একটু সম্মান চান সোনাজয়ী শারমিন
বাঁধিয়ে রাখা ছবিটার দিকে প্রায়ই তাকিয়ে থাকেন শারমিন ফারজানা। ১৮ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা মুহূর্তের ছবি। ছবিটা ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির। তাতে উদ্যাপনের মধ্যমণি হয়ে আছেন ঢাকা এসএ গেমস তায়কোয়ান্দোতে সোনাজয়ী শারমিন।
বাংলাদেশ আনসারের খেলোয়াড়ের হাত উঁচিয়ে ধরেছেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা, কেউ বিজয়ের ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন। শারমিনের চোখে জল।
ফেসবুকে কিছুদিন আগে শারমিন ছবিটি পোস্ট করলে হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ডালিয়া আক্তার মন্তব্য করেন, ‘সোনালি স্মৃতি। অনেক সাধনার সোনা।’ শারমিন পাল্টা লেখেন, ‘যার কোনো মূল্যই নেই।’
আসলে শারমিনের কাছে এসএ গেমসের সোনার পদক এখন শুধুই একটা ধাতব পদার্থ। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা সোনাজয়ী খেলোয়াড়ের দিন কাটছে হতাশা আর অর্থসংকটে।
চোটের কারণে তায়কোয়ান্দোতে ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি শারমিন। চিকিৎসকের পরামর্শে মারামারির খেলা ছেড়ে হ্যান্ডবলে যোগ দিলেও পিঠের ব্যথার জন্য পরে সেটিও ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ভুগছেন থাইরয়েডের সমস্যায়। চিকিৎসার খরচ মেটাতে প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা।
চোটের কারণে আর খেলতে পারছেন না বলে বাংলাদেশ আনসার থেকে শারমিনের খেলোয়াড় হিসেবে সংযুক্তি বাতিল হয়েছে ৫ এপ্রিল। বর্তমানে তিনি রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে মহিলা আনসার পদে কর্মরত।
দায়িত্বটা মূলত অফিস সহকারীর, আনসার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ফুটফরমাশ খাটাই তাঁর কাজ। কিন্তু এমন কাজ মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না সোনাজয়ী এই সাবেক খেলোয়াড়, ‘এত দিন খেলাধুলার পর এখানে এসে এমন কাজ করতে কষ্ট লাগে।
আনসার একাডেমিতে খেলোয়াড় হিসেবে সম্মান নিয়ে থাকতাম। খেলা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করতে হবে, ভাবিনি। চাকরিটা না করলে আমার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। চাইলেও তাই চাকরি ছাড়তে পারব না।’
খেলা ছাড়ার পর তায়কোয়ান্দো কোচেস কোর্স করেছেন শারমিন। শেষ করেছেন শারীরিক শিক্ষা কোর্সের (বিপিএড) ওপর স্নাতকও। এখন সম্মানজনক কোনো পদে কাজ পেলেই খুশি তিনি, ‘আমার বিপিএড সার্টিফিকেট আছে। এর চেয়ে ভালো কোনো পদে কাজ করার সুযোগ থাকলে ভালো হতো।’
কিন্তু সেই সুযোগ আপাতত নেই শারমিনের। বাংলাদেশ আনসারের সহকারী পরিচালক (ক্রীড়া) রায়হান উদ্দিন ফকির বলেছেন, ‘সে যে পদে চাকরিতে ঢুকেছে, সেই পদেই কাজ করবে, এটাই নিয়ম।’
দেশের হয়ে সোনাজয়ী শারমিনের একটু সম্মান পাওয়ার আশাটা কি তবে পূরণ হবে না?