হাত দিয়ে বল ধরে আউটের যত গল্প

সেই মুহূর্ত। বল ধরতে যাচ্ছেন মুশফিকশামসুল হক

২০১৭ সালে এমসিসি আইনটা পরিবর্তন করেছে করুক। তাতে কি, লেন হাটন তারপরও আলাদা করেই রাখা যায়। টেস্ট ক্রিকেটে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হওয়া একমাত্র ব্যাটসম্যানের তা-ই তো থাকা উচিত। নাম থেকেই যে আউটের কারণ পরিষ্কার। প্রতিপক্ষকে ফিল্ডিং করতে বাধা দেওয়া।

‌‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ অন্য ব্যাপার। এটিরও নামেই পরিচয়। হাত দিয়ে বল ধরা। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের একটাই ঘটনা থাকলেও হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে এর আগেই আউট হয়েছেন সাতজন। মুশফিকুর রহিমের নামটা এই তালিকাতেই ঢোকা উচিত। তিনিও তো হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধেই আউট হয়েছেন। অন্য সাতজনের সঙ্গে একটা ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। বাকিদের প্রায় সবাই বল স্টাম্পের দিকে যাচ্ছে বলে রিফ্লেক্স অ্যাকশন থেকে বা আইন না জেনে হাত দিয়ে বল সরিয়ে দিয়েছেন। কেউ বা শিকার প্রতিপক্ষের অখেলোয়াড়ি আচরণের। কিন্তু মুশফিক যে বলটা হাত দিয়ে ধরেছেন, তা তো স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। এমনিতেই আউটটা বিচিত্র, মুশফিকেরটা বিচিত্রতর।

এর চেয়েও বিচিত্র হলো, এই আউটের নামও এখন ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’।  ক্রিকেটে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউটই যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২০১৭ সালের নভেম্বরে। ক্রিকেটের আইন প্রণেতা এমসিসি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এরপর থেকে কেউ হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে আউট হতে পারেন, তবে তা আর স্বতন্ত্র কোনো ডিসমিসালের ঘরে যাবে না। সেটি বিবেচিত হবে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হিসেবে। হুবহু সংজ্ঞা অনুসরণ করলে টেস্ট ইতিহাসে যে একজনই এভাবে আউট হয়েছেন, তাঁর নাম শুরুতেই বলেছি। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ওপেনার লেন হাটন।

উইকেটকিপার রাসেল এনডিনকে ক্যাচটা ধরতেই দিলেন না লেন হাটন। টেস্টে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হওয়ার একমাত্র ঘটনা
ফাইল ছবি

হাটনের কথা তো জানলেন। এবার কয়েকটা নাম বলি। রাসেল এনডিন, অ্যান্ড্রু হিলডিচ, মহসিন খান, ডেসমন্ড হেইন্স, গ্রাহাম গুচ, স্টিভ ওয়াহ ও মাইকেল ভন।

বলুন তো, এঁদের মধ্যে কী মিল?

কিছু নাম তো আপনার খুবই চেনা। হেইন্স, গুচ ও স্টিভ ওয়াহ, ভন....মহসিন খানকেও হয়তো অনেকে মনে রেখেছেন। সুদর্শন পাকিস্তানি ওপেনার, বলিউডের নায়িকাকে বিয়ে করে নিজেও যিনি সিনেমায় নতুন ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রথম দুজনকে একটু অচেনা লাগতেই পারে। তাহলে কি তাঁদের পরিচয়টা দিয়ে নেব? রাসেল এনডিন পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার। আর অ্যান্ড্রু হিলডিচ সত্তরের দশকে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার।

সাতটি নাম এবং শুরুর কথাগুলো থেকে বুঝে ফেলার কথা কী কারণে এঁরা ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা হয়ে আছেন। কারণ একটাই, এঁরা সবাই মুশফিকের অপরাধে অপরাধী। আউট হয়েছেন হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে! ক্রিকেটীয় ভাষায় যে আউটের নাম, ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’।

এই ছবিটা মাইকেল ভনের। বলটা যে তাঁর গ্লাভসে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন।
ফাইল ছবি

