দিয়ার আনন্দ, দিয়ার বিস্ময়

বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ দিয়া সিদ্দিকীছবি: শামসুল হক

টেবিল টেনিসের রানী জোবেরা রহমান লিনুর হাত থেকে যখন সোনালি ট্রফিটা নিচ্ছিলেন, দিয়া সিদ্দিকীর বিশ্বাসই হচ্ছিল না! মাত্র চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এর মধ্যে করোনায় খেলতে পারেননি দুই বছর। এই অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের আর্চারিতে কী দারুণভাবেই না আলো ছড়িয়েছেন দিয়া!

জন্মের পর মেয়ের ফুটফুটে মুখ দেখে বাবা নূর আলম সিদ্দিকী নাম রাখেন দিয়া। যে শব্দের অর্থ আলোকরশ্মি। কে জানত, এভাবে বাংলাদেশের আর্চারি আলোকময় করবেন দিয়া! প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের অভিষেকেই দিয়া বাজিমাত করেন। টঙ্গীতে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভের মেয়েদের এককে সেবার জেতেন সোনা।

বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে আগে যা হয়নি, ২০২১ সালে দিয়ার সৌজন্যে ঘটেছে সেই কীর্তি। ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসে খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো গেমসেরই কোনো ইভেন্টে বাংলাদেশ বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারেনি। ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ আর্চারি দল বাছাইপর্ব পেরিয়ে খেলেছে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টের চূড়ান্ত পর্বে। এই ইভেন্টে রোমান সানার সঙ্গী ছিলেন দিয়া। বাছাই পেরিয়ে মেয়েদের এককের প্রথম রাউন্ডেও খেলেন তিনি।

টেবিল টেনিসের রানী জোবেরা রহমান লিনুর হাত থেকে ট্রফি নিচ্ছেন দিয়া
ছবি: শামসুল হক

অলিম্পিকের আগে ২০২১ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডে বিশ্বকাপ আর্চারির স্টেজ টুতে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রুপা জেতে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে কালেভদ্রে ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশের জন্য এই অর্জন ছিল দিয়ার সৌজন্যেই। এরপর ঢাকায় এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার পদক জিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। সেই দলেও ছিলেন দিয়া। এত সব কীর্তি আর অর্জনের স্বীকৃতি পেয়ে দিয়া গতকাল জিতলেন ২০২১ সালের তীর-প্রথম আলো বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদের পুরস্কার।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠান শেষে বিকেএসপির আর্চার দিয়ার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন খেলার ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম আলোর পুরস্কার পেয়ে মুগ্ধ দিয়া তখনো বিস্ময়ের রাজ্যে, ‘আমি জানতাম না যে পুরস্কারটা পাচ্ছি। কিন্তু আমার সতীর্থরা বলছিল তুমিই পেতে পারো। এখানে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। শেষ পর্যন্ত এটা জিততে পেরে খুব খুশি লাগছে।’

বাংলাদেশের আর্চারিতে করে নেওয়া নিজের জায়গাটা আর ছাড়তে চান না দিয়া, ‘সাফের টুর্নামেন্টে যেতে পারিনি বলে খারাপ লাগছিল। এরপর জেদ ধরি যে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় ভালো করব। এক নম্বর হব। যাতে আমাকে কেউ বাদ দিতে না পারে। আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমার আত্মবিশ্বাস। কোচ ও বিকেএসপির স্যারেরা সহযোগিতা করেছেন। শেষ পর্যন্ত পেরেছি।’

আরও পড়ুন

নীলফামারী জেলা সদরে দিয়াদের বাড়ি। বাবা নূর আলম সিদ্দিকী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি। তিন ভাইবোনের মধ্যে দিয়া সবার বড় বলে ছোটবেলা থেকে একটু বেশিই আদর পেয়ে এসেছেন। পুরস্কারের খবরটা সবার আগে বