মাঠে ফেরার আশায় দিন কাটছে ফজলে রাব্বিদের

গত বছর অনুশীলন ক্যাম্পে ফিটনেস যাচাই করে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২১ দলের হকি খেলোয়াড়েরা।ছবি: প্রথম আলো

মাঠে খেলা নেই বলে অলস সময় কাটছে ফজলে রাব্বি, আশরাফুল ইসলামদের। তিন দফা পেছানোর পর আগামী ১ থেকে ১০ জুলাই ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-২১) এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্ট। কিন্তু আবারও পিছিয়ে গেছে ১০ দেশের এই জুনিয়র এশিয়া কাপ। ক্যাম্প বন্ধ আর টুর্নামেন্ট পেছানোর খবর শুনতে শুনতে যেন ক্লান্ত হকি খেলোয়াড়েরা। দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জুলাইয়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের অনুমতি দেয়নি সরকার।

টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা সম্ভব কি না, তা জানতে চেয়ে গত সপ্তাহে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। সরকারের পক্ষ থেকে কাল সেই চিঠির জবাব পেয়েছেন কর্মকর্তারা। হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ জানিয়েছেন, ‘সরকার জুলাইয়ে জুনিয়র এশিয়া কাপ আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি খারাপ। এতগুলো দেশ এনে টুর্নামেন্ট আয়োজনে ঝুঁকি থেকে যায়। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত দ্রুতই এশিয়ান হকি ফেডারেশনকে জানাব। তারা অন্য দেশগুলোকে এটা জানিয়ে দেবে।’

অনুশীলনে গা গরমের ফুটবল খেলা জুনিয়র হকি দলের। গত বছর অনুশীলন ক্যাম্প চলাকালে।
ছবি: প্রথম আলো

স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও এই টুর্নামেন্টে খেলবে ভারত, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, লিবিয়া, উজবেকিস্তান, চায়নিজ তাইপে ও ওমান। টুর্নামেন্টের সেরা চার দল অংশ নেবে ভারতে অনুষ্ঠেয় জুনিয়র বিশ্বকাপে।

গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো জুনিয়র এশিয়া কাপের আবাসিক ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খেলোয়াড়েরা যাঁর যাঁর বাড়িতে ফিরে গেছেন। লকডাউনে নিজেদের উদ্যোগে যতটুকু পারা যায় ফিটনেস ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন খেলোয়াড়েরা।

রাজশাহীর বৈকালী সংঘ থেকে উঠে আসা ফজলে রাব্বি চেষ্টা করেন সপ্তাহে দুয়েক দিন স্টিক হাতে মাঠে নামতে, ‘আমাদের বাড়ির পাশের ক্লাবে সপ্তাহে এক বা দুদিন খেলি। কিন্তু এমন অনুশীলনে কোনো লাভ হয় না।’

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২১ হকি দল। গত বছর অনুশীলন ক্যাম্পে।
ছবি: প্রথম আলো

জুনিয়র এশিয়া কাপের দলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন রাব্বি। কয়েক দফা পেছানোর পর ঢাকায় গত মার্চে হওয়ার কথা ছিল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকি টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টও স্থগিত করেছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ)। চার বছর ধরে মাঠে গড়ায় না প্রিমিয়ার হকি লিগ। করোনা পরিস্থিতিতে বাস্তবতা মানতে হবে খেলোয়াড়দের। কিন্তু এরপরও মাঠে ফিরতে মরিয়া এই খেলোয়াড়েরা। সবার হয়ে যেন সে কথা বলছিলেন রাব্বি, ‘আমরা মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছি। বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই কোনো চাকরি নেই। অনেকে হকি খেলা ছেড়ে দিতে চান। আমরা যদিও অন্যদের খেলা ছাড়তে নিরুৎসাহিত করি। কবে যে মাঠে ফিরতে পারব, সেই আশায় শুধু দিন গুনছি।’

জুনিয়র এশিয়া কাপের সূচি বারবার বদল হলেও অন্য দেশগুলো প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা নিয়মিত ক্যাম্পে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঈদের পর অবশ্য ক্যাম্প শুরুর আভাস দিয়েছিল ফেডারেশন। কিন্তু টুর্নামেন্ট পেছানোর নতুন খবরে সেই ক্যাম্পের ভাগ্যেও এখন উঠে গেল প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দলের অনুশীলন। গত বছর অনুশীলন ক্যাম্পে।
ছবি: প্রথম আলো

ডিফেন্ডার আশরাফুল ইসলাম ক্যাম্প চালুর জন্য চেয়ে আছেন ফেডারেশনের দিকে, ‘মহামারির এই পরিস্থিতিতে বলার কিছু নেই। কিন্তু এই টুর্নামেন্ট নিয়ে অনেক আশা ছিল আমাদের। আমরা যেহেতু অনেক দিন একসঙ্গে অনুশীলন করেছিলাম, সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারতাম। করোনার মধ্যেও ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশ যেভাবে অনুশীলন করছে, আমাদের যদি এভাবে ফেডারেশনের উদ্যোগে ক্যাম্প চালু হতো, তাহলে উপকার হতো।’

জাতীয় জুনিয়র দলের কোচ মামুনুর রশীদও বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে খেলানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বারবার টুর্নামেন্ট পেছানোর খবরে তিনিও হতাশ হয়ে পড়েছেন, ‘এখন পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়েও হয়তো শঙ্কা তৈরি হয়ে যাবে। এটা যদি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব না হতো, তাহলে হয়তো তেমন সমস্যা হতো না। এখান থেকে চার দল খেলবে বিশ্বকাপে, আমরাও স্বপ্ন দেখেছিলাম বিশ্বকাপে ওঠার। এটা আমাদের জন্য খারাপই হলো। ক্যাম্প না হলে আমাদের হোমওয়ার্ক করতে হবে। নতুন পরিস্থিতি সামনে রেখে কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। ওদের ফিটনেস নিয়ে নতুন করে কাজ করতে হবে।’