মুশফিকুর রহিমের ঘটনা তো এতক্ষণে বিস্তারিত জেনেই গেছেন। তাঁর আগের সাতজন কীভাবে আউট হয়েছেন, তা বোধ হয় জেনে নেওয়া যায় এই উপলক্ষে। তালিকায় মুশফিকের আগেরজন মাইকেল ভনের ঘটনাটাই আগে বলে নিই। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টের ঘটনা। ভন সুইপ করেছিলেন। বল উঠে যায় সোজা ওপরে। সেটি তাঁর হাত আর প্যাড হয়ে মাটিতে পড়ার পর তিনি তা তুলে শর্ট লেগ ফিল্ডারকে দিতে গিয়েছিলেন। ভারতীয়রা আপিল করায় আম্পায়ার আঙুল তুলতে বাধ্য হন। ভন অনুমিতভাবেই খুব অসন্তুষ্ট হন, পরে এটিকে ‘খেলার চেতনাবিরোধী’ বলেও দাবি করেন।

স্টিভ ওয়াহর ঘটনাটাও একই বছরে। ভেঙ্কট লক্ষ্মণের ২৮১-তে অমর হয়ে থাকা সেই ২০০১ ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। চেন্নাইয়ে সিরিজের শেষ টেস্টে স্টিভ ওয়াহর ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হওয়াতেই বদলে গিয়েছিল পুরো ম্যাচের গতিপথ, সিরিজেরও। চেন্নাই তো শুরু হয়েছিল ১-‌১ স্কোরলাইন নিয়ে। হরভজন সিংয়ের বল সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ স্টিভ ওয়াহর প্যাডে বল লাগতেই সমস্বরে এলবিডব্লুর আবেদন করেছিলেন ভারতীয় ফিল্ডাররা।

স্টিভ ওয়াহ, স্টাম্পমুখী বল হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আউট
ফাইল ছবি

উদ্বিগ্ন দৃষ্টির পুরোটাই আম্পায়ারের প্রতিক্রিয়ার দিকে নিবন্ধ থাকায় স্টিড ওয়াহ আর বলের দিকে খেয়াল করেননি, বল উইকেটের দিকে যাচ্ছে দেখে নন–স্ট্রাইকার ম্যাথু হেইডেন চিৎকার করে সাবধান করেন তাঁকে। চমকে যাওয়া স্টিভ ওয়াহর হাত রিফ্লেক্স অ্যাকশনে এগিয়ে যায় বলের দিকে। নিয়মটা তাঁর জানা, কিন্তু তারপরও হাত সরিয়ে নেওয়ার আগেই সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হলো, ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান রাসেল এনডিনও জড়িয়ে আছেন সত্যিকার অর্থেই ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের একমাত্র উদাহরণটির সঙ্গে। ১৯৫১ সালে ওভালের সেই টেস্টেই অভিষেক রাসেল এনডিনের। হাটনের রান তখন ২৭, অফ স্পিনার অ্যাথল রোয়ানের বল তাঁর ব্যাটে লেগে উঠে যায় শূন্যে, কিন্তু হাটন ব্যাট দিয়ে বলটিকে সরিয়ে দেওয়ায় সেভাবে তা ধরার চেষ্টাই করতে পারেননি এনডিন। দক্ষিণ আফ্রিকান ফিল্ডারদের সমস্বরে আপিলের জবাবে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটটি দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার ডাই ডেভিস।

তখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে আউট হননি কোনো ব্যাটসম্যান। ভাগ্যের কী পরিহাস, বছর ছয়েক পর যা প্রথম হলেন হাটনের হ্যান্ডলড দ্য বল আউট হওয়ার কারণ সেই রাসেল এনডিন! ১৯৫৬-৬৭ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৩৮৫ রান করতে পারলে সিরিজে সমতা আনতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা—এমন অবস্থায় চতুর্থ দিন শেষে স্বাগতিক দলের স্কোর ২ উইকেটে ৪১। এনডিন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের একজন। শেষ দিন সকালে ৪০ মিনিট ব্যাট করেও আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে কিছু যোগ করতে পারলেন না। এরপরই টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার জিম লেকারের একটি বল প্যাডআপ করলেন। বল উঠে গেল শূন্যে। এনডিন হাত দিয়ে সরিয়ে না দিলে হয়তো তা স্টাম্পেই পড়ত।

টেস্টে অস্বাভাবিক আউট
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

বেশ কয়েক বছর পর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এনডিন যা বলেছিলেন, তা স্টিভ ওয়াহর ঘটনাই। তিনি যা করেছিলেন, তা রিফ্লেক্স অ্যাকশন থেকেই—এ কথা জানানোর পর এতে যে তাঁর হকি ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনো ভূমিকা নেই, এটা জানানোও কর্তব্য মনে করেছিলেন। হকির কথা বলার কারণ ছিল, ক্রিকেটের মতো হকিতেও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন এনডিন। শুধু প্রতিনিধিত্বই করেননি, নেতৃত্বও দিয়েছেন দেশকে। তারপরও প্রশ্ন জাগে, ক্রিকেটে হ্যান্ডলড্ দ্য বল আউট হওয়ার সঙ্গে হকির কী সম্পর্ক? সম্পর্ক হলো, ওই সময়ে হকিতে বল হাতে ধরে তা পায়ের কাছে নিশ্চল করে রাখা আইনসিদ্ধ ছিল!

স্যার লেন হাটন যেমন ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হওয়ার পর আর কোনো সঙ্গীই পাননি, এনডিনও তেমনি নিঃসঙ্গ ছিলেন প্রায় ২২ বছর। ২২ বছর পর যে সঙ্গী পেলেন, সে জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার সরফরাজ নেওয়াজের অখেলোয়াড়োচিত আচরণের। ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হওয়া সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে বাকি ছয়জনই বলে হাত লাগিয়েছেন আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে (মাইকেল ভনের যদিও অন্য দাবি)। কিন্তু বেচারা হিলডিচকে তাঁর সৌজন্যের জবাবে পেতে হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। যে কারণে অন্যরা যেখানে ‘এটা কী করলাম’ ভেবে হতচকিত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন, অ্যান্ড্রু হিলডিচ তা ছেড়েছেন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে।

হ্যান্ডলড দ্য বল আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার রাসেল এনডিন। ছবিটা হয়তো টিভি থেকে নেওয়া। তারপরও এনডিন কী করেছেন, তা বোঝা যাচ্ছে।
ফাইল ছবি

পার্থে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সেই টেস্টের আগেই দুদলের সম্পর্কে এমন দাঁড়িয়েছিল যে, টেনেটুনেও সেটিকে মোটামুটি বলা যাচ্ছিল না। জয়ের জন্য ২৩৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে রিক ডার্লিংয়ের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ৮৭ রান তুলে ফেলার পর হিলডিচ শিকার ওই বিতর্কিত ঘটনার। ডার্লিংয়ের খেলা সরফরাজ নেওয়াজের একটি বল সোজা সিকান্দার বখতের হাতে চলে যেতে দেখে রান নিতে গিয়েও নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ফিরে আসেন হিলডিচ। স্টাম্পে থ্রো করতে গিয়ে রান আউটের সম্ভাবনা নেই দেখে সিকান্দার বখতও আর ঝুঁকি নেননি, বোলারের দিকে ফিরিয়ে দেন বল। সামনে দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া সেই বল তুলে সরফরাজকে দিতে গিয়েছিলেন হিলডিচ, কিন্তু বল হাতে না নিয়ে তারস্বরে আপিল করতে শুরু করেন সরফরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ক মুশতাক মোহাম্মদ এই আপিল প্রত্যাহার করে নেবেন—সম্ভবত এটা আশা করেই বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চল ছিলেন আম্পায়ার টনি ক্রাফটার । কিন্তু মুশতাকও তার বোলারের অভব্য আচরণের প্রতি মৌন সমর্থন জানালে বাধ্য হয়েই তর্জনী তুলে দিতে হয় তাঁকে।

‘হ্যান্ডলড দ্য বল’-এর আউট হওয়ার পরের ঘটনাটিও এই দুই দেশের খেলাতেই এবং সেবারও মাঠের পরিস্থিতি ছিল রীতিমতো উত্তপ্ত । অস্ট্রেলিয়ার ২৮৪ রানের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে নামা পাকিস্তানের ওপেনার মহসিন খানের বিপক্ষে একটি কট বিহাইন্ডের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর অসন্তোষটা ভালোমতোই প্রকাশ করেছিলেন ফাস্ট বোলার জিওফ লসন। তাঁর সেই প্রতিক্রিয়া দেখে করাচির কলহ প্রবণ দর্শকেরা প্রবল উৎসাহিত হলো, মাঠে অস্ট্রেলীয় ফিল্ডারদের প্রতি ইট আর পাথরবৃষ্টি চলল কিছুক্ষণ। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ বলটিতে ব্যতিক্রমী প্রতিশোধ নিলেন লসন। তাঁরই একটি বল রক্ষণাত্মকভাবে খেলে, উইকেটমুখী যাত্রা থেকে সেটিকে সরিয়ে দিতে গ্লাভস ব্যবহার করলেন মহসিন খান। পরে বলিউডে হিরো হিসেবে আবির্ভূত মহসিন খানকে ফিরতে হলো ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়ে।

এনডিন ‘হ্যান্ডলড্ দ্য বল’-এর প্রথম শিকার হওয়ার সময় আম্পায়ারকে হয়তো আইনটি বুঝিয়ে বলতে হয়েছিল। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই আর তা প্রয়োজন হওয়ার কথা নয় । আইনটি তো খেলোয়াড়দের জানা-ই! বিস্ময়কর হলো, নিজে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেসমন্ড হেইন্স তা জানতেন না!

এনডিন ‘হ্যান্ডলড্ দ্য বল’-এর প্রথম শিকার হওয়ার সময় আম্পায়ারকে হয়তো আইনটি বুঝিয়ে বলতে হয়েছিল। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই আর তা প্রয়োজন হওয়ার কথা নয় । আইনটি তো খেলোয়াড়দের জানা-ই! বিস্ময়কর হলো, নিজে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ডেসমন্ড হেইন্স তা জানতেন না! ‘৮৩-এর বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের বদলা নিতে আসা ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ শক্ত চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছিল মুম্বাইতে, প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত করে ফেলেছিল ৪৬৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবশ্য তাতেও খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ধাক্কাটা খেল তাঁরা শুরুতেই। কপিল দেবের বলে ফরোয়ার্ড খেলার পর সে বল যখন শূন্য পথে স্টাম্পমুখী যাত্রা শুরু করেছে, নিচু হয়ে হাত দিয়ে তা সরিয়ে দেন হেইন্স।

সুনীল গাভাস্কারের ‘রানস ইন রুইনস’ বইয়ে এই ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে আছে হেইন্সের আশ্চর্য প্রতিক্রিয়ার কথাও। তাঁকে আউট দেওয়ার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন হেইন্স। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, আম্পায়ার তাঁকে এলবিডব্লু আউট দিয়েছেন। যে কারণে বলটি যে তিনি খেলেছেন মানে বল তাঁর ব্যাটে লেগেছে, তা প্রমাণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পর গাভাস্কারের এক লাইনের মন্তব্য, ‘এমনকি টেস্ট খেলোয়াড়রাও যে সব সময় নিয়ম জানে না, এটিই তার প্রমাণ।’

এখানে গ্রাহাম গুচ
ফাইল ছবি

২২ বছর বিরতির পর পাঁচ বছরের মধ্যে তিন-তিনটি ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট দেখে ফেলেছিল টেস্ট ক্রিকেট। এরপর আবার এক দশকের বিরতি। এক দশক পর গ্রাহাম গুচও নাম লেখালেন এই দলে। ১৯৯৩ অ্যাশেজ সিরিজে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ইংল্যান্ডের ম্যাচ বাঁচানোর আশা হয়ে উইকেটে ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছিল গ্রাহাম গুচের ব্যাট। ব্যাটে অনেক দিনের রান-খরা কাটিয়ে প্রথম ইনিংসে ৬৫, এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ২২৩ রানের মধ্যে তার নিজের অবদান যখন ১৩৩. তখনই সর্বনাশ। গল্পটা বাকি আউটগুলোর মতোই। মার্ভ হিউজের বল রক্ষণাত্মকভাবে খেলার পর সেটি লাফিয়ে উঠল তাঁর পেছনে। বল স্টাম্পের দিকে যাচ্ছে দেখে ডান হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিলেন গুচ। অস্ট্রেলীয়দের আপিলে আঙুল তুলে দিতে হলো আম্পায়ার ডিকি বার্ডকে ।

লেখার শুরুতে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ প্রসঙ্গে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটটির কথা এসেছিল। তখন থেকেই মনে হচ্ছে মহিন্দর অমরনাথের নামটা উল্লেখ না করলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থাকবে। লেখাটা টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে, নইলে এই দুটি আউটসংক্রান্ত আলোচনায় প্রথমেই তো আসা উচিত জিমি অমরনাথের নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষকে ফিল্ডিংয়ে বাধা দেওয়া এবং হাত দিয়ে বল ধরা—দুভাবেই আউট হওয়ার কীর্তি (!) তো একমাত্র তাঁরই। তবে জিমির এই ‘ডাবল’টি টেস্টে নয়, একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে! মহিন্দর অমরনাথের কারণেই এই দুটি আউটকে একীভূত করে দেওয়া হয়েছে কি না, কে জানে!