৩৪ বছরের মধ্যে এমন বিপর্যয় দেখেনি রিয়াল

ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে জিদান দেখলেন দলের বিপর্যয়।ছবি: রয়টার্স

শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে রিয়ালের একাদশ দেখে ভিরমি খেয়েছেন অনেকেই। ম্যাচ শুরুর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলেছে তর্ক-বিতর্ক। মার্সেলো কেন একাদশে, বেনজেমা কোথায়, লুকা ইয়োভিচকে নামানো কি সঠিক সিদ্ধান্ত—ইত্যাদি সব আলোচনা। শেষ বাঁশি বাজার পর বোঝা গেল জিদানের কৌশল আর যাই হোক সব সময় নিখুঁত হয় না। মার্সেলো প্রায় দুই বছর ধরে যেমন খেলছেন কাল শাখতারের বিপক্ষে তেমনই খেললেন—বয়সের ভারে নিজের ছায়া হয়ে থাকা আর কি! ইয়োভিচ তেমন কিছুই করতে পারলেন না, আর বেনজেমা? তাঁকে ম্যাচের শুরু থেকে না খেলানোর কোনো ব্যাখ্যা নেই।

ইউক্রেনের ক্লাবটির বিপক্ষে কাল ৩-২ গোলে হারের ম্যাচে জিদানকে তাই মাথা চুলকাতে দেখা গেল বেশ কয়েকবার। ঠিক কী করা উচিত হয়তো ভেবে পাচ্ছিলেন না! বিরতির পর কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারলেও সর্বনাশ যা হওয়ার ঘটে গেছে প্রথমার্ধেই। ইউরোপের মঞ্চে সাদামাটা একটা দলের বিপক্ষে কি না মার খেয়ে গেল জিদানের কৌশল! সেটিও শাখতারের মূল দল হলে না হয় হতো, এমন একটা দল যাঁদের মূল দলের ১০ জন খেলোয়াড় ছিলেন মাঠের বাইরে। হাত পাততে হয়েছিল যুব দলের স্কোয়াডের কাছে!

বিপর্যয়ের গভীরতাটা জিদান নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন? তাঁর কোচিংয়ে রিয়াল এর আগে কখনো নিজেদের আঙিনায় টানা দুই ম্যাচ হারেনি। কাদিজের পর শাখতারের মুখোমুখি হয়ে সেটাই দেখতে হলো জিদানকে। এর মধ্যে শাখতারের বিপক্ষে প্রথমার্ধে শিষ্যদের খেলা দেখে ‘জিজু’র মাথা টনটন করে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু না। মার্সেলো, মেন্দি, ভারানদের রক্ষণভাগ বলে কী কিছু ছিল! লুকা মদরিচের ভাষায়, ‘(প্রথমার্ধে) এই প্রতিযোগিতার মানের দলের মতো খেলা ছিল না।’ আর এমন খেলার স্মৃতির বোঝা পিঠে টেনে পরশু ‘এল ক্লাসিকো’য় বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে হবে জিদানকে। সতর্ক-ঘণ্টা বেজে চললেও সবকিছু ঠিক করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন ফরাসি কিংবদন্তি। আর সব দায় তুলে নিলেন নিজের কাঁধে।

শাখতারের বিপক্ষে হারের পর প্রায় ঘন্টাখানেক পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন জিদান। হয়তো কী ব্যাখ্যা দেবেন তা ঠিক করতে আসতে সময় লাগছিল। সে যাই হোক, হারের পর রিয়াল কোচের ব্যাখ্যা, ‘খেলার শুরু থেকেই আমাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। প্রথমার্ধে দলকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলাম তেমন দেখিনি। দল যখন প্রত্যাশামতো খেলবে না তখন সেটা নিজেরই ভুল। তাই এই ভুল আমারই। এটা একটা বাজে ম্যাচ ছিল, বাজে রাত। কোচ যেহেতু আমি তাই সমাধান বের করার দায়িত্বও আমার।’

রিয়াল কোচ হিসেবে টানা তিনবার ইউরোপসেরা হওয়া জিদান মনে করেন, সমালোচনা হলে তাঁর বিপক্ষেই সবার আগে কথা ওঠা উচিত। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য শিষ্যদের খেলার প্রশংসা ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘সমালোচনা আমাদের প্রাপ্য। সবাই এর প্রাপ্য এবং সবার আগে আমার। সৌভাগ্যবশত দ্বিতীয়ার্ধে দল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, কারণ এমন ফল তাদের প্রাপ্য ছিল না। তারা চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়, আর এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে।’ দলের বাজে পারফরম্যান্স কাটিয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিদান বলেন, ‘প্রতি তিন দিনে আমাদের একটি করে ম্যাচ আছে। তবে এটা অজুহাত হতে পারে না। সিদ্ধান্তগুলো আমার নেওয়া, তাই আমাকেই বের করতে হবে কীভাবে আবার শক্তিশালী হয়ে জয়ের পথে ফিরতে পারি। হাতে মাত্র কয়েক দিন সময় আছে। তবে সমস্যাগুলো আমি ঠিক করতে পারব, সেই চেষ্টাই থাকবে।’

চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ হারল রিয়াল। গত মৌসুমে শেষ ষোলোয় ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগেই হেরেছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি। আর এবার হার দিয়ে অভিযাত্রা শুরু হলো। এর আগে রিয়াল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা তিন ম্যাচ হেরেছিল ৩৪ বছর আগে—১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে। পতনের দায়ভার নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া জিদান এখন কী করেন সেটাই দেখার বিষয়।