৩ কেজি চিংড়ি আর রোনালদো নামের গল্প

দুই রোনালদো। দুজনই রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি।ছবি : টুইটার

ফুটবল ইতিহাসে খুব কম খেলোয়াড়েরই রোনালদোর মতো প্রতিভা ছিল। ভ্রুকুটি নিষ্প্রয়োজন, এই রোনালদো পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নয়, তিনি জোসে মরিনিওর ‘আসল রোনালদো’। ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি।

ইতিহাসের অন্যতম সেরা তো বটেই, তর্কযোগ্যভাবে তিনি অনেকের চোখেই সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার। নিজের নাম রোনালদো হওয়ার পেছনের ঘটনা এত দিন পর জানালেন ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ ও এসি মিলানে খেলা সাবেক এই ফুটবলার।

রোনালদো—নামটা শুনলে অনেকেই মনে করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আবার ব্রাজিলেরই কিংবদন্তি মিডফিল্ডার রোনালদিনিওর আসল নাম ছিল রোনালদো দে অ্যাসিস মোরেইরা। শৈশবের ক্লাবে তিনি খেলোয়াড়দের মধ্যে গড়নে ও বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বলে এ নাম দেওয়া হয়েছিল।

আরেকটি তথ্যমতে, তখন ব্রাজিল দলে তারকাখ্যাতির শীর্ষে থাকা রোনালদোর ভীষণ ভক্ত ছিলেন রোনালদিনিও। সে কারণে ‘ছোট রোনালদো’ বোঝাতে এই নাম, যাঁর শেষ অংশটুকুর (ইনিও) অর্থ ‘ছোট’।

২০০২ বিশ্বকাপের এই চুলের ছাঁট নিয়ে এখন অনুশোচনা হয় রোনালদোর।
ছবি: সংগৃহীত

ফুটবল ইতিহাসে এই তিন খেলোয়াড়ই সর্বকালের সেরাদের কাতারে থাকবেন। নাম যেহেতু প্রায় একই, তাই সাবেক রিয়াল স্ট্রাইকারের নামের রহস্য জানতে চাওয়া হয়েছিল ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’-এর নেওয়া সাক্ষাৎকারে।

ব্রাজিলের হয়ে ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি জানালেন, তাঁকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলেন যে চিকিৎসক, তাঁর নামে নাম রাখা হয়েছিল, ‘চিকিৎসক বিনা পয়সায় কাজটা করেন, কারণ আমার মা–বাবার ফি দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমার বাবা তাঁকে তিন কেজি চিংড়ি কিনে দিয়েছিলেন এবং মা–বাবা সেই চিকিৎসকের নামে আমার নাম রেখেছিলেন।’

রোনালদোর ক্যারিয়ারের শীর্ষবিন্দু ২০০২ বিশ্বকাপ। সর্বোচ্চ ৮ গোল করে শিরোপা জিতিয়েছিলেন ব্রাজিলকে। সেই বিশ্বকাপে জার্মানির গোলরক্ষক অলিভার কানকে ফাঁকি দিতে পেরেছিলেন শুধু দুজন খেলোয়াড়—আয়ারল্যান্ডের রবি কিন ও রোনালদো। ফাইনালে জোড়া গোল করেন ‘ফেনোমেনন’।

নিজের ক্যারিয়ারের সব গোল রোনালদোর কাছে সন্তানের মতো হলেও সে বিশ্বকাপ ফাইনালের জোড়া গোল আলাদা গুরুত্ব বহন করে তাঁর কাছে, ‘সব গোলই আমার কাছে সন্তানের মতো। তবে ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে জোড়া গোল দুটির তাৎপর্য আলাদা। সেগুলো হয়তো খুব সুন্দর ছিল না, তবে গুরুত্ব ছিল অনেক। এর দুই বছর আগে কেউ বিশ্বাসই (চোটের কারণে) করত না আমি আবারও ফুটবল খেলতে পারব। কিন্তু বিশ্বকাপ জিতি ও সর্বোচ্চ গোলদাতা হই। ওই গোল দুটি বুঝিয়ে দেয় আগের দুটি বছর কত খেটেছিলাম।’

জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে চুলে অদ্ভুত ছাঁট দিয়েও আলোচনায় এসেছিলেন রোনালদো। আলোচনা ও সমালোচনা দুটিই কুড়ান। এত দিন পর তা নিয়ে রোনালদোর উপলব্ধি, ‘ওটা ভয়ংকর ছিল। যেসব শিশু ওই ছাঁট দেখে চুল কেটেছে, তাদের মায়েদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

২০১৮ সালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল ভায়োদোলিদের বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেন রোনালদো। এরপর থেকে ক্লাবটি নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।