতে পারতেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের খুব কাছে তো চলে আসতেন!
ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিওর এ আক্ষেপটা নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে। বুফনের ক্যারিয়ার এই ৪২ বছর বয়সেও চলছে, কিন্তু এত বছরেও এই একটা আক্ষেপ ঘোচেনি ইতালির কিংবদন্তি গোলকিপার। শুধু এই আক্ষেপটা ঘোচানোর জন্যই মাঝে গত মৌসুমটা জুভেন্টাস ছেড়ে ঘুরে এসেছিলেন পিএসজিতে। ফরাসি ক্লাবটি গত মৌসুমে শেষ ষোলোতে বাদ পড়েছে। এবার বুফন জুভেন্টাসে ফিরেছেন, জুভেন্টাস বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। পিএসজি এদিকে ফাইনালে খেলছে।

রোনালদো-বুফন দুজনই লিগ জিতেছেন অনেক-অনেকবার। একজন ফুটবলারের আজন্ম আরাধ্য যে ট্রফি, সেই বিশ্বকাপও পেয়েছে দুই কিংবদন্তির ছোঁয়া। রোনালদো ব্রাজিলকে এনে দিয়েছেন ২০০২ বিশ্বকাপ, চার বছর পর ইতালির বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলপোস্টে নির্ভরতার প্রতিশব্দ হয়ে ছিলেন বুফন।
রোনালদো-বুফনদের যে চক্রটা পূরণ হয়নি, মাত্র ২১ বছর বয়সেই সেটি পূরণের আর ৯০ মিনিট দূরে দাঁড়িয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে। রোনালদো-বুফনদের একটু কি হিংসে হবে ফরাসি সেনসেশনকে দেখে?

কী চক্র? ফুটবলে ক্লাব আর জাতীয় দল—দুই জগতের দুই শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিসূচক ট্রফি। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ, আর ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ। ২০১৬-১৭ মৌসুমে মোনাকোর হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে আলো ছড়িয়েই প্রথম বিশ্বের নজরে আসা এমবাপ্পের। দুর্দান্ত সেই মোনাকোকে লিগ জিতিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে বুফনের জুভেন্টাসের কাছে হেরেই বাদ পড়ে সেমিফাইনালে। কতটা নজর কেড়েছিলেন এমবাপ্পে? চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইউরোপের কুলীন ক্লাবের সারিতে নাম লেখানোর স্বপ্নে বিভোর পিএসজি পরের মৌসুমে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে তো আনেই, মোনাকো থেকে নিয়ে আসে এমবাপ্পেকেও।

দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে এমবাপ্পের।
ফাইল ছবি

দুই মৌসুমে শেষ ষোলোতে বিদায়ের পর এবার স্বপ্নটা পূরণ হওয়ার খুব কাছে ২০১১ সাল থেকে কাতারি তেলে ধন্য ক্লাবটি। চক্র পূরণের খুব কাছে ফ্রান্সকে ২০১৮ বিশ্বকাপ জেতানোর পথে আলো ছড়ানো এমবাপ্পেও। রাশিয়ায় দুবছর আগের সেই বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন।

সেই বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের সঙ্গে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ওঠা পিএসজির একটা মিলও খুঁজে পাচ্ছেন এমবাপ্পে, ‘সত্যি বলতে, দুটির ক্ষেত্রেই আমাদের দলটা এমন ছিল যেখানে সবাই একে অন্যের ক্ষমতা সম্পর্কে জানত। দুর্বলতাগুলোও জানত। আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে বিশ্বকাপ জিততে পেরেছি। এখানে আরেকটি দারুণ দল আছে আমাদের। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে সতীর্থদের আমরা অনেক সম্মানের চোখে দেখি। আমরা ফাইনালে জিতব এটা তো আমি বলতে পারি না, তবে ওই ব্যাপারটি (সতীর্থদের সম্মানের চোখে দেখা) অবশ্যই সাহায্য করবে।’

এই মৌসুমে তাঁর এই ফাইনালে খেলা নিয়ে যদিও সংশয় ছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে আতালান্তার বিপক্ষে ম্যাচেই এমবাপ্পের খেলা নিয়ে সংশয়ের দেয়াল দাঁড় করিয়ে রেখেছিল এর দুয়েক আগে ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনালে পাওয়া চোট। লাইপজিগের বিপক্ষে কাল সেমিফাইনালে জয়ের পর যা নিয়ে এমবাপ্পে বলছিলেন, ‘সেঁত এতিয়েন (ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনালের প্রতিপক্ষ) ম্যাচের পর ভেবেছিলাম, বুঝি মৌসুমই শেষ! পুরো রাত কেঁদেছিলাম।’ কান্না ভুলে এখন তাঁর প্রতিজ্ঞা, ‘রোববার মাঠে আমি নিজেকে পুরো বিলিয়ে দেব। আমি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই!’

ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ না লিওঁ—কাকে চান, সে প্রশ্নে অবশ্য কোনো ভণিতা নেই এমবাপ্পের, ‘ফ্রেঞ্চ ক্লাব হওয়ায় লিওঁকেই বেশি চাইব। আমরা যদি ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ-কে মূল্যায়ন না করি, কে করবে? যদি বায়ার্ন আসে, ঠিক আছে, তবে লিওঁ হলে ফাইনালটা বিশেষ কিছু হবে।’

প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, ফাইনালে পিএসজির দারুণ কিছুর স্বপ্নে এমবাপ্পের পাশাপাশি, বা এমবাপ্পের চেয়েও বেশি, আরেকজনের ওপর পিএসজির যত ভরসা থাকবে—নেইমার। ব্রাজিলিয়ান সতীর্থকে নিয়ে বেশ উচ্চকণ্ঠ এমবাপ্পে, ‘আমাদের দুজনের অনেক কিছুই মিলে যায়। অনেক মজা করি আমরা। তবে এটাও বুঝি, নিজেদের দিকে সব মনোযোগ দিলে আমাদের চলবে না। জিততে হলে অন্যদের সাহায্যও লাগে।’