৯০০ কোটি টাকা পেলে চাকরি যাওয়াই তো ভালো

এ যাবৎ বিভিন্ন ক্লাব থেকে ছাঁটাই হয়ে মরিনিও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০০ কোটি!ছবি: রয়টার্স

সেই যে বেনফিকার ম্যানেজার হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, উনাইও দি লিওরিয়া, পোর্তো, চেলসি, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ, আবারও চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হয়ে টটেনহামের দায়িত্ব পর্যন্ত নিয়েছেন জোসে মরিনিও। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল ম্যানেজার হিসেবে নিঃসন্দেহে তাঁর নামটা বলা যায়। তবে এতগুলো ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে প্রতিটি ক্লাবই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল। কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে প্রতিটি ক্লাবেই ব্যর্থ হয়েছেন, আর সে কারণেই হয়েছেন ছাঁটাই।

টটেনহামের কথাই ধরুন। বোনাসটোনাস মিলিয়ে বার্ষিক প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশের হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার বেশি) বেতনের চুক্তিতে যোগ দিয়েছিলেন এখানে ২০১৯ সালের শেষ ভাগে। এই মরিনিওর পেছনে বছরের পর ঘোরার পর অবশেষে স্পার্সদের সভাপতি ড্যানিয়েল লেভি যখন নিজের দলের জন্য তাঁকে পেলেন, ২০২২-২৩ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চুক্তি করতে একটুও ভাবেননি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা এটাই, ম্যানেজার যদি ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁকে ছাঁটাই করার সময়ে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। যে কারণে অনেক আশা করে মরিনিওকে টটেনহাম কোচ বানিয়ে নিয়ে এসেছিল, সে আশার ছিটেফোঁটাও পূরণ হয়নি।

সম্প্রতি টটেনহাম ছাঁটাই করেছে মরিনিওকে। তিনি ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ১৮৮ কোটি টাকা।
ছবি: এএফপি

ফলাফল? ছাঁটাই হয়েছেন মরিনিও। তবে শুধু ছাঁটাই হয়েই যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তাতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাওয়াটা রোনালদো-বেনজেমা কিংবা ল্যাম্পার্ড-দ্রগবাদের সাবেক এই কোচ তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য কোনো সমস্যাই নয়। ১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি হিসেবে প্রায় ১৮৮ কোটি টাকার সমান। তবে মরিনিওর এই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারটি কিন্তু আজকের নয়। এর আগে আরও যেসব ক্লাব থেকে ছাঁটাই হয়েছেন, প্রতিটি ক্লাব থেকেই পইপই করে নিজের ক্ষতিপূরণটুকু কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিয়েছেন। টটেনহাম থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর দেখা গেছে, গোটা ক্যারিয়ারে এই ছাঁটাই বাবদ প্রায় ৭৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এই কোচ। বাংলাদেশের হিসাবে ৯০০ কোটি টাকার বেশি। ভাবা যায়! একটা মানুষ কেবল চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েই আয় করেছেন ৯০০ কোটি টাকা!

চমকপ্রদ এই তথ্য দিয়েছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের সাংবাদিক বেন ব্লুম। প্রতি ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়ার সময়ে মরিনিও ক্ষতিপূরণ বাবদ কত করে পকেটে পুরেছেন, ব্লুম একদম আলাদা করে হিসাব করে দেখিয়েছেন।

৯০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেলে তো চাকরি যাওয়াই ভালো!
ছবি: এএফপি

বেনফিকা, উনাইও দি লিওরিয়া, পোর্তো—প্রথম তিন ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়ার সময় কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাননি মরিনিও, জানাচ্ছে টেলিগ্রাফ। চেলসির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ বদলে দেওয়ার পর ২০০৭ সালে যখন দায়িত্ব ছাড়লেন, ১ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড পকেটে চলে আসে মরিনিওর। এরপর ইন্টারে যোগ দেন। ঐতিহাসিক ট্রেবল জেতার পর ক্লাবের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতিতেই রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান। ফলে ইন্টারের কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা পাননি। ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ যখন তাঁকে ছাঁটাই করল, মরিনিওর পকেটে চলে এল আরও ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড।

রিয়াল ছেড়ে দ্বিতীয়বারের মতো চেলসিতে নাম লেখান মরিনিও। সে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি দুই পক্ষেরই। ২০১৫ সালেই ছাঁটাই হন, যাওয়ার কালে সঙ্গে নিয়ে যান ১ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ড। এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে যোগ দেওয়া মরিনিও তিন বছর যেতে না যেতেই ব্যর্থতার দায়ে ছাঁটাই হন। তিনি ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড নিয়ে বের হয়ে চলে আসেন। সর্বশেষ টটেনহামের কাছ থেকে পেলেন ১ কোটি ৫০ লাখ, যা শর্ত সাপেক্ষে ২ কোটি পাউন্ডও হতে পারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ন্যূনতম ৭৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পকেটে পুরেছেন মরিনিও ও তাঁর কোচিং দল।

বলা যেতেই পারে, দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েই যদি এত টাকা কামানো যায়, তাহলে ছাঁটাই হওয়াই তো ভালো!