৭ বছর পর চেলসিকে শেষ চারে তুলেই টুখেলের হুঙ্কার

ম্যাচ শেষে চেলসি কোচ টমাস টুখেলরয়টার্স

ম্যাচ শেষে টমাস টুখেল যে কথাটা বললেন, তাতে তাঁকে একটু অতি আত্মবিশ্বাসী মনে হতেই পারে। সেভিয়ার রামন সানচেজ পিখুয়ান স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগটা শেষে চেলসি কোচের সদর্প ঘোষণা, ‘আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে, (চ্যাম্পিয়নস লিগ) ফাইনাল খেলার। আর যদি ফাইনালে যাই, তাহলে জেতারও সুযোগ আছে।’

সর্বশেষ ২০১৩-১৪ মৌসুমে সেমিফাইনালে খেলে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল চেলসি।

যে ম্যাচটা শেষে কথাটা বলেছেন টুখেল, সেটা অবশ্য পোর্তোর কাছে ১-০ গোলে হেরেছে তাঁর দল। কিন্তু তাতে ক্ষতি কিছু হয়নি। একই মাঠে প্রথম লেগটা চেলসি জিতেছিল ২-০ গোলে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ দুটি ম্যাচই সেভিয়ার মাঠে সরিয়ে নেওয়া হলেও প্রথম লেগটাকে ধরা হয়েছে পোর্তোর ঘরের মাঠে ম্যাচ হিসেবে। কাল রাতেরটা ছিল চেলসির ‘হোম’ ম্যাচ। তার মানে দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোলের জয় চেলসির। আর তাতেই সাত বছর পর আবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ হলো চেলসির। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ মৌসুমে সেমিফাইনালে খেলে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল চেলসি।

চেলসির শেষ চারে ফিরতে ফিরতে সাত বছর লেগে গেলেও টুখেল কিন্তু গত মৌসুমেও এই মঞ্চ থেকে একবার ঘুরে গেছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সেমিফাইনাল নয়, ফাইনালের স্বাদও পেয়েছেন। তখন তিনি পিএসজির কোচ। কিন্তু ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের পর তাঁর ক্যারিয়ারেরও মোড় ঘুরে গেছে। গত বছর আগস্টে লিসবনের সেই ফাইনালের পরই পিএসজি তাঁকে রাখবে কি রাখবে না, এমন না কথা শোনা যাচ্ছিল।

কাল ফিরতি লেগে পোর্তোর মেহদি তারেমির একমাত্র গোল
রয়টার্স

এসবের মধ্যেই আবার টুখেল একদিন বলে দিলেন, পিএসজিতে তাঁকে এতজনকে মানিয়ে চলতে হয় যে নিজেকে নাকি তাঁর কোচের চেয়ে বেশি রাজনীতিবিদ মনে হয়। একদিকে লিগে এবার শুরু থেকে গত কয়েক বছরের মতো দাপুটে নয় পিএসজি, তারওপর এই কথা! এরপর আর তাঁকে কোচ হিসেবে রাখার দরকার মনে করেনি প্যারিসের ক্লাবটির হর্তাকর্তারা। ওদিকে চেলসিতে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রোমান আব্রামোভিচও দায়িত্ব দেওয়ার জন্য কাউকে খুঁজছিলেন। দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেল। প্যারিস থেকে বিদায়ের মাসখানেকের মধ্যেই জার্মান কোচ টুখেলের নতুন ঠিকানা হলো লন্ডনের স্টামফোর্ড ব্রিজ।

সেখানে এখন পর্যন্ত টুখেলের যা পারফরম্যান্স, আব্রামোভিচের তাতে খুশি থাকারই কথা। প্রিমিয়ার লিগে চেলসি আপাতত পাঁচে, শীর্ষ চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত করার সুযোগ ভালোই আছে। তবে টুখেলের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, লিগের সেরা চারে থেকে নয়, এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের মৌসুমে সরাসরি জায়গা করে নিতে চান ইউরোপ সেরাদের এই টুর্নামেন্টে।

এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। এই ক্লাবের তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, টানা ম্যাচ জেতার সংস্কৃতি আছে, অবকাঠামো আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার মতো ঐতিহ্য ও খেলোয়াড়দের মানসিকতা সবাই আছে এখানে।

সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর তাঁর সোজা কথা, ‘এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। এই ক্লাবের তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, টানা ম্যাচ জেতার সংস্কৃতি আছে, অবকাঠামো আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার মতো ঐতিহ্য ও খেলোয়াড়দের মানসিকতা সবাই আছে এখানে। আমিও এখানে এসেছি শিরোপা জিততে। ফল এনে দিতেই আমাকে এখানে আনা হয়েছে, আর সেই ফল হচ্ছে শিরোপা।’

ম্যাচ শেষে টুখেল অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাঁর খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফরা
রয়টার্স

কথাগুলো শুনে সবচেয়ে খুশি হবেন সম্ভবত রোমান আব্রামোভিচ। চেলসির এই রাশিয়ান ধনকুবের মালিকের ধৈর্যহীন বলে দুর্নাম আছে। দল কিছুদিন খারাপ করলেই কোচ ছেঁটে ফেলো - এই নীতিতে বিশ্বাসী তিনি। তবে ল্যাম্পার্ডের মতো চেলসির আইকনকে ছেঁটে ফেলে টুখেলকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত দারুণ কাজে দিয়েছে। এখন তো টুখেল আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, আব্রামোভিচ খুশি না হয়ে পারেন!

শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগই নয়, টুখেলের অধীনে এরই মধ্যে এফএ কাপের সেমিফাইনালও নিশ্চিত করেছে চেলসি। আপাতত এই দুটি টুর্নামেন্টের ট্রফিতেই চোখ চেলসি কোচের। সে জন্য যদি প্রিমিয়ার লিগ থেকে আপাতত মনোযোগ সরিয়ে রাখতে হয়, সেটাও করতে রাজি টুখেল, ‘সত্যি কথা বলতে লিগ শিরোপা এখন আর আমাদের হাতে নেই। কিন্তু আপনি যদি শিরোপা দিয়ে মৌসুমটা শেষ করতে চান, তাহলে ভালো হবে এই দুটি টুর্নামেন্টে পুরো মনযোগ দেওয়া।’

চেলসি-পোর্তো ম্যাচের একটি মুহূর্ত
রয়টার্স

কাজটা অবশ্য শুনতে যেমন মনে হচ্ছে, মাঠে নামার পর তার চেয়ে অনেক কঠিন লাগবে টুখেলের। এফএ কাপের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটি। যারা এই মৌসুমে সম্ভাব্য চার শিরোপার সবগুলো জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে চেলসি পাবে লিভারপুল বা রিয়াল মাদ্রিদকে। ফাইনাল তো আরও পরের ব্যাপার। চ্যাম্পিয়নস লিগে পোর্তোর বিপক্ষে দুই লেগেও চেলসি ঠিক দাপুটে ছিল, সেটা পাঁড় চেলসি সমর্থকও দাবি করবেন না। যদিও পোর্তোর গোল না পাওয়ার দক্ষতা চেলসিকে সেভাবে ভোগাতে পারেনি। প্রথম লেগেও নয়, কাল দ্বিতীয় লেগে পোর্তো যখন গোলটা পেল, ততক্ষণে আর ফিরে আসার সুযোগ তেমন নেই। মেহদি তারেমি গোলটা করেছেন যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে।

চেলসিকে নিয়ে টুখেলের এই যে শিরোপা-স্বপ্ন, সেই পথটা এখনো আসলে অনেক বাকি!