সাক্ষাৎকারে ডেভ হোয়াটমোর

‘সাকিব-তামিমদের দায়িত্ব তরুণদের কাজ সহজ করা’

শ্রীলঙ্কায় জন্ম, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। কোচিং-জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ কেটেছে উপমহাদেশে। দুই দফায় শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে কাজ করার সময় প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছেন, পরে কোচ হয়েছেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দলেরও। বিপিএলে এসেছেন ফরচুন বরিশালের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হয়ে। আর হোয়াটমোরের ঢাকায় আসা মানেই একটা পুনর্মিলনী! মিরপুরের একাডেমি মাঠে এক দিন আবেগে তামিম ইকবালকে আলিঙ্গন করছেন তো আরেক দিন তিনিই মাশরাফির আলিঙ্গনাবদ্ধ। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ কখনো ফিরে গেছেন অতীতে, কখনো সামনে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে-

প্রথম আলো:

অনেক দিন পর বাংলাদেশে ফিরে কেমন লাগছে?

ডেভ হোয়াটমোর: খুবই ভালো। বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই পরিচিত মুখ দেখছি। একটু অদ্ভুত লাগে বিষয়টা। কারণ, আমি ওদের চেহারা চিনতে পারছি, কিন্তু নাম মনে নেই। বাংলাদেশে ফেরাটা সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। অনেক অনেক মধুর স্মৃতির একটা জায়গা আমার জন্য।

প্রথম আলো:

এবার বাংলাদেশে এসে আগের তুলনায় কী ধরনের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন?

হোয়াটমোর: অনেক পার্থক্য। এবার বাংলাদেশে যা দেখছি, আর আগে যা দেখে গেছি, দুটোর মধ্যে কোনো মিল নেই। আমি নিশ্চিত, যে আর্থিক বিনিয়োগটা করা হয়েছে, বিশেষ করে হাই পারফরম্যান্স, ‘এ’ দল ও অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে, সেটার ফল বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন পাচ্ছে। আমার চুক্তির শেষের দিকেই ফলটা সামনে আসছিল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শিরোপা জেতার খবর আমাকে অবাক করেনি। সেটার ফল জাতীয় দলও পাচ্ছে। আমি নিশ্চিত নই এখন ঘরোয়া ক্রিকেট কেমন। তবে আগে যে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, সেটার ফল এখন তারা পাচ্ছে।

তামিমের সঙ্গে এক ফ্রেমে হোয়াটমোর। ম্যাচ নিয়ে হয়তো কোনো সলাপরামর্শ করছিলেন। এর আগে বাংলাদেশের কোচিং করানোয় তামিম তাঁর পুরোনো শিষ্য
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের ক্যারিয়ারের শুরুটা আপনি দেখেছেন। এখন তাঁরা ক্যারিয়ারের শেষ দিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের যাত্রাটাকে কীভাবে দেখেন?

হোয়াটমোর: ওরা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেবক। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। অনেক অনেক স্মরণীয় সিরিজ জয় এসেছে তাদের হাত ধরে। আর একজন তো লম্বা সময় ধরে বিশ্বের ১ নম্বর অলরাউন্ডারের জায়গা দখল করে রেখেছে। ওরা নতুনদের জন্য উদাহরণ। ওদের অর্জন নিশ্চিতভাবেই তরুণ প্রজন্মের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা।

বাংলাদেশে ফেরাটা হোয়াটমোরের কাছে সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

দীর্ঘদিন পর মাশরাফিদের সঙ্গে দেখা হয়ে কেমন লেগেছে?

হোয়াটমোর: ওহ, এটা কী জিজ্ঞেস করলেন! এটা তো সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়েছেন। সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতায় পরিবর্তন দেখেন হোয়াটমোর
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

এখন প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে খেলে বাংলাদেশ। কখনো কখনো জেতে, এমন একটা দল থেকে বাংলাদেশ এখন যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলে। এই পরিবর্তনটাকে কীভাবে দেখেন?

হোয়াটমোর: ফল তো সেটাই বলছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে। দেশের বাইরে চ্যালেঞ্জটা একটু কঠিন। তবে যখন আমি দেখি, ছেলেরা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারাচ্ছে, তখন দলটার ওপর বিশ্বাস বাড়ে। ছেলেদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের ক্যারিয়ার এখন সায়াহ্নে। নতুন একটা প্রজন্ম ধীরে ধীরে জাতীয় দলে জায়গা করে নিচ্ছে। নতুনদের প্রতি সাকিব-তামিমদের দায়িত্ব কী?

হোয়াটমোর: উত্তরটা নিশ্চয় আপনিও জানেন। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের একটা দায়িত্ব থাকে। ক্রিকেট তাদের যা শিখিয়েছে, সে জ্ঞানটা তরুণদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। দিন শেষে তরুণ যারা আছে, তাদেরই কাজটা করতে হবে। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে তাদের সাহায্য করা উচিত। সাকিব-তামিমদের মতো অভিজ্ঞদের দায়িত্ব তরুণদের কাজটা সহজ করা। দেখে মনে হচ্ছে, তারা সেটা করছেও।

বিপিএলে তরুণদের বেশি বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন হোয়াটমোর
প্রথম আলো
প্রথম আলো:

বিপিএলে ফরচুন বরিশালের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে কেমন লাগছে?

হোয়াটমোর: বিসিবির মূল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এটি। তরুণদের এখানে বেশি বেশি খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। ওরা অভিজ্ঞদের সঙ্গে খেলে শেখার সুযোগ পাবে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে দ্রুত অনেক কিছু শেখা যায়। বড় দর্শকের সামনে খেলা, টিভি সম্প্রচার-সবই খেলোয়াড়দের গড়তে সাহায্য করে। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার গুরুত্বটা আলাদা করে না-ই বা বললাম।