শেষের আগেও অজেয় মো ফারাহ

১০০০০ মিটারের সোনা জিতেছেন মো ফারাহ। সেই খুশিতে তাঁর বিখ্যাত ‘মো-বট’ উদ্‌যাপন স্ত্রী তানিয়া এবং দুই কন্যা আয়িশা ও আমানির। কাঁধে ছোট ছেলে হোসেইন না থাকলে হয়তো মো ফারাহ নিজেও স্ত্রী-কন্যার সঙ্গী হতেন l রয়টার্স
১০০০০ মিটারের সোনা জিতেছেন মো ফারাহ। সেই খুশিতে তাঁর বিখ্যাত ‘মো-বট’ উদ্‌যাপন স্ত্রী তানিয়া এবং দুই কন্যা আয়িশা ও আমানির। কাঁধে ছোট ছেলে হোসেইন না থাকলে হয়তো মো ফারাহ নিজেও স্ত্রী-কন্যার সঙ্গী হতেন l রয়টার্স

দৌড় তখনো শেষ হয়নি। কিন্তু বাকিরা এত পেছনে যে, সমাপ্তিরেখা ছোঁয়ার আগেই দুহাত ছড়িয়ে উদ্‌যাপন করতে শুরু করে দিলেন মো ফারাহ। সমাপ্তিরেখা পেরোনোর পর নুইয়ে ট্র্যাকে চুমু খেলেন। তারপর ছুটে গেলেন গ্যালারির দিকে, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে। এক হাতে পুত্র আর এক হাতে কন্যাকে কোলে তুলে নেওয়া ফারাহর মুখে তখন হাসি, চোখে কান্না।

হাসিটা আরও একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ১০০০০ মিটারে সোনা জয়ের। কান্নাটা সম্ভবত বিদায়ের। এটাই সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অ্যাথলেটের শেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, ১০০০০ মিটারেও দৌড়ালেন শেষবারের মতো। সোনা জিততে সময় নিয়েছেন ২৬ মিনিট ৪৯.৫১ সেকেন্ড। এ বছর ১০০০০ মিটারে যেটি দ্রুততম সময়। ২৬ মিনিট ৪৯.৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছেন উগান্ডার জসুয়া চেপতেগেই। কেনিয়ার পল তানুই ব্রোঞ্জ জিতেছেন ২৬ মিনিট ৫০.৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। আগামী শনিবার ৫০০০ মিটার ফাইনালই হবে ৩৪ বছর বয়সী ফারাহর ক্যারিয়ারের শেষ ইভেন্ট। এর আগে হিট আছে। তবে হিটে মো ফারাহর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

স্প্রিন্টে যেমন প্রায় এক দশক ধরে উসাইন বোল্টের রাজত্ব চলছে, দূরপাল্লার দৌড়ে সেই রাজত্বটা মো ফারাহর। বোল্টের মতো এটা তাঁরও শেষ টুর্নামেন্ট। তবে আলোটা বোল্টের ওপর বেশি থাকায় লন্ডনে ফারাহর বিদায়রাগিণী এত জোরে বাজছে না হয়তো।

নইলে কীর্তিতে ফারাহও তো নিজেকে প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন। লন্ডন ও রিও পরপর দুটি অলিম্পিকে ৫০০০ ও ১০০০০ মিটারের ‘ডাবল’। ২০১৩ মস্কো আর ২০১৫ বেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও একই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেছেন। এর আগে ২০১১ দেগু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ৫০০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন। পরশু জিতলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০০০ মিটারে টানা তৃতীয় সোনা। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক আসরে এটি তাঁর দশম সোনা।

দৌড় শেষ করে মো ফারাহর বাড়তি উচ্ছ্বাসের আরও একটা কারণ আছে। শেষ কয়েকটা ল্যাপ বাকি থাকার সময় বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের বুটের স্পাইকে চোট পেয়েছেন পায়ে। শেষ ল্যাপে তো একবার একজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়েই যাচ্ছিলেন। পরে সামলে নিয়েছেন। এসব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে জিতেছেন বলেই এ জয়টা তাঁর কাছে খুবই বিশেষ, ‘এটাই আমার সেরা পারফরম্যান্স। আমার জীবনের অন্যতম কঠিন দৌড়ও। উগান্ডান, ইথিওপিয়ান আর কেনিয়ানরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে আমাকে হারানোর। আমি শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। নিজেকে বলেছি—আমি হারতে পারি না, আমার দেশকে ডোবাতে পারি না।’

তবে ইচ্ছে করে কেউ তাঁকে মাড়িয়ে দেননি বলেই মনে করেন মো ফারাহ, ‘আমি এত লম্বা পা ফেলে দৌড়াই, এটা হতেই পারে। এর জন্য অন্য কাউকে দোষ দিতে চাই না। রিওতেও তো দুবার এ রকম হয়েছিল এবং আমি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম।’

স্পাইকের আঘাতে পা কেটে গেছে কয়েক জায়গায়। অথচ বুধবার ৫০০০ মিটারের হিট, শনিবার ফাইনাল। এর আগে কি সুস্থ হয়ে উঠবেন ফারাহ? নাইটহুড পাওয়া এই ব্রিটিশ অ্যাথলেট কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসী, ‘হয়তো কয়েকটা সেলাই লাগবে। তবে আমার হাতে যথেষ্ট সময় আছে। আশা করি, সমস্যা হবে না।’ এএফপি, রয়টার্স।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ফারাহ

                 ২০১১   ২০১৩   ২০১৫   ২০১৭

৫০০০ মিটার    সোনা  সোনা   সোনা    *    

১০০০০ মিটার    রুপা   সোনা   সোনা  সোনা

* এখনো বাকি