’৫২, ’৬৬, ’৬৯, ’৭১—শেখ জামাল ক্লাবের ব্যতিক্রমী উদযাপন

চার দলের চার অধিনায়ক। (বাঁ থেকে) ওমর জোবে, মোজাম্মেল হোসেন, কেস্ট কুমার, মামুন খান।
সৌজন্য ছবি

ওমর জোবের জার্সিতে লাল-সবুজ পতাকা। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গাম্বিয়ান স্ট্রাইকার দারুণ আনন্দের সঙ্গেই পরেছেন সেই জার্সি। শুধু জোবে নয়, শেখ জামাল ক্লাবের সব বিদেশিই আজ পরেছিলেন শেখ জামাল ক্লাবের বিশেষ এই জার্সি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আজ ব্যতিক্রমী এক উদযাপনের আয়োজন করে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চার বিশেষ বছর—১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালের নাম অনুসারে চারটি দল গড়া হয়। আর চার দলের জার্সিতে লেখা ছিল এই সালগুলো। ক্লাবের সব ফুটবলার ভাগ হয়ে খেলেছেন ‘সিক্স আ সাইড’ টুর্নামেন্টে, যার নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ডার্বি ফুটবল টুর্নামেন্ট।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন অন্যভাবে করল শেখ জামাল ক্লাব।
সৌজন্য ছবি

’৫২ দলে স্থানীয়দের সঙ্গে খেলেছেন ওমর জোবে। ’৬৬ দলে সলোমন কিং, ’৬৯-এ সুলাইমান সিল্লাহ এবং ’৭১-এ খেলেছেন ওতাবেক ভলিজনোভ। রবিন লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ’৭১ ও ’৬৯ দল ওঠে ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ’৬৯ দল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই সালগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দিয়েই স্বাধীনতার আগুনের ফুলকি জেগে ওঠে বাংলাদেশে। এরপর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ’৬৯–এর গণ–অভ্যুত্থান ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম সোপান। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি মেলে স্বাধীনতাকামী বাঙালির।

এই চার বছরের নামে চার দল গড়ার পরিকল্পনা শেখ জামাল ক্লাবের কোচ শফিকুল ইসলামের। টুর্নামেন্ট শেষে এমন আয়োজনের জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিলেন শফিকুল। চমৎকার আয়োজনের সঙ্গী হতে পেরে খুশি শফিকুল, ‘এটার যা কিছু চিন্তাভাবনা, সবকিছু আমার থেকেই এসেছে। ক্লাবের সবাই সুন্দরভাবে এটা নিয়েছে। আমি আসলে প্র্যাকটিস সেশনের অংশ হিসেবেই এটাকে রেখেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর স্মৃতিচারণা করাটাও আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা যে চারটা দল করেছি, এই চার ঘটনা মিলেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।’

৫২ দলে অধিনায়ক জোবে (সবার ডানে) ও অন্যরা।
সৌজন্য ছবি

ক্লাবের কর্মকর্তাসহ ফুটবলাররা দিনটিকে খুব উপভোগ করেছেন। যখন দলগুলো ঘোষণা করা হয়, খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদেশিরা এই টুর্নামেন্টকে নিয়েছেন। ওমর জোবের কণ্ঠে ছিল আনন্দের রেশ, ‘এমন একটা ব্যতিক্রমী টুর্নামেন্টে খেলতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস আমার জানা ছিল না। এই টুর্নামেন্টে খেলে সেটাও জানতে পেরেছি। আমরা কোন দলে কোন বিদেশি খেলেছি, সেই দলের সালগুলোর পেছনের ইতিহাসও আমাদের জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে দিনটা ভালো কেটেছে আমাদের।’

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু শেখ জামাল ক্লাবের ম্যানেজার। এমন আয়োজন শেষে এই ফুটবলার বলছিলেন, ‘এটা একটা অসাধারণ উদ্যোগ। আমরা ফুটবলার, কর্মকর্তারা চেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ভিন্নভাবে উদযাপন করতে। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে আমাদের।’