৩ হাজার কোটির রক্ষণে আরও ৯০০ কোটির ডিফেন্ডার চাই গার্দিওলার

আরেক ডিফেন্ডার কেনার পরিকল্পনা গার্দিওলার?ছবি: রয়টার্স

প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো খরচের দিক দিয়ে কখনো কম যায় না। কিন্তু অন্যকে খোঁচা যখন মারতে হয় তখন যেন এই খরচের অঙ্কটাই হয়ে ওঠে বড় অঙ্ক।

কদিন ধরে চেলসির কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ও লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপের মধ্যে পরোক্ষ কথার লড়াই চলছে দলবদলের খরচ নিয়ে। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে দলবদলে খরচের অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি ওঠে, সেই পেপ গার্দিওলা বুঝি আরেকবার পড়তে যাচ্ছেন সমালোচনায়। স্প্যানিশ দৈনিক এএসের খবর সত্যি হলে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ যে আবারও বড় অঙ্কের চেক নিয়ে নামছেন দলবদলে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচ করতে যাচ্ছেন এক ডিফেন্ডারের পেছনে।

আতলেতিকোর জার্সিতে হিমেনেজ।
ছবি: এএফপি

এএসের খবর, আতলেতিকো মাদ্রিদের সেন্টারব্যাক হোসে মারিয়া হিমেনেজকে চান গার্দিওলা। ২৫ বছর বয়সী উরুগুইয়ানের জন্য আতলেতিকোকে এরই মধ্যে ৮৯ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৯০ লাখ ইউরোর প্রস্তাবও নাকি দিয়েছে সিটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৮৯৬ কোটি টাকারও বেশি! সঙ্গে চুক্তিতে আরও কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৫০ লাখ ইউরো দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে। কিন্তু আতলেতিকো এখনো রাজি নয় বলেই জানাচ্ছে এএস। সিটির প্রস্তাবের জবাবে আতলেতিকো হিমেনেজের চুক্তিতে ১২ কোটি ইউরোর বাইআউট ক্লজের অঙ্কটা (আতলেতিকোর ইচ্ছার বাইরে হিমেনেজকে নিতে চাইলে আগ্রহী ক্লাবকে যে অর্থ খরচ করতে হবে) দেখিয়ে দিয়েছে।

দলবদলটা বাজারে এবার এরই মধ্যে ২৮ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো দিয়ে বোর্নমাউথ থেকে ডাচ ডিফেন্ডার নাথান আকেকে সিটিতে নিয়ে এসেছেন গার্দিওলা। ফুটবলে দলবদলের মূল্য নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেটের হিসেব অনুযায়ী সিটির রক্ষণে মোট ১৩ জন খেলোয়াড় আছেন, সবার বর্তমান বাজার মূল্য যোগ করলে অঙ্কটা দাঁড়ায় ২৮৮.৭০ মিলিয়ন বা ২৮ কোটি ৮৭ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোই—২৯০৭ কোটি টাকারও বেশি!

গত মৌসুমে লম্বা সময় লাপোর্তের না থাকা ভুগিয়েছে সিটিকে।
ছবি: সংগৃহীত।

ট্রান্সফারমার্কেটের হিসেবে সিটির যে ১৩ জন ডিফেন্ডার দেখানো হচ্ছে, এদের মধ্যে শুধু চারজনই গার্দিওলার আমলে কেনা নয়। তোসিন আদারাবাইয়ো, টেইলর হারউড-বেলিস ও এরিক গার্সিয়া পাশ করেছেন সিটির একাডেমি থেকে। আর নিকোলাস ওতামেন্দি সিটিতে এসেছেন ২০১৫ সালে, গার্দিওলা সিটির ডাগআউটে আসার এক বছর আগে। এর বাইরে গার্দিওলা এসে যে বুড়িয়ে যাওয়া রক্ষণ পেয়েছিলেন, সেটিকে বদলাতে সিটিতে নিজের দ্বিতীয় মৌসুম থেকেই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে একে একে এনেছিলেন জন স্টোনস, কাইল ওয়াকার, বেঞ্জামিন মেন্দি, এমেরিক লাপোর্ত, জোয়াও কানসেলো, নাথান আকেকে। সঙ্গে অল্প দামে কেনা ফিলিপে স্যান্ডলার, ওলেক্সান্দার জিনচেঙ্কোরা তো আছেনই।

এত ডিফেন্ডার কিনেও যেন কিছুতেই দলের রক্ষণটাকে ঠিক করতে পারছেন না গার্দিওলা। গত মৌসুমে এক লাপোর্ত মৌসুমের অনেকটা সময় চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকায় ভুগতে হয়েছে সিটিকে। লিভারপুলের কাছে সিটির লিগ হাতছাড়া হওয়ার একটা বড় কারণ লাপোর্তের চোটই। স্টোনসও মৌসুমের বেশিরভাগ সময় এই চোট-ওই চোটেই পড়ে থাকেন। সে কারণেই এবার আকেকে তো এনেছেনই, এখন হিমেনেজের দিকেও চোখ পড়েছে গার্দিওলার।

এএস লিখেছে, দলের আক্রমণ যতটা দুর্দান্ত, রক্ষণ ততটা নয় বলেই বারবার চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে গার্দিওলার। সে কারণেই বিশ্বমানের আরেকজন সেন্টারব্যাক খুঁজছেন সিটি কোচ। সিটির ক্রীড়া পরিচালক চিকি বেগিরিস্তাইন এরই মধ্যে আতলেতিকোর প্রধান নির্বাহী মিগেল আনহেল গিল মারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। এএস লিখেছে, ৮৯ মিলিয়ন ইউরো হিমেনেজের ‘বাইআউট ক্লজে’র চেয়ে অনেক কম হলেও করোনাকালীন ক্ষতি পোষাতে প্রস্তাবটাতে রাজি হয়েও যেতে পারে আতলেতিকো।

হিমেনেজ নিজে আতলেতিকোতে ভালোই আছেন বলে জানাচ্ছে এএস। তবে সিটির প্রস্তাবটা তাঁর জন্য লোভনীয়। তাঁকে ক্লাবে থাকতে রাজি করাতে চেষ্টা করবেন আতলেতি কোচ দিয়েগো সিমিওনে, এমনই জানাচ্ছে এএস। কিন্তু গত মৌসুমে আতলেতিকো থেকেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রিকে ৭ কোটি ইউরোতে নিয়ে গিয়েছিল সিটি। তখন রদ্রিকে অনেক বুঝিয়েও ক্লাবে থাকতে রাজি করাতে পারেননি সিমিওনে। এবার হিমেনেজের বেলায় পারবেন?