সামিউলের দিনে ১২ বছরের নন্দিনীর আলো

৩৪তম জাতীয় সাঁতারের দ্বিতীয় দিনে হয়েছে ৭ রেকর্ড। এর চারটিই সামিউলের। এ ছাড়া আলো কেড়েছে ১২ বছরের নন্দিনী।

সামিউল আজ চারটি রেকর্ড গড়েছেনছবি: বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন

দুপুর গড়াতেই মিরপুর জাতীয় সাঁতার কমপ্লেক্সে দর্শকের ভিড়। সংবাদকর্মীরাও কম ছিলেন না। সবার চোখ সামিউল ইসলামের দিকে।

দিনের শুরুতে রেকর্ড গড়া সামিউল দিনের শেষ ইভেন্ট ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ভেঙেছেন মাহফিজুর রহমানের এক যুগের পুরোনো রেকর্ড। ৩৪তম জাতীয় সাঁতারের দ্বিতীয় দিনে আজ হওয়া ৭ রেকর্ডের ৪টিই তাঁর। এমন রেকর্ডময় দিনে ডাইভিংয়ে আলো কেড়েছে ১২ বছরের নন্দিনী পাহান।

জাতীয় সাঁতারে এত দিন মেয়েদের ডাইভিং ছিল না। এবার তা যোগ হয়েছে। প্রথমবারেই বিকেএসপিতে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নন্দিনী ডাইভিংয়ের দুই ইভেন্টে সোনা জিতেছে।

আগের দিন ১ মিটার স্প্রিং বোর্ডে সোনা জেতার পর আজ ৩ মিটারেও প্রথম হয়ে উচ্ছ্বসিত নন্দিনী বলল, ‘আমি দুটিতে প্রথম হয়েছি। খুব ভালো লাগছে। ডাইভিংয়ে একদিন দেশসেরা হতে চাই।’  

আজ ৩ মিটার স্প্রিং বোর্ডে সোনা জিতেছে নন্দিনী
ছবি: বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন

নন্দিনীর এমন সাফল্যে গর্বিত তাঁর কোচ বিকেএসপির মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘নন্দিনী অল্প দিনেই ভালো করছে। আমি নিজেও ওর সাফল্য দেখে অবাক। আসলে ডাইভিংয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এখন যদি এদের দিকে নজর দেওয়া যায়, দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট খেলানো যায়, তাহলে আরও ভালো করবে।’

আরও পড়ুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে নন্দিনীর বাবা নকুল পাহান কৃষক। মা ঝর্ণা বালা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সে। বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে বড় খেলোয়াড় বানাবেন। সেই পথে এগোতে চায় নন্দিনীও। কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে নন্দিনী বলল, ‘আমার বাবা কৃষক। গ্রামে আরেকজনের জমিতে কাজ করেন। সবাই বাবারে কথা শুনায়। এটা আমার খুব খারাপ লাগে। বাবার ইচ্ছা আমি অনেক বড় হব। আমার বোন নন্দিতাও সাঁতারে আগ্রহী।’

কাজের ব্যস্ততায় খেলা দেখতে ঢাকায় আসতে পারেননি বাবা নকুল পাহান। তবে মেয়ের শ্রেষ্ঠত্বের খবরে খুশি তিনি। নন্দিনী বলে, ‘বাবা আসতে পারেননি কাজের জন্য। কিন্তু আমি ভালো করেছি শুনে অনেক খুশি হয়েছেন। বলেছেন ‘‘তুই অনেক দূর যাবি।’’’

দুই বোন লামিয়া ও সাদিয়ার মাঝে নন্দিনী
ছবি: বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন

নন্দিনীর পেছনে থেকে আজ দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে দুই বোন, ১২ বছরের লামিয়া ও ১০ বছরের সাদিয়া। লামিয়া হয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় সাদিয়া। কিশোরগঞ্জের নিকলীর মেয়ে তারা, খেলছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে। ডাইভিংয়ে তাদের নিয়েও স্বপ্ন দেখেন সেনাবাহিনী কোচ মোশারফ মিয়া, ‘আমরা এই দুজনকে তিন মাস হলো কিশোরগঞ্জ থেকে এনেছি। দ্রুত ওরা উন্নতি করছে। পরিচর্যা করলে ভবিষ্যতে ওরা সেরা হবে।’