৯০ মিনিট সময় পেয়েও এত ফালতু প্রশ্ন?

টনি ক্রুসছবি: রয়টার্স

পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ! রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় না হলে এমন কিছুর স্বাদ খুব কম খেলোয়াড়ই পেয়েছেন। গতকাল লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। করিম বেনজেমা, লুকা মদরিচ, কাসেমিরো, কারভাহাল ও নাচোর মতো খেলোয়াড়েরা আট বছরে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ পেয়েছেন। এর মধ্যে টনি ক্রুস একটু ব্যতিক্রম। পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ তিনিও পেয়েছেন। তবে তাঁর একটি শিরোপা বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে।

৯ বছরের ব্যাপ্তিতে পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। জার্মান খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি এই ট্রফি জেতার রেকর্ডটা ৩২ বছর বয়সী ক্রুসের। এমন দিনে উচ্ছ্বাসে ভেসে থাকার কথা তাঁর। কিন্তু পরশু এক সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারিয়েছেন ক্রুস। সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, ৯০ মিনিট সময় হাতে পেয়েও ভালো প্রশ্ন করতে পারেন না কেন এই সাংবাদিক!

ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফকে ছেঁকে ধরেছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা। জার্মান সংবাদমাধ্যম জেডডিএফের প্রতিবেদক নাইলস কাবেন ক্রুসের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। ৫৪ বছর বয়সী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ক্রুসের কথোপকথনের শুরুটা খুব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু একটু পরই ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে রিয়াল কেন কোণঠাসা হয়েছিল, এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এতে রেগে যান ক্রুস। রাগ দেখিয়ে কথোপকথন থামিয়ে দেন। ফিরে এসে এটাও বলেন, যেসব প্রশ্ন করেছেন, সবই নেতিবাচক, তার মানে এই সাংবাদিক নির্ঘাত জার্মান!

জার্মান পত্রিকা বিল্ড দুজনের মধ্যে কথোপকথনটা যেভাবে এগিয়েছিল, সেটা প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেটা নিচে তুলে ধরা হলো:

কাবেন: টনি, অভিনন্দন। কী দারুণ এক সন্ধ্যা। বিশ্বাস করতে পারেন? আপনি এ নিয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেন। অসাধারণ, তাই না?

ক্রুস: এ নিয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই।

টনি ক্রুস
ছবি: রয়টার্স

কাবেন: গ্যালারির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। কারণ, ব্যাপারটার মাহাত্ম্য বুঝতে সময় নিতে হচ্ছিল?

ক্রুস: এটা বুঝতে বেশ কয়েক দিন লাগবে। আমার পরিবারের লোকজন কোথায় আছে, সেটা প্রথমে দেখেছি, কারণ, এটা খুব বিশেষ শিরোপা। আজ সবাই স্টেডিয়ামে ছিল। আমি সব সময় বলেছি, আমি একটা বা দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছি, কিন্তু আমি চেয়েছি স্টেডিয়ামে আমার সব বাচ্চা আসুক। আজ সেটা হয়েছে। কী যে সুন্দর এ দৃশ্য বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

এতক্ষণ পর্যন্ত সব স্বাভাবিক ছিল। ঝামেলার শুরুটা পরের প্রশ্ন থেকে।

কাবেন: তা ছাড়া ম্যাচ যেভাবে এগিয়েছে, তাতে জয়ের তো কোনো নিশ্চয়তা ছিল না, এটাও কি বাড়তি কিছু যোগ করছে না?

ক্রুস: ধ্যাৎ, কোন ব্যাপারটা নিশ্চিত থাকে? চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাকে নিশ্চিত বলে কখনোই ধরে নেওয়া যায় না। আমরা খুব ভালো লড়াই করেছি, আমরা জানতাম লিভারপুল দুর্দান্ত দল। ধ্যাৎ, আপনি নিশ্চিত বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন? আমরা জিতেছি, ব্যস শেষ!

কাবেন: আপনার কি অবাক লাগছে না, রিয়াল মাদ্রিদ এতটা বিপদে পড়েছিল?

ক্রুস: সত্যি বলছি, আপনি ভালো প্রশ্ন করার জন্য ৯০ মিনিট সময় পেয়েছেন। আর এখন আপনি এসব ফালতু প্রশ্ন করছেন। আমার কাছে এটা পাগলামি মনে হচ্ছে!

কাবেন: আমার মনে হয় না প্রশ্নটা খুব বাজে ছিল, কারণ...

ক্রুস: এটা তো পরিষ্কার, লিভারপুলের বিপক্ষে আপনাকে বিপদে পড়তে হবে। এটা কী ধরনের প্রশ্ন? আমরা তো কোথাও গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে নামিনি, আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলছি।

কাবেন: এটা তো পরিষ্কার, নকআউট পর্বে রিয়াল মাদ্রিদ মাঝে মাঝে...

ক্রুস: থামুন, এর চেয়ে ভালো আমি চলে যাই... (সরে গেছেন)

কাবেন: এখন তিনি চলেই গেলেন...

ক্রুস আবার ক্যামেরার ফ্রেমে ফিরে এসেছেন, পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলেছেন, ‘খুব বাজে, খুব, খুব বাজে।’

পেছন থেকে তাঁকে ডাকা হচ্ছিল: ‘দয়া করে সাক্ষাৎকার শেষ করে যান।’

ক্রুস: আপনি প্রথম তিনটি প্রশ্নই নেতিবাচক করেছেন, তার মানে পরিষ্কার, আপনি জার্মানি থেকে এসেছেন!

এরপর আরেক সংবাদমাধ্যম ডিএজেডএনের আগ্রহ মিটিয়েছেন ক্রুস। তখন তাঁকে স্বভাবজাত ঠান্ডা মাথাতেই কথা বলতে দেখা গেছে।