পানিতে নামতে চান সাঁতারুরা

মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সের পুলে এখন কেবলই নিস্তব্ধতা।ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাজ্যের রমফোর্ড সুইমিং ক্লাবে গত জুন থেকে অনুশীলন করছেন জুনায়না আহমেদ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডনের এই কিশোরী সাঁতারু সপ্তাহের ছয় দিনই অনুশীলন করেন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে থাকা সাঁতারু আরিফুল ইসলাম অনুশীলন শুরু করেছেন জুলাই থেকে।

জুনায়না ও আরিফুল একদিক দিয়ে ভাগ্যবান। দেশের বাইরে আছেন বলেই করোনাভাইরাসের সময়ও অনুশীলন চালিয়ে নিতে পারছেন বাংলাদেশের এই দুই সাঁতারু। অথচ দেশে থাকা সাঁতারুরা করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আর পানিতেই নামেননি। কবে নামতে পারবেন, সেটাও অজানা।

পানিতে নামলে ঠান্ডা লাগার ভয়, আর ঠান্ডায় করোনা ছড়াতে পারে। এই আশঙ্কায় বন্ধ আছে সাঁতারুদের অনুশীলন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে অনুশীলনের সরকারি নির্দেশনার পরও সাঁতারে নেই কোনো উদ্যোগ। বাংলাদেশ আনসারের সাঁতারুদের ক্যাম্প স্থগিত আছে সাত মাস। নৌবাহিনীর ২৭ জন সাঁতারুর কেউই পানিতে নামেন না। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ক্লাবগুলোতেও অনুশীলন বন্ধ। আর্মি সুইমিংপুলে সংস্কারকাজ চলছে। তাই সেনাবাহিনীর সাঁতারুরা সেপ্টেম্বর থেকে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের একটি সুইমিংপুলে শুধু এক বেলা অনুশীলন করছেন।

মায়ের অসুস্থতার জন্য ২৩ অক্টোবর দেশে এসেছেন আরিফুল। ১৩ নভেম্বর আবারও ফ্রান্সে ফিরবেন কিশোরগঞ্জের নিকলীর এই সাঁতারু। ১৫ নভেম্বর ফ্রান্সের নরমেন্ডিতে ৪৫টি ক্লাবের সাঁতারুদের নিয়ে হবে আন্তক্লাব সাঁতার। আরিফুল অংশ নেবেন ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বেও। পদকের আশায় চলছে আরিফুলের কঠোর অনুশীলন, ‘মাঝে কিছুদিন অনুশীলন বন্ধ থাকায় ফিটনেস কমে গিয়েছিল। টাইমিংয়েও অবনতি হয়েছিল। এখন স্বাভাবিক টাইমিংয়ে ফিরতে কঠোর অনুশীলন করছি।’

সুইমিং কমপ্লেক্সে এখন জমছে ময়লা।
ছবি: প্রথম আলো

আরিফুল যখন ইউরোপে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশের সাঁতারুরা তখন অলস সময় পার করছেন। অথচ আন্তর্জাতিক সাঁতার সংস্থা ফিনা এরই মধ্যে ভার্চ্যুয়ালি অল্পবিস্তর প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। অবশ্য বাংলাদেশের সামনে আন্তর্জাতিক কোনো সূচিও নেই। অনলাইনে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ারও আগ্রহ নেই ফেডারেশনের।

তবে লম্বা বিরতির পর সাঁতারুরা এবার পানিতে নামতে চান। নৌবাহিনীর সাঁতারু অনিক ইসলাম তো চোখ রাখছেন বাংলাদেশ গেমসেও, ‘আমরা পানিতেই নামতে পারছি না। শরীরও ফিট থাকছে না। বাংলাদেশ গেমসের তারিখ ঘোষণা করলে বিপদে পড়তে হবে। আমরা অনুশীলন করতে চাই।’

ক্যাম্প বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়ার আমলায় নিজ উদ্যোগে সাঁতারুদের এক সপ্তাহ অনুশীলন করিয়েছেন আনসারের কোচ আমিরুল ইসলাম। গত ২৫ অক্টোবর সাগরখালী সুইমিং ক্লাবের আয়োজনে কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আজমপুর ঘাট পর্যন্ত ৩২ জন সাঁতারুর অংশগ্রহণে ১০ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অনুশীলন ও প্রতিযোগিতা কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন আমিরুল, ‘আমার এখানে আনসার ও বিকেএসপির বেশ কজন সাঁতারু আছে। ওরা সব সময় বলে, “স্যার, কবে খেলা শুরু হবে? আমরা কবে পানিতে নামতে পারব?” আমি উত্তর দিতে পারি না। এ জন্যই দূরপাল্লার এই প্রতিযোগিতা করেছি। কিন্তু এভাবে সাঁতারুদের পারফরম্যান্সের উন্নতি হবে না। ওদের প্রয়োজন সুইমিংপুলে দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলন।’

দ্রুতই জমে উঠুক সুইমিং পুল, চান সাঁতারুরা।
ছবি: প্রথম আলো

অনুশীলনে না থাকলে মাংসপেশি আড়ষ্ট হয়ে যায়। অল্পতেই ক্লান্তি ভর করে সাঁতারুদের মধ্যে। লন্ডন থেকে মুঠোফোনে জুনায়না বলছিলেন, ‘সাঁতার এমন একটা খেলা, যেখানে দুই সপ্তাহ অনুশীলন না করলেই পারফরম্যান্স শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। স্বাভাবিক পারফরম্যান্সে ফিরতে অনেক সময় লাগে। শুরুর দিকে লকডাউনের কড়াকড়ি থাকায় অনুশীলন করতে পারিনি। এরপর পানিতে নেমে ক্লান্তির জন্য সাঁতরাতে পারতাম না। এখন প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা অনুশীলন করি। কিন্তু এটাও যথেষ্ট মনে হয় না।’

লক্ষ্যহীনভাবে অনুশীলন করতে হচ্ছে বলে খারাপ লাগে জুনায়নার, ‘ফেডারেশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু কোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সূচি জানাতে পারে না তারা।’ সেনাবাহিনীর সাঁতারু জুয়েল আহমেদও একই কথা বললেন, ‘আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। লক্ষ্য ছাড়া অনুশীলন করা কষ্টকর।’

করোনার মধ্যেই এখন কিছু ফেডারেশন সীমিত পরিসরে টুকটাক খেলার উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু সাঁতার হয়ে আছে স্থবির। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ অবশ্য আশা দিলেন, দ্রুতই শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প, ‘আমাদের ফেডারেশনে নতুন সভাপতি (নৌবাহিনীর প্রধান) এসেছেন। তাঁর সঙ্গে সভা করে দ্রুতই জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু করব।’