‘পদক জিততে পারলে বেশি ভালো লাগত’

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশের তেমন কোনো সাফল্য নেই। তুরস্কের কোনিয়ায় অনুষ্ঠানরত পঞ্চম ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ভল্টিং টেবিলে আলী কাদের হকের পঞ্চম হওয়াটাও তাই সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। এখানেই না থেমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় বড় সাফল্য এনে দিতে চান নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী ১৯ বছরের এই তরুণ। ফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ আলম

আলী কাদের হক

প্রশ্ন :

ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের মতো আসরে ফাইনালে উঠবেন, ভেবেছিলেন?

আলী কাদের: মনে মনে আশা ছিল ভালো খেলব, ফাইনালে উঠব। ফাইনালে উঠতে পেরে আমি খুশি।

প্রশ্ন :

কিন্তু পদক তো জিততে পারলেন না। একটু কি খারাপ লেগেছে?

আলী কাদের: কিছুটা খারাপ তো লেগেছেই। ফাইনালে ওঠার পর পদক জেতার আকাঙ্ক্ষাটা বেড়ে যায়। পদক জিততে পারলে বেশি ভালো লাগত। তবে এমন প্রতিযোগিতায় পঞ্চম হওয়াও কম নয়।

প্রশ্ন :

একই ইভেন্টে ষষ্ঠ হয়েছেন আপনারই সতীর্থ আবু সাঈদ। আপনারা দুজন মিলে মনোযোগ কেড়েছেন গেমসে। এটা কেমন লেগেছে?

আলী কাদের: খুবই ভালো। ৫৫টি মুসলিম দেশের ৪ হাজার ২০০ খেলোয়াড়ের এমন একটা বড় প্রতিযোগিতায় অনেকে আমাদের চিনেছে। জিমন্যাস্টিকসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরে আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে নতুনভাবে শুরু করলাম।

প্রশ্ন :

নতুনভাবে কেন? আপনি তো বাংলাদেশের হয়ে আগেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

আলী কাদের: তা নিয়েছি। ২০১৯ সালে ১৬ বছর বয়সে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলি। সে বছর জুনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশের জার্সিতে সিঙ্গাপুরে সিঙ্গাপুর ওপেন ও হাঙ্গেরিতে বুদাপেস্ট কাপে দুটি করে সোনা জিতি। ২০১৯ সালেই হাঙ্গেরিতে জুনিয়র বিশ্ব জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছি। তারপর এ বছর সিঙ্গাপুর ওপেনে প্রথমবার বাংলাদেশের হয়ে সিনিয়রে খেলে রুপা পাই। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ফাইনালে উঠতে পারিনি। তুরস্কে এসে ফাইনালে উঠতে পারায় তাই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এ জন্যই মনে হচ্ছে, নতুন যাত্রা শুরু করলাম।

প্রশ্ন :

আপনার জন্ম সিডনিতে। কিন্তু বেড়ে উঠেছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। সেই গল্পটা যদি বলতেন...

আলী কাদের: আমার বাবা মোহাম্মদ আকরাম বাংলাদেশি। তিনি ঢাকার মালিবাগের বাসিন্দা। আমার মা নিকি জানকিলস নিউজিল্যান্ডের মানুষ। তাঁরা দুজন বিয়ে করেছিলেন সিডনিতে। ২০০৩ সালে সেখানেই আমার জন্ম। ২০০৫ সালে তাঁরা ক্রাইস্টচার্চে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখনো সেখানেই আছেন। আমি বাবা–মায়ের সঙ্গেই থাকি।

প্রশ্ন :

জিমন্যাস্ট হলেন কীভাবে?

আলী কাদের: ক্রাইস্টচার্চে জিমন্যাস্টিক চর্চা হয় অনেক। আমিও ছোট থেকেই খেলাটাকে ভালোবেসে ফেলি। ৬–৭ বছর বয়সে জিমন্যাস্টিকস শুরু করি। আমার শরীরটা জিমন্যাস্ট হওয়ার উপযোগী। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডে আমার নিজস্ব কোচ আছে। নাম ডেভিড কলভিন, আমার সঙ্গে তিনিও তুরস্কে এসেছেন।

প্রশ্ন :

পড়াশোনা করছেন কোথায়?

আলী কাদের: ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবুরি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক পড়ছি।

প্রশ্ন :

বাংলা বলতে পারেন?

আলী কাদের: না (হাসি), একদমই না। বাংলাটা আমার কঠিন লাগে। দু–একটা শব্দ শিখলেও সেভাবে বলতে গেলে আটকে যাই। তাই বলার চেষ্টাও করি না। ইংরেজিতেই আমি স্বচ্ছন্দ।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে ২০০৮ ও ২০১৯ সালে এসেছিলেন। কোন স্মৃতিটা বেশি মনে আছে?

আলী কাদের: ২০০৮ সালে আমার বয়স ছিল ৫ বছর। তখনকার কথা মনে নেই। পরেরবার গিয়ে ঢাকার যানজটে পড়ার কথা বেশি মনে আছে। আর তখন দেখেছি বাংলাদেশে জিমন্যাস্টিকসের সুযোগ–সুবিধা তেমন নেই।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে অবহেলিত জিমন্যাস্টিকসের জন্য কী করতে চান?

আলী কাদের: কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে তৈরি করে বিশ্বক্রীড়ায় দেশকে আরও পরিচিত করতে চাই। বড় প্রতিযোগিতায় পদক জেতার লক্ষ্য আছে।

প্রশ্ন :

কিন্তু আপনি তো নিউজিল্যান্ডেরও নাগরিক। নিউজিল্যান্ডের জন্য কিছু করবেন না?

আলী কাদের: নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি আমি, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশকে অনেক আপন মনে হয় আমার। বাংলাদেশের জন্য বড় কিছু করতে পারলে গর্বিত হব।