৩০ বছর পুরোনো অভিশাপ কাটাতে পারবেন জিদান?

জিদানকে এবার নতুন করে ভাবতে হবে।ছবি: রয়টার্স

হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, আধুনিক যুগে একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদই এমন কিছু করে দেখাতে পেরেছে। টানা তিন শিরোপা দূরে থাক, নাম বদলে যাওয়ার পর টানা দুই বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার কীর্তিই কেউ করে দেখাতে পারছিল না। জিনেদিন জিদানের অধীনে সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করে দেখিয়েছে রিয়াল। যা নিকট ভবিষ্যতে কেউ করে দেখাতে পারবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ আছে।

ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা শেষ হয়ে স্পেনে ফিরলেই মনটা খারাপ হয়ে যাবে রিয়াল সমর্থকদের। লস ব্লাঙ্কোরা শেষ কবে টানা দুবার লিগ জিতেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে নব্য সমর্থকদের মাথা চুলকাতে হবে। আর পুরোনোরা হতাশ হয়ে রোমন্থন করবেন সে সময়কার কথা, যেবার বার্সেলোনার কাছ থেকে গার্ড অব অনার আদায় করে নিয়েছিলেন রাউল-ক্যাসিয়াসরা। ২০০৮ সালের পর রিয়াল আর কখনো টানা দুবার লিগ জেতেনি। জিদান কি পারবেন এবার সে ধারা ভাঙতে?

জিদানের জন্য কাজটা আরও কঠিন। কারণ, রিয়ালের টানা দুই লিগ শিরোপা জেতার রেকর্ড তো এক যুগ পেছালেই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু, রিয়ালের হয়ে সর্বশেষ কোনো কোচের টানা দুই লিগ জেতার ইতিহাস যে তিন দশকেরও বেশি পুরোনো। রিয়াল একাডেমির পাঁচ রত্ন ‘লা কুইন্তা দেল বুইত্রে’র সুবাদে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত অন্য কোনো দলকে লা লিগা জিততে দেয়নি রিয়াল। এর মাঝের তিন বছর দলটির কোচ ছিলেন লিও বেনহাকার। এই ডাচ ভদ্রলোক ১৯৮৭,৮৮ ও ৮৯ এর লিগ জিতে রিয়ালের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন। ক্লাবটির ইতিহাসে বেনহাকারই টানা লিগ জেতা কোচ হয়ে আছেন।

আজ রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে জিদানের। নতুন বছরে বলতে গেলে পুরোনো দল নিয়েই নামতে হচ্ছে তাঁকে। এবারের দলবদলে এখনো কোনো নতুন খেলোয়াড় কেনেনি রিয়াল, কেনার কথাও না। কারণ, গত মৌসুমেই লিগ জেতার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, কোনো নতুন খেলোয়াড় আনা হবে না। সর্বশেষ কোনো ক্লাব এভাবে ঘোষণা দিয়ে নতুন খেলোয়াড় না নেওয়ার কথা দিয়েছে কি না সেটা নিয়ে কৌতূহল জাগতে পারে এবং সে কথা কতটি দল রাখতে পারে সেটা নিয়েও আগ্রহ জাগতে পারে। বিস্ময়করভাবে রিয়াল সে কথা মেনে এ মৌসুমে শুধু খেলোয়াড় বিক্রিতেই মন দিয়েছে। নতুন মুখ বলে যদি কাউকে পরিচয় করিয়ে দিতেই হয়, সেটি মার্টিন ওডেগার্ডের। গত মৌসুমে আজকের প্রতিপক্ষ সোসিয়েদাদের জার্সিতেই খেলা নরওয়েজিয়ান মিডফিল্ডার রিয়ালের জন্য কিন্তু নতুন কেউ নন। ২০১৫ সালেই রিয়ালের ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয়ে গেছে তাঁর।

এখনো রামোস-মদরিচই দলের মূল ভরসা।
ছবি: টুইটার

জিদান তাই নতুন কোনো খেলোয়াড় হাতে পাচ্ছেন না উল্টো গ্যারেথ বেল ও হামেস রদ্রিগেজের মতো দুজন খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়েছেন। গত মৌসুমে যতই বেঞ্চে বসে থাকুন না কেন, এমন বিশ্বমানের দুজন খেলোয়াড় একটু হলেও লিগ যাত্রায় অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু বরাবরই ‘ম্যান ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত জিদান, তারকা ধরে রাখার চেয়ে সন্তুষ্ট ড্রেসিংরুম ধরে রাখার পক্ষে। ড্রেসিংরুম সামলাতে জানেন বলেই টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পেরেছেন জিদান। আর সে কারণেই তাঁর ট্যাকটিক্যাল দক্ষতা আড়ালে পড়ে যায়।

গত মৌসুমে অবশ্য নিজের ট্যাকটিক্যাল দিকটাও দেখিয়েছেন রিয়াল কোচ। রিয়ালে প্রথম যাত্রায় তাঁর মূল অস্ত্র ছিল আক্রমণ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তো ছিলেনই, সে সঙ্গে বেনজেমা, বেলরা গোল নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তায় পড়তে দেননি তাঁকে। বেঞ্চ থেকে মোরাতা, রদ্রিগেজ, ইসকো কিংবা আসেনসিও তাঁকে নিশ্চিন্তে রেখেছিলেন। তাই তাঁর খেলার মন্ত্রই ছিল ‘প্রতিপক্ষের চেয়ে এক গোল বেশি করব’। টানা গোল করার ইউরোপিয়ান রেকর্ডটিও চলে গিয়েছিল রিয়ালের দখলে।

দ্বিতীয় দফা রিয়ালের দায়িত্ব নিয়েই বিপদে পড়েছেন জিদান। রোনালদো তো তাঁর দেখা দেখি ক্লাব ছেড়ে দিয়েছেন ২০১৮ সালেই। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া শূন্যস্থান কেউ পূরণ করেননি। এক করিম বেনজেমাই লড়ছিলেন। আর অগতির গতি হয়ে সার্জিও রামোস পেনাল্টির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় লিগ জেতার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে নেমেছিলেন জিদান। যেহেতু দলের গোল ভরসা মাত্র একজন, তাই লিগ জেতার জন্য জিদানের এবারের পাঠ ছিল ‘গোল হজম না করা’র। রক্ষণে মার্সেলোর পরিবর্তে ফারলাঁ মেন্দি এলেন। মাঝমাঠে ফেদেরিকো ভালভের্দেকে দিয়ে প্রতিপক্ষের মাঝমাঠকে তটস্থ রাখার ব্যবস্থা করছেন। দলের উইঙ্গারদের ভূমিকাও বদলাল। তারকা গ্যারেথ বেল কিংবা এডেন হ্যাজার্ড হলেও লাভ নেই তরুণ ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোর মতোই জানপ্রাণ দিয়ে রক্ষণে সাহায্য করতে হবে। মাঝমাঠের আগেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামিয়ে দিতে হবে।

রিয়ালের এমন খেলার ধরন সাফল্য পেয়েছে বললে কম বলা হয়। প্রতিপক্ষ আক্রমণের জায়গা পায়নি, ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। লিগে বক্সের বাইরে থেকে কোনো গোল খায়নি রিয়াল। আবার বার্সেলোনার চেয়ে ১৬ গোল কম করেও লিগ জিতে নিয়েছে। লিগে মাত্র ২৫ গোল হজম করেছে তারা, জমাট রক্ষণের জন্য বিখ্যাত আতলেতিকো মাদ্রিদও তাদের চেয়ে ২ গোল বেশি খেয়েছে।
জিদানের জন্য দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো, এ মৌসুমেও একই পথে হাঁটা সম্ভব নয়। প্রায় একই দল নিয়ে মাঠে নামার সুবিধা হলো, দলের রসায়ন নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না। কিন্তু অসুবিধার দিক হলো, এই দলের সবার বয়সই কিন্তু এক বছর বেড়ে যায়। সার্জিও রামোস, লুকা মদরিচ, বেনজেমা—কারওরই বয়স কমছে না। বরং মাঠের তিন প্রান্তেই মধ্য ত্রিশের কাছাকাছি তিনজনের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে জিদানকে। তাই এ মৌসুমে নতুন কিছু করে দেখাতেই হবে ফরাসি কিংবদন্তিকে।

জিদানের পছন্দের একাদশ কী, এ নিয়ে পূর্বানুমান করাটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। গত মৌসুমেই তো একটি তথ্য জানা গিয়েছিল—রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারে ২০৪ ম্যাচের ১৮০টিতেই ভিন্ন একাদশ নামিয়েছেন জিদান। তবু মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এ মৌসুমে রিয়ালের ফরমেশন, মূল একাদশ কেমন হতে পারে এ নিয়ে আলোচনা করার ঝুঁকি নেওয়াই যায়।
কোর্তোয়াকে হটিয়ে মূল গোলরক্ষক হওয়া আপাতত সম্ভব নয় লুনিনের পক্ষে।
ছবি: টুইটার

রিয়ালের গোলবার
গত মৌসুমে তাঁকে নিয়ে ওঠা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন থিবো কোর্তোয়া। দুঃস্বপ্নের ২০১৮-১৯ মৌসুম ভুলে এক দশক পর রিয়ালের কোনো গোলরক্ষক হিসেবে জিতেছেন লিগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। এ মৌসুমেও গোলবার সামলাবেন কোর্তোয়া।

তাঁর জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই, তবে এবার কোর্তোয়ার কপালে বাড়তি বিশ্রাম জুটতে পারে। ক্লাবের ভবিষ্যৎ হিসেবে দুই মৌসুমে আগে কেনা হয়েছিল আন্দ্রি লুনিনকে। এত দিন ধারে সময় পার করা এই ইউক্রেনীয় গোলরক্ষককে এ মৌসুমে অন্তত কাপের ম্যাচগুলোতে দেখা যাবে।

রক্ষণ
দলের এই অংশে জিদান চাইবেন গত মৌসুমের সবকিছু অবিকল নকল করে নিতে। শুধু একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে জিদানকে, বাঁচা মরার ম্যাচগুলোতে যেন রামোসের উপস্থিতি নিশ্চিত থাকে। টানা দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে থেকে রিয়ালের বাদ পড়ার ম্যাচে রামোস অনুপস্থিত ছিলেন। আর সে ম্যাচগুলোতেই নেতৃত্ব কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা টের পেয়েছে দল। এ মৌসুমেও জিদানের পছন্দের রক্ষণভাগ চার ডিফেন্ডারকে নিয়েই গড়া হবে। আর সেটা হবে দানি কারভাহাল-রাফায়েল ভারানে-রামোস-মেন্দি। গত মৌসুমের মতো এ মৌসুমেও লেফটব্যাক হিসেবে মার্সেলো দ্বিতীয় পছন্দ থাকবেন। রাইটব্যাকেও কারভাহালকে হটানোর মতো কেউ নেই। আলভারো ওদ্রিওজোলাকে তো গত মৌসুমে মাঝ পথেই ধারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সুবাদে একটি ট্রেবল জেতার স্বাদও পেয়েছেন স্প্যানিশ রাইট ব্যাক। কিন্তু কারভাহালকে টপকে তাঁর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

সেন্টারব্যাকেও রামোস-ভারানে জুটি ভাঙার কেউ নেই। এদের মিলিতাও এ মৌসুমে আরও বেশি সুযোগ পাবেন সন্দেহ নেই, কিন্তু এই ব্রাজিলিয়ানকে এবারও বেঞ্চেই দিন পার করতে হবে বেশি। নাচোর ভাগ্যেও তাই লেখা আছে। এ মৌসুমে জিদানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুই ফুলব্যাকের কাছ থেকে আরও বেশি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করা। গতবার রক্ষণ জমাট করতে গিয়ে দুই ফুলব্যাকের ডানা অনেকটাই ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল। এক সময় দুই উইং থেকে একের পর এক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করা রিয়াল গত মৌসুমে তিন ফুলব্যাক থেকে মোটে ৩ গোল পেয়েছে। এ তিনজন গোলে সহায়তা করেছেনও মাত্র ১৪ বার। অন্য কোনো দল বা ফুলব্যাকদের জন্য সংখ্যাটা মন্দ নয় কিন্তু, কারভাহাল-মার্সেলোদের সেরা সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা নেহাত কম।

মধ্যমাঠ
নিঃসন্দেহে রিয়ালের সবচেয়ে শক্তির জায়গা। টনি ক্রুস ও কাসেমিরো তো প্রতিদিন নামার লাইসেন্স পেয়েই গেছেন। বাকি স্থানটির জন্য গত মৌসুমে লড়াই হয়েছে বেশ। প্রথমভাগে বিস্ময়করভাবে মদরিচকে পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন তরুণ ভালভের্দে। কখনো ফিটনেস , কখনো ফর্মের কারণে ইসকো নিয়মিত হতে পারেননি। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করার কাজটা ক্রুস-মদরিচরা ভালো পারলেও দলকে গোলের দিক থেকে খুব বেশি সহযোগিতা করতে পারেননি তাঁরা। এ মৌসুমে সে দুর্বলতা কাটাতেই এক মৌসুম আগেই ডেকে পাঠানো হয়েছে ওডেগার্ডকে। করোনাবিরতির আগে লিগে মেসি ও বেনজেমার পর সেরা খেলোয়াড় বিবেচিত হয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার।

তবে জিনেদিন জিদান চারজনের মিডফিল্ড সাজান নাকি তিনজনের; এর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। কারণ, ক্রুস-কাসেমিরোর জায়গা আগেই নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় খেলায় সৃষ্টিশীলতা সৃষ্টির কাজটা বাকি মিডফিল্ডারের ঘাড়েই পড়বে।

তিনজনের মিডফিল্ডে মদরিচ, ইসকো, ভালভের্দে ও ওডেগার্ডের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার কাজটা বেশ কঠিন। আবার মদরিচের সৃষ্টিশীলতা ভালভের্দেকে দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। ভালভের্দের মাঠ জুড়ে খেলার ক্ষমতা আবার এখন মদরিচের পক্ষ থেকে বের করা কঠিন। ইসকোকে ৪-৩-৩ ফরমেশনে উইঙ্গার হিসেবে খেলানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে গত মৌসুমে। কারণ, ডান প্রান্তে খেলতে পারেন না ইসকো। তাঁর সেরাটা বের করতে হলে চার মিডফিল্ডারের ডায়মন্ড ফরমেশনই প্রয়োজন হয়। ওদিকে ওডেগার্ডের সেরাটা বের করে নিতে চাইলে নিজের পছন্দের ফরমেশনে বদল আনতে হবে জিদানকে। তবে জিদান গত মৌসুমে পাঁচজন মিডফিল্ডার নিয়েও মাঠে নেমেছিলেন। তাই মাঝমাঠেই যত কারিকুরি দেখাতে হবে কোচকে।

গোলের জন্য সেই বেনজেমাকেই ভরসা মানছেন জিদান।
ছবি: রয়টার্স

আক্রমণভাগ
জিদানের সবচেয়ে দুশ্চিন্তার জায়গা। দলে স্ট্রাইকার কিংবা উইঙ্গারের অভাব নেই। কিন্তু গোল করার লোক নেই। করিম বেনজেমা আছেন, মূল স্ট্রাইকারের বদলি হিসেবে আছে লুকা ইয়োভিচ, মারিয়ানো দিয়াজ ও বোর্হা মায়োরাল! জিদানের পছন্দের ৪-৩-৩ ফরমেশনের জন্য উইঙ্গার প্রয়োজন, সেটারও কমতি কই! ব্রাহিম দিয়াজ, তাকেফুসো কুবোকে ধারে পাঠানোর পরও দলে আছেন এডেন হ্যাজার্ড, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, মার্কো আসেনসিও, লুকাস ভাসকেজ। এত এত সব নামের পরও রিয়ালকে এক বেনজেমার দিকেই তাকিয়ে থাকবে হবে। প্রাক মৌসুমে গেতাফের প্রায় ‘বি’ দলের বিপক্ষে ৬ গোল করেছিল রিয়াল। সে ম্যাচেও বেনজেমানির্ভরতা টের পাওয়া গেছে। চারটি গোলই ছিল ফরাসি স্ট্রাইকারের।

গত মৌসুমে ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কেনা ইয়োভিচের পূর্ণ ব্যবহার করেননি জিদান। প্রায় ম্যাচেই গোলখরায় ভোগা জিদান বেনজেমাকে মাঠ থেকে তোলার সাহস দেখাতে পারেননি, আবার ইয়োভিচও একা যেদিন নেমেছেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ইয়োভিচ যে ধরনের স্ট্রাইকার, তাতে একা খেলতে পছন্দ করেন না। তাঁর সেরাটা বের করতে চাইলে মাঠে আরও একজন স্ট্রাইকার দরকার হয় যিনি প্রতিপক্ষের রক্ষণের মনোযোগ কেড়ে নেন। রোনালদোর জন্য বেনজেমা ঠিক সে কাজটাই করতেন। কিন্তু জিদান এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচে বেনজেমা ও ইয়োভিচকে শুরু থেকে নামাননি। ৪-৩-৩ ফরমেশনে দুজন ফরোয়ার্ডকে নামালে দলের ভারসাম্য নষ্ট হয় বলেই এটা করতে পারছেন না জিদান। আবার যেদিন ৪-৪-২ ফরমেশনে নেমেছেন, সেদিন বেনজেমার সঙ্গে হ্যাজার্ডকে নামানো হয়েছিল।

এ মৌসুমেও ইয়োভিচকে খুব বেশি ব্যবহারের ইচ্ছা নেই জিদানের। এর চেয়ে বোর্হা মায়োরালকেই বেশি ব্যবহারের ইচ্ছা জিদানের। এই স্ট্রাইকারও অনেকটা বেনজেমার মতো, শুধু গোল করা নয়, খেলা তৈরিতেও মনোযোগ থাকে। ফলে জিদানের তাঁকেই বেশি পছন্দ হয়েছে। ওদিকে মায়োরালের মতোই রিয়াল একাডেমির সাবেক ছাত্র মারিয়ানো আছেন মহাবিপদে। গত মৌসুমে প্রথমবার মাঠে নামার এক মিনিটের মধ্যেই গোল করেছিলেন, সেটাও বার্সেলোনা বিপক্ষে। কিন্তু তবু তাঁকে পছন্দ নয় জিদানের। পুরোপুরি ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’ মারিয়ানো জিদানের খেলার সঙ্গে ঠিক যান না।

উইঙ্গারের দিক থেকেও বিপদে আছেন জিদান। রিয়ালে যাওয়াটা তাঁর স্বপ্ন এটা অনেক দিন ধরেই জানিয়েছেন হ্যাজার্ড। এখন মনে হচ্ছে, স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাওয়ায় আর খেলার আগ্রহ পাচ্ছে না। গত মৌসুমেও ৫ কেজি বেশি ওজন বাড়িয়ে এসেছিলেন। এক বছরে চোট কাটাতেই পার করেছেন, মাত্র এক গোল করেছেন। গোল বানিয়ে দেওয়ার সংখ্যাও হাতে গোনা। এ মৌসুমও শুরু করেছেন বাড়তি ওজন ও চোট নিয়ে। ফলে আবারও লিগের শুরুতেই হ্যাজার্ডকে পাওয়া হচ্ছে না জিদানের। ব্রাজিল থেকে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে রিয়ালে যাওয়া ভিনিসিয়ুস মাঠের সর্বত্র দুর্দান্ত খেললেও গোলের সামনে এসে দিশা হারিয়ে ফেলেন। ওদিকে রদ্রিগো গোলের সামনে মাঠা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারলেও তাঁকে তাঁর প্রিয় বাঁ উইংয়ে খেলাতে পারছেন না জিদান। সেখানে যে এরই মাঝে হ্যাজার্ড ও ভিনিসিয়ুস আছে। প্রায় এক মৌসুম চোটের কাছে হারিয়ে ফেলা আসেনসিও আবার চোট পেয়েছেন।

উইঙ্গারের অভাব নেই রিয়ালের, কিন্তু গোল করতে পারছেন না কেউই।
ছবি: টুইটার

দলের ফরমেশন
এত এত উইঙ্গার নিয়ে ৪-৩-৩ ফরমেশন নিয়েই নামার কথা ছিল জিদানের। হাজার হলেও তাঁর প্রিয় ফরমেশনও এটা। কিন্তু উইঙ্গারদের কাছ থেকে নিয়মিত গোল পাচ্ছেন না না জিদান। হ্যাজার্ডও আবার চোট পেয়েছেন। ফলে অন্তত প্রথম ম্যাচে এ ফরমেশন দেখার সম্ভাবনা কম। চার মিডফিল্ডার নিয়েই নামবে রিয়াল। কিন্তু গত মৌসুমে জিদান খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছেন রক্ষণ দিয়ে লিগ জেতা সম্ভব হলেও আক্রমণের ধার কত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক সময় রোনালদো ও বেলের মতো খেলোয়াড় দিয়ে উইং সাজানো জিদানের হাতে আছে তরুণ ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো কিংবা চোটাক্রান্ত হ্যাজার্ড-আসেনসিও।

ওদিকে মাঝমাঠে মদরিচ, ইসকো কিংবা ওডেগার্ডদের সেরাটা বের করে গোল বাড়াতে চাইলেও ৪-৩-৩ ফরমেশন ব্যবহার করা কঠিন। তাই মৌসুমের শুরুতে ৪-৩-১-২ ফরমেশন দেখার সম্ভাবনাই বেশি রিয়ালের খেলায়।