৬৬ শট, এক সপ্তাহে নিষ্পত্তি, হরেক রকম টাইব্রেকার

২৪ কিকের টাইব্রেকারে এসি মিলান ৯-৮ গোলে রিও আভেকে হারিয়ে ইউরোপা লিগের প্রাথমিক পর্বের বৈতরণী পেরিয়েছে এসি মিলান।ছবি: রয়টার্স

ম্যারাথন এক টাইব্রেকার জিতে ইউরোপা লিগের প্লে-অফে হার এড়িয়েছে এসি মিলান। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যায় পর্তুগালের ক্লাব রিও আভে। অতিরিক্ত সময়ের খেলার যোগ করা সময়ে পেনাল্টি গোলে সমতায় ফেরে মিলান। এরপরই শুরু ম্যারাথন শুটআউট। সব মিলিয়ে ২৪টি কিক নিয়েছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। যেখানে গোল হয়েছে ১৭টি, শেষ পর্যন্ত ৯-৮ গোলে জিতেছে মিলান।

ম্যারাথন টাইব্রেকার এটাই প্রথম নয়। ফুটবল বিশ্ব এর আগে ৬৬ কিকের টাইব্রেকারও দেখেছে। সেটা অবশ্য বয়সভিত্তিক ফুটবলে। আনুষ্ঠানিক ফুটবলে দীর্ঘতম টাইব্রেকারটি হয়েছে ২০০৫ সালে, নামিবিয়ান কাপে। ফুটবল বিশ্ব এমন টাইব্রেকারও দেখেছে যে কিক নিতে নিতে অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে। দুই দলই ম্যাচ শেষ না করে মাঠ ছেড়ে চলে গেছে। দেখা আসা যাক টাইব্রেকারের অদ্ভুত কিছু গল্প।

আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘতম টাইব্রেকার
নামিবিয়ান কাপ ফাইনাল, ২০০৫
কেকে প্যালেস ১৭: ১৬ সিভিকস

আনুষ্ঠানিক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি কিকের টাইব্রেকার এখন পর্যন্ত এটাই। দুই দল মিলিয়ে রেকর্ড ৪৮টি কিক নিয়েছে। ১২০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে সমতায় শেষ হয়েছে ম্যাচটি। এরপর শুরু সেই ম্যারাথন শুটআউট। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুচাপ সামলে টাইব্রেকারে ম্যাচটি ১৭-১৬ গোলে জিতেছে কেকে প্যালেস। অমন একটি ম্যাচ শেষে সবাই যেন মুক্তির নিশ্বাসই ফেলেছিল। ২০১০ সালে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নামিবিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান তিতুস কুনামিউ বলেছিলেন, ‘তখন আমরা জানতাম না যে এটা একটা রেকর্ড। আসল কথা হচ্ছে ম্যাচ শেষে আমরা যেন সবাই মুক্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম।’


টাইব্রেকারে সবচেয়ে বেশি সফল কিক
হ্যাম্পশায়ার সিনিয়র কাপ, ২০১৩
ব্রকেনহার্স্ট ১৫: ১৪ অ্যান্ডোভার

গুনে গুনে ২৯টি কিক নিয়ে ফেলেছে দুই দলের খেলোয়াড়েরা। সবাই গোল পেয়েছে। সবার কাছেই তখন মনে হচ্ছিল—এই পথ যদি না শেষ হয়! পথ অবশেষে শেষ হয়েছে ৩০তম কিকে গিয়ে! ৩০তম কিকটি নিয়েছিলেন অ্যান্ডোভারের ক্লদিও হার্বার্ট। স্পট-কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। টাইব্রেকারে ১৫-১৪ গোলে জিতে মাঠ ছাড়েন ব্রকেনহার্স্টের খেলোয়াড়েরা। এর আগেই অবশ্য একটি রেকর্ড হয়ে গেছে—ফুটবলের ইতিহাসে টাইব্রেকারে টানা বেশি গোল হয়েছে ম্যাচটিতে। আগের রেকর্ডটি ছিল জনস্টন’স পেইন্ট ট্রফির প্রথম রাউন্ডে ডাগেনহ্যাম অ্যান্ড রেডব্রিজ আর লেটন অরিয়েন্টের ম্যাচে। ২০১১ সালের সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে টানা ২৭টি শটে গোল হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১৪-১৩ গোলে জিতেছিল ডাগেনহ্যাম।

এক সপ্তাহ ধরে টাইব্রেকার
ডমিনিকান নেশনস কাপ, ২০০২

এই ম্যাচের টাইব্রেকারের ফল কেন লেখা হলো না? শেষাবধি টাইব্রেকারের ফল কি সেই বিতর্ক যে এখনো শেষই হয়নি! টাইব্রেকারে কত শট নেওয়া হয়েছে সেই হিসেব গুলিয়ে ফেলেছিলেন রেফারি। ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচে ১১টি স্পট-কিক হওয়ার পর জেবিয়ানসের বিপক্ষে হার্লেম বম্বার্সকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রেফারি। কিন্তু জেবিয়ানস এই ফলের বিরুদ্ধে আপিল করে। তদন্ত শেষে শুটআউট আবার শুরু হয় ৬ অক্টোবর। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ম্যাচটি জিতেও যায় জেবিয়ানস। তবে এই টাইব্রেকারের শেষ স্কোর আসলে কী সেই বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি!
এত কিক, আলোও নেই, বাদ দিই!

ফ্রেঞ্চ কাপ, ১৯৯৬-৯৭
ওবেরনাই ১৫: ১৫ ভিত্তেলশাইম

ফ্রেঞ্চ কাপের প্রাথমিক পর্বের সেই ম্যাচটি শেষই করতে পারেননি রেফারি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের খেলাও দুই দলকে আলাদা করতে পারেনি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও ‘কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান’ অবস্থা! একটার পর একটা স্পট-কিক নিতে নিতে ৪০টিতে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু তখন আর খেলা কোনো মতেই চালানো সম্ভব ছিল না। মাঠে ছিল না কৃত্রিম আলো, সূর্য ডুবে যাওয়ায় চারদিকে নেমে এসেছে অন্ধকার। বলই চোখে দেখা যায় না। টাইব্রেকারে তখন ১৫-১৫ সমতা। রেফারি খেলা বন্ধ করে দেন। স্থানীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ওবেরনাইকে পরের রাউন্ডে উঠিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল দলটি নিচের র‌্যাঙ্কিংয়ের হয়ে ভালো লড়াই করেছে!

টাইব্রেকার নিঃসন্দেহে ভাগ্যের খেলা এবং রোমাঞ্চকর। তবে সেটা কখনো কখনো ক্লান্তিকরও হয়ে ওঠে।
ফাইল ছবি রয়টার্স

সম্ভবত সবচেয়ে বাজে টাইব্রেকার

ম্যাচটি ছিল ১৯৯৮ সালে ডার্বি কমিউনিটি কাপের বয়সভিত্তিক দুই দলের মধ্যে। খেলেছিল মিকলওভার লাইটিনিং ব্লু সক্স ও চেলাস্টন বয়েজের অনূর্ধ্ব-১০ দল। মূল ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। দুই দল মিলিয়ে ৬৬টি কিক নিয়েছে। কিন্তু জালে বল গেছে মাত্র তিনবার। টাইব্রেকারে ব্লু সক্স ম্যাচটি জিতেছে ২-১ গোলে।