'সুখের চেয়ে শান্তি বড়'

অমলেশ সেন
অমলেশ সেন

ঢাকার ফুটবলে ক্লাবপ্রেমের বড় উদাহরণ অমলেশ সেন। স্বাধীনতার পর পর আবাহনীর সূচনালগ্ন থেকেই টানা ১৯৮৪ পর্যন্ত আকাশি নীল জার্সি পরেই বিদায় নিয়েছেন মাঠ থেকে। মাঝে কয়েক বছর মুক্তিযোদ্ধার কোচ হলেও আবাহনীতে ফিরে এসে এই ক্লাবকেই বানিয়েছেন নিজের ঘরবাড়ি।
সেই অমলেশ সেন বর্তমান সময়ে খেলোয়াড়দের বছর বছর ক্লাব পাল্টানোর তীব্র সমালোচক। ক্লাবের প্রতি খেলোয়াড়দের আন্তরিকতার অভাবকে তিনি দায়ী করছেন প্রবলভাবে। কোথায় খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, এটিও নাকি এখন আর ফুটবলারদের কাছে বিবেচ্য নয়। অমলেশ বলছেন, ‘এখন খেলোয়াড়দের বড় চিন্তা আমি এই মুহূর্তে কত টাকা পেতে পারি। ক্লাবের পরিবেশ দেখবে না, ভাববে না এই ক্লাবে সারা জীবন খেলতে চাই।’
ক্লাব অনেক সময় ভালো দল গড়ে না। কর্মকর্তারা কথা বলেন না, তাই অন্য দল থেকে প্রস্তাব পেলে তাঁরা তা লুফে নেন—খেলোয়াড়দের এমন দাবিকেও উড়িয়ে দিলেন, ‘খেলোয়াড়েরা দর-কষাকষি করতেই এসব বলে। মৌসুম শেষ না হতেই ওরা বলে আমাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট কর। একটা শর্তও দেয়, আমার সঙ্গে অমুক অমুক আসবে। এটা তো হতে পারে না। গ্রুপ নিয়ে আসবে কেন?’
খেলোয়াড়েরা আরেকটি অভিযোগও তো করেছেন। ক্লাব পেশাদার নয়। তা ছাড়া ক্লাবই নিয়ম ভাঙে। লিগের মাঝপথেই দেখা গেল, খেলোয়াড়দের বড় অঙ্কের টাকায় ‘বুক’ করে ফেলে। ক্লাব এটা কেন করে?
অমলেশ সেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দিলেন উত্তর, ‘কেউ অফার করলেই চলে যেতে হবে? আসলে খেলোয়াড়দের মনে এখন শুধু টাকা। কেউ কেউ টাকা নিয়েও ইনজুরির কথা বলে সারা বছর খেলেই না। তারা উল্টো নিজেদের সাফাই গাইলে হবে নাকি!’
সব খেলোয়াড়ই অবশ্য এক রকম নন। তা মনে করিয়ে দিলেন অমলেশ সেন নিজেই। তবে বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব দেখে ব্যথিত তিনি, ‘ক্লাবের সঙ্গে তাদের কোনো বন্ধন নেই, এটাই সত্য। ওরা এক শ ভাগ টাকা চায়, কিন্তু মাঠে তো এক শ ভাগ দেয় না।’
অনেক ক্লাবই ঠিকমতো টাকা দেয় না বলে খেলোয়াড়দের অভিযোগও মানতে নারাজ অমলেশ। তাঁর বরং প্রতিবাদ, ‘কে বলেছে, ক্লাব টাকা দেয় না। প্রতিটি ক্লাব টাকা দেয়। না দিলে পেশাদার লিগের নিয়ম অনুযায়ী ফেডারেশনে অভিযোগ করে টাকা পাওয়া সম্ভব।’
তিনি নিজে দলবদল করেননি কেন? অমলেশ ফিরে তাকান পেছনে, ‘আমার কাছে টাকার সুখের চেয়ে শান্তি বড়। টাকার মধ্যে ঘুমিয়েও শান্তিই না পেলে কী লাভ! তাই আমি এখনকার খেলোয়াড়দেরও এটা মনে রাখতে বলি, সুখের চেয়ে শান্তি বড়।’