২২৩৮ কোটি খরচ করেও লিভারপুলের কাছে পাত্তা পেল না চেলসি

চেলসির জালে প্রথমবার বল জড়াচ্ছেন লিভারপুলের সাদিও মানে।ছবি: রয়টার্স

কাই হাভার্টজকে বায়ার লেভারকুসেন থেকে এনেছে ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ইউরো দিয়ে। লাইপজিগ থেকে টিমো ভের্নারকে এনেছে ৫৩ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৩০ লাখ ইউরোতে। এ দুজন আজ মাঠেই ছিলেন চেলসির জার্সি গায়ে। এই মৌসুমে দলে এনেছে চেলসি, কিন্তু আজ মাঠে নামতে পারেননি—এমন আরও দুজন ছিলেন। লেস্টার সিটি থেকে ৫ কোটি ইউরোতে আসা লেফটব্যাক বেন চিলওয়েল ও আয়াক্স থেকে ৪ কোটি ইউরোতে আসা প্লেমেকার হাকিম জিয়েশ।

সব মিলিয়ে এবারের দলবদলে চেলসির খরচ ২২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা চোখ কপালে তোলার মতোই, ২২৩৮ কোটি টাকা! এত খরচ করেও প্রথম বড় পরীক্ষায়ই ‘ফেল’ চেলসি। বোঝা গেল, এত খেলোয়াড় দলে এলেও দলটার সমন্বয় ঠিক হতে আরও সময় লাগবে। নিজেদের মাঠে আজ লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের বিপক্ষে নির্বিষ ফুটবলই খেলেছে চেলসি। সেটির সুবিধা নিয়েছে ইয়ুর্গেন ক্লপের চেলসি, আরও নির্দিষ্ট করে বললে সাদিও মানে। সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলেই আজ চেলসির মাঠ থেকে ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে লিভারপুল।

যে ৪৫ মিনিট খেলেছেন, তাতেই নিজের মান বুঝিয়ে দিয়েছেন থিয়াগো।
ছবি: এএফপি

প্রথমার্ধে দুই দল খারাপ খেলেনি, কিন্তু প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে গিয়ে আর সমন্বয়টা রাখতে পারেনি। এর মধ্যেও চেলসির স্ট্রাইকার ভের্নার দারুণ একটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। লিভারপুলের দাপটই বেশি থাকলেও তখন পর্যন্ত ফিরমিনো-মানেদের শেষ পাসটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না। যখন হলো, তখনই বিপদে চেলসি।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মাঝমাঠ থেকে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের দুর্দান্ত লম্বা পাস ধরতে গোলমুখে এগিয়ে যান মানে, তাঁর আগেই পাসটা ঠেকিয়ে দিতে গোলপোস্ট থেকে বেরিয়ে যান চেলসি গোলকিপার কেপা আরিসাবালাগা। কেপা তখনো বলের কাছে পৌঁছাননি, মানেও নন। দুজনের মধ্যে কে আগে বলের দখল পাবেন বোঝা যাচ্ছিল না, এর মধ্যেই মানেকে পেছন থেকে টেনে ধরেন চেলসি ডিফেন্ডার আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। আর যায় কোথায়! রেফারি প্রথমে হলুদ কার্ড দেখালেও ভিএআরে দেখে নিশ্চিত হন, গোলের পথে বাধা দেওয়ার দায়ে লাল কার্ডই প্রাপ্য ক্রিস্টেনসেনের। দশ জনের দল হয়ে পড়ে চেলসি।

সেটির ফায়দা এমনিতেই হয়তো তুলে নিতে পারত লিভারপুল, ক্লপ সেটি আরও বেশি নিশ্চিত করতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাঠে নামান থিয়াগো আলকানতারাকে। দুদিন আগেই বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ৩ কোটি ইউরোতে দলে এসেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার, সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মানা হয় যাঁকে। এই থিয়াগোকে পেতে কেন ক্লপ এত বেশি উন্মুখ ছিলেন, থিয়াগোও কেন ক্লপের সঙ্গে কথা বলার পর লিভারপুল ছাড়া আর কোনো ক্লাবে যেতে রাজি ছিলেন না, সেটি বোঝা গেল এরপর।

প্রতিটি পাসে নিজের মান বুঝিয়ে দিয়েছেন থিয়াগো, লিভারপুলের কাছে দ্বিতীয়ার্ধে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি চেলসি! থিয়াগো আসায় লিভারপুলের খেলায় নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে, আর এসেছে গোল। দুটি গোলই মানের। ৫০ মিনিটে প্রথম গোলটি তো চোখধাঁধানো! চেলসি বক্সের বাইরে মোহামেদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর দুর্দান্ত ওয়ান-টুর পর বল আসে ফিরমিনোর কাছে, বক্সের ডান দিক থেকে তাঁর ক্রসে দারুণ হেড মানের।

চার মিনিট পর দ্বিতীয় গোলটি ম্যাচজুড়ে লিভারপুলের অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতার প্রেসিং আর চেলসি গোলকিপার কেপার হাস্যকর ভুলের সমন্বয়ে। চেলসির রক্ষণ লিভারপুলের প্রেসিং সামলাতে না পেরে বল দেয় কেপার কাছে, কিন্তু পাস পাঠাতে দেরি করে ফেলেন কেপা। তাঁর পা থেকে বল বেরোতেই সেটি লাগে দারুণ ক্ষিপ্রতায় দৌড়ে আসা মানের পায়ে। বলটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জালে পাঠাতে মোটেও ভুল হলো না মানের।

যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে জর্জিনিও ভাইনালদাম দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া না করলে জয়টা আরও বড়ই হতো লিভারপুলের। চেলসিও অবশ্য সুযোগ পেয়েছিল একটা গোল ফেরত দেওয়ার। ৭৩ মিনিটে লিভারপুল বক্সে থিয়াগোর অনিচ্ছাকৃত আলতো ছোঁয়ায় পড়ে যান ভের্নার, পেনাল্টি পায় চেলসি। কিন্তু জর্জিনিওর নেওয়া সে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন লিভারপুল গোলকিপার আলিসন।

দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট এসেছে লিভারপুলের। আগের ম্যাচে লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে রক্ষণ ভুল করলেও এই ম্যাচে তা হয়নি। বরং চোটে মাতিপ-গোমেজদের অনুপস্থিতিতে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা ফাবিনিও দারুণ খেলেছেন ভার্জিল ফন ডাইকের পাশে, চেলসিকে কোনো সুযোগ দেননি। জালও অক্ষত রেখেছে লিভারপুল। প্রথম নেমেই দারুণ খেলেছেন থিয়াগো। সব মিলিয়ে ক্লপ খুশিই হবেন।

আর আগের ম্যাচে ব্রাইটনের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয়ের পথে প্রথমার্ধে ভোগা চেলসির কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড বুঝলেন, দলবদলে অনেক খরচ করলেও চেলসির ‘দল’ হয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় হয়তো লাগবে।