উইন্ডিজকে নিজ ঘরে পরবাসের স্বাদ দিয়ে চারে চার বাংলাদেশের

২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশএএফপি

গায়ানা নাকি বাংলাদেশ? খেলা হচ্ছে কই!

সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে শেষে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। ধীরগতির স্পিন সহায়ক উইকেটে ক্যারিবীয়রা নিজ ঘরেই পরবাসী, আর বিদেশের মাটিতে দেশের ছোঁয়া বাংলাদেশিদের! প্রায় প্রথম ওয়ানডের ধাঁচেই, আরও দাপুটে পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ হারাল টানা ১০ ওয়ানডেতে, জিতল টানা চারটি সিরিজ।

আগের ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ টসটি জেতেন তামিম ইকবাল, আবারও বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আবারও বাংলাদেশ স্পিনারদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপ, বেশ অনভিজ্ঞ এক দলের স্পিন-দূর্বলতা ফুটে উঠেছে বেশ ভালোভাবেই। আগের ম্যাচে ১৪৯ রান তুললেও এবার নাসুম আহমেদ, মেহেদী মিরাজ, শরীফুল ইসলামদের তোপে তারা গুটিয়ে যায় ১০৮ রানেই। পরে তামিম ইকবালের অপরাজিত ৫০ ও লিটন দাসের ২৭ বলে ৩২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ জিতেছে ১৭৬ বল বাকি থাকতেই।

রান তাড়ায় তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে আসেন আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বীকৃত দুই স্পিনারই বাঁহাতি, নিশ্চিতভাবেই এমন কৌশলের পেছনে কাজ করেছে সেটি। শেষ পর্যন্ত নাজমুল উইকেট ছুড়ে আসার আগে কাজেও দিয়েছে তা। ১২ ওভারেই দুজন মিলে তোলেন ৪৮ রান। নাজমুল ফিরলেও তিনে নামা লিটনের অনায়াস ব্যাটিং কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছেন। ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ কঠিন উইকেটেও তিনি খেলেছেন ৬ চারে ২৭ বলে ৩২ রানের ইনিংস। অধিনায়ক তামিমের ৬২ বলে ৫০ রানের ইনিংস নিশ্চিত করেছে—বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতে বাংলাদেশ সহজ জয়ই পাচ্ছে।

অর্ধশতক পেয়েছেন তামিম
এএফপি

এর আগে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশ তাসকিন আহমেদকে বাদ দেওয়ার ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নেয়। ২০১৮ সালের পর এই প্রথমবার দুই পেসার নিয়ে নামার কৌশলটা কাজেও দেয়। তাসকিনের জায়গায় আসা মোসাদ্দেক হোসেনকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করান তামিম, বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রুও এনে দেন তিনিই। অবশ্য সেটির জন্য ১১তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। ওই সময়ে রিভিউ বিপক্ষে যায় বাংলাদেশের, শাই হোপকে একই বলে কট-বিহাইন্ড ও স্টাম্পিং করার সুযোগ হারান নুরুল হাসান।

অবশ্য ধীরগতির স্পিন সহায়ক উইকেটে রান তুলতে শুরু থেকেই হিমশিম খাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশেষে মোসাদ্দেকের অফ স্টাম্প লাইনের বলটা মিস করে বোল্ড হন কাইল মায়ার্স।

এর আগেই অবশ্য প্রথম ওয়ানডে উইকেটটি পেতে পারতেন নাসুম, তাঁর বলেই শাই হোপকে কট-বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার। ফলে টানা তিন বার রিভিউ প্রথম ওয়ানডে উইকেট থেকে বঞ্চিত করেছে নাসুমকে। নাসুম অবশ্য সফল হতে সময় নেননি বেশি, শামার ব্রুকসকে বোল্ড করে পান প্রথম উইকেটটি।

রান উঠছে না, সঙ্গে পড়ছে উইকেট—ওয়েস্ট ইন্ডিজ পড়ে দ্বিমুখী চাপে। নাসুমের জন্য প্রথম উইকেটটি ছিল বাঁধ ভাঙার মতো, এরপর ৩ বলের মধ্যে তিনি নেন আরও ২ উইকেট। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন হোপ, আর মুখোমুখি প্রথম ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে আনেন পুরান।

নিজেদের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন নাসুম
এএফপি

রোভম্যান পাওয়েল ও ব্রেন্ডন কিং—দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারানো দুই ব্যাটসম্যান জুটি বাঁধেন এরপর। তবে সেটি টেকেনি বেশিক্ষণ। পঞ্চম বোলার হিসেবে ইনিংসের ২৪তম ওভারে প্রথমবারের মতো আসা শরীফুল আঘাত করেন নিজের দ্বিতীয় ওভারেই—বড় শটের চেষ্টায় গড়বড় করে ক্যাচ তোলেন পাওয়েল। আগের ম্যাচের সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথমবারের মতো সফল হন নিজের দ্বিতীয় স্পেলের পঞ্চম বলেই। আলগা শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন কিং। ঠিক পরের বলেই আকিল হোসেনের রানআউটে দুর্দশা আরও বাড়ে স্বাগতিকদের।

পরের ওভারে মিরাজকে টানা দুই চার মারেন পল, তবে বাংলাদশের দাপুটে বোলিং পারফরম্যান্সে সেটি তেমন বাগড়া বাধাতে পারেনি। পরের ওভারে এসে পরপর ২ বলে রোমারিও শেফার্ড ও আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে মিরাজ দাঁড়িয়ে যান হ্যাটট্রিকের সামনে। শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়নি, তবে ৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে নিজেদের মাটিতে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে হাজির হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া ছিল তাদের রেকর্ড।

শেষ পর্যন্ত সেটি ভাঙেনি কিমো পলের ২৪ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংস, গুড়াকেশ মোতির সঙ্গে তাঁর ২২ রানের দশম উইকেট জুটিতে। আগের ম্যাচে শেষ জুটি ভালোই ভুগিয়েছিল বাংলাদেশকে, এবার অবশ্য তেমন হয়নি। মোতিকে এলবিডব্লু করে ম্যাচে নিজের চতুর্থ উইকেটটি পান মিরাজ। নিশ্চিত করেন, আরেকটি দৃঢ় ভিত গড়ে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা।

সে ভিতে দাঁড়িয়ে সিরিজ জয়ের উৎসব করতে এরপর বেশি সময় নেননি তামিম-লিটনরা।