৫৫ বছরে এমন কীর্তি দেখেনি কেউ

৪ গোল করেছেন চেলসির অলিভিয়ের জিরু।ছবি: রয়টার্স

‘নিখুঁত হ্যাটট্রিক’ কী জিনিস সেটি দুবছর আগেও নাকি জানতেন না অলিভিয়ের জিরু! সেই জিরু কাল রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে করেছে ‘নিখুঁত হ্যাটট্রিক’। চেলসির ফরাসি স্ট্রাইকার শুধু হ্যাটট্রিক করেই থামেননি, পরে করেছেন আরেকটি গোলও। জিরুর ৪ গোলেই কাল সেভিয়াকে তাদেরই মাঠে ৪-০ গোলে হারিয়েছে চেলসি।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাঁর চেলসির একাদশে জায়গা পাওয়াটাই আজকাল খবর, সেই জিরু কাল ইতিহাসও গড়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ কিংবা এর পূর্বসূরি ইউরোপিয়ান কাপ গত ৫৫ বছরে জিরুর চেয়ে বেশি বয়সে কাউকে হ্যাটট্রিক করতে দেখেনি। কাল জিরুর বয়স ছিল ৩৪ বছর ৬৩ দিন। চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে এত বয়সী কারও হ্যাটট্রিক তো দেখা যায়ইনি, ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৯২ সালে নাম ও ফরম্যাট বদলে চ্যাম্পিয়নস লিগ হওয়ার আগে টুর্নামেন্টটির নাম এটিই ছিল) মিলিয়ে হিসাব করলেও জিরুর চেয়ে বেশি বয়সী হ্যাটট্রিকম্যান খুঁজে পেতে ফিরে যেতে হয় ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে। ডাচ ক্লাব ফেইনুর্ডের বিপক্ষে ৩৮ বছর ১৭৩ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের হাঙ্গেরিয়ান কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাস।

গত রাতের আগে এ মৌসুমে জিরু মাত্র একবারই চেলসির শুরুর একাদশে ছিলেন। লিগ কাপের সেই ম্যাচে টটেনহামের কাছে হেরেছিল চেলসি। গতকালের আগে মৌসুমে সব মিলিয়ে মাত্র ১৮৯ মিনিট মাঠে ছিলেন ফরাসি এই স্ট্রাইকার। তবে গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগে রেনেকে হারাতে জিরুর যোগ করা সময়ে করা গোলের দরকার পড়েছিল ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দলের।

চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়লেন জিরু।
ছবি: রয়টার্স

চেলসি গত সপ্তাহেই নিশ্চিত করে ফেলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা। কাল তাই মোটামুটি খোলনলচে পাল্টিয়েই একাদশ সাজিয়েছিলেন ল্যাম্পার্ড। প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ম্যাচে টটেনহামের বিপক্ষে খেলা দলটির নয়জনই ছিলেন না গতকালের একাদশে। আর তাতেই শুরু থেকে ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলে জিরুর।

ম্যাচের ৮ মিনিটেই গোল পেয়ে যান জিরু, কাই হাভার্টজের পাস থেকে বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ে বলটাকে জালে পাঠান। ৫৪ মিনিটে ডান পা দিয়ে দারুণ এক গোল করার ২০ মিনিট পর এনগোলো কান্তের ক্রস থেকে হেডে গোল করে ‘নিখুঁত হ্যাটট্রিক’ পেয়ে যান জিরু। ৮৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে চতুর্থ গোলটি করার পর জিরুকে উঠিয়ে নেন ল্যাম্পার্ড।

নিখুঁত হ্যাটট্রিক অবশ্য এবারই প্রথম করেননি জিরু। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ইউরোপা লিগে দিনামো কিয়েভের বিপক্ষেও এমন হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। কাল ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই ম্যাচটার কথাও তুললেন জিরু, ‘আমি দুবছর আগেও জানতাম না আপনারা এটাকে ‘‘নিখুঁত হ্যাটট্রিক’’ বলেন। কিয়েভে ইউরোপা লিগে হ্যাটট্রিক করার পর (নিখুঁত হ্যাটট্রিক নিয়ে প্রশ্নে) আমি বলেছিলাম ‘‘আপনারা কী বোঝাচ্ছেন’’? (আজকের) গোলগুলো ভালো ছিল, অ্যাসিস্টগুলোও অবশ্য ভালো পেয়েছি।’

চ্যাম্পিয়নস লিগে চেলসির কোনো খেলোয়াড় কালই প্রথম এক ম্যাচে চার গোল পেলেন। যেকোনো প্রতিযোগিতায় এক ম্যাচে চেলসির কেউ ৪ গোল পেয়েছিলেন সর্বশেষ ২০১০ সালে। ওই বছরের মার্চে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ৪ গোল করেন জিরুদের বর্তমান কোচ ল্যাম্পার্ড।

দলে থাকুক কিংবা না-ই থাকুক ও (জিরু) যেভাবে অনুশীলন করতে চায়, যেভাবে অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলতে চায়, সেটির তুলনা নেই। ও তরুণ ও অন্য খেলোয়াড়দের জন্য চমৎকার এক উদাহরণ।’
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, চেলসি কোচ

কাল নিজের কীর্তির পুনরাবৃত্তি দেখার পর জিরুর উচ্চকিত প্রশংসাই করেছেন ল্যাম্পার্ড। চেলসি কোচ মনে করেন, তরুণ খেলোয়াড়দের আদর্শ হতে পারেন জিরু, ‘ও চূড়ান্ত রকমের পেশাদার। ফ্রান্সের হয়ে ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ওর পরিসংখ্যান দেখুন। ও হয়তো দলে নিয়মিত নয় কিন্তু আমি ওর মধ্যে ইতিবাচক অনেক কিছুই দেখেছি। দলে থাকুক কিংবা না-ই থাকুক ও যেভাবে অনুশীলন করতে চায়, যেভাবে অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলতে চায়, সেটির তুলনা নেই। ও তরুণ ও অন্য খেলোয়াড়দের জন্য চমৎকার এক উদাহরণ।’

আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হওয়ায় ম্যাচটিতে প্রথম একাদশের অনেককে ছাড়াই খেলেছে সেভিয়াও। ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়নদের ম্যাচটি ছিল ইউরোপে তাদের শততম হোম ম্যাচ। মাইলফলকের সেই ম্যাচটিতেই প্রথমবার ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে ৪ গোলে হারল সেভিয়া।