৩ সেলাই ও ফাটা দাগের এক বছর

মাথা ফেটে গিয়েছে, ব্যান্ডেজ বাঁধা, কিন্তু গতবছর এই দিনে কলকাতায় ইয়াসিনই ছিলেন ভারতের বিপক্ষে বড় নির্ভরতা।ছবি: টুইটার

‘গত বছর এই দিনটার কথা মনে আছে?’

প্রশ্নটি পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই কড়া ডিফেন্ডারের ভঙ্গিতে ইয়াসিন খানের জবাব, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের কথা বলছেন তো? আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ। আমার তো কপালও ফেটে গেল...।’ হেঁয়ালি ফুটবলার হিসেবে ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের পরিচিতি আছে। তবে গত বছর আজকের এই দিনে কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের কথা কী আর ভুলতে পারেন তিনি!

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ে চার ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের অর্জন মাত্র এক পয়েন্ট। সেটি এসেছিল এক গোলে এগিয়ে থেকে জিততে জিততে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে। অনেক ফুটবল প্রেমীর দৃষ্টিতে এই ম্যাচটি নিকট অতীতে বাংলাদেশের ফুটবল দলের অন্যতম সেরা ম্যাচ। এমন ম্যাচে কিনা বাংলাদেশের জার্সিতে একমাত্র গোলদাতা সাদউদ্দিনের চেয়েও বেশি আলোচনায় এসেছিলেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন।

মাথায় ব্যান্ডেজ পরেই ইয়াসিন ছিলেন রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী।
ছবি: টুইটার

ম্যাচের শুরুতে কপাল ফেটে যাওয়া ও পরবর্তীতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে পুরো ম্যাচ শেষ করেন এই সেণ্টারব্যাক। ইয়াসিনের মাথায় ব্যান্ডেজের সেই ছবি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেউ কেউ প্রোফাইল পিকচারেও রাখে। ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন? ম্যাচের পর দিন এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াসিন বলেছিলেন, ‘আমি ফেসবুক খুব বেশি ব্যবহার করি না। তাই তেমন দেখা হয় না।’ইয়াসিন যেন সেদিন পর্দা কাঁপানো অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী! কলকাতার ফাটা কেষ্ট চলচ্চিত্রে তাঁর সেই আলোচিত সংলাপ, ‌‘আমি খবর দেখি না, খবর পড়ি না, খবর তৈরি করি।’

ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় ফরোয়ার্ডের সঙ্গে হেডে লাফিয়ে ওঠে কপাল ফেটে যায় ইয়াসিনের। ক্ষণিকের জন্য মাঠ থেকে বের হয়ে সাদা ব্যান্ডেজে আবার মাঠে ফিরে আসেন। নিলেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র নিয়ে বাংলাদেশ মাঠ ছাড়লেও ইয়াসিনের লড়াই প্রশংসা পেয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় সবারই জানা। কিন্তু দেশে ফেরার পর সেই ফাটা কপালে যে তিনটি সেলাই পড়েছিল, সেই গল্পটা হয়তো জানা নেই অনেকের। শুধু তাই নয়, ইয়াসিনের কপালে এখনো আছে সেই দাগ।

কলকাতার যুব ভারতী ব্রীড়াঙ্গনকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল সাদের গোল।
ছবি: এএফপি

সেই সেলাইয়ের গল্পটা শোনালেন ইয়াসিন, ‘কপাল ফাটার পর মাঠে ব্যান্ডেজের ভেতরে নেট জাতীয় কী একটা জিনিস লাগিয়ে দিয়েছিল। সেটা পরেই খেলেছি। দেশে ফিরে ক্লাবে গোসল করতে গিয়ে দেখি কপালের ভ্রুর ওখানে হা হয়ে আছে। পরে হাসপাতালে গেলে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়। সেখানে আর ভ্রুর চুল উঠেনি। সেই দাগ এখনো বড় হয়ে আছে।’

সেদিন ভারতীয় ফরোয়ার্ড সুনীল, মানভিরদের পা থেকে অনেকবারই বল কেড়ে নেন ইয়াসিন। নিখুঁত ট্যাকল, সঙ্গে দুর্দান্ত কভারিং। আর দুই প্রান্ত থেকে ভারতের ভয় ধরানো সব ক্রস যখন ভেসে আসে বক্সে, তখন চোখে পড়েছে তাঁর দূরদর্শিতা। সঙ্গে লড়াকু মনোভাব এবং সাহস। ডিফেন্ডারদের খেলার মধ্যেও যে একটু সৌন্দর্য থাকে তা ইয়াসিনের প্রতিটা ট্যাকলে ফুটে ওঠে।

ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটা শেষপর্যন্ত জেতা হয়নি বলে আফসোস হয় ইয়াসিনের।
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচের শুরুতেই হেডে উঠে কপাল ফাটিয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়া, ব্যান্ডেজ পরে ফিরে আসা, আবার বের হয়ে যাওয়া, কয়েক মিনিট পর আবার মাঠে ফেরা। ইয়াসিন থিতুই হতে পারছিলেন না মাঠে। সেদিন মাঠে ফেরার সিদ্ধান্তটি ছিল কার? ইয়াসিন বলেন ‘কোচ আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করেছিল বদলি কাউকে পাঠাবে কিনা? আমি বলেছি “আমি পারব। ” শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দিয়ে খেলেছিও।’

ম্যাচটি জিততে পারেননি বলে এখনো কষ্ট তাঁর, ‘আসলে আমাদের জেতা উচিত ছিল। কীভাবে যে শেষ দিকে গোলটা খেয়ে গেলাম।’ তবে সেই কষ্টটা দূর হতে পারে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে জিতলে। আগামী বছর প্রথম দিকে ম্যাচটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে দিকেই তাকিয়ে ইয়াসিন। সঙ্গে পুরো বাংলাদেশ দলও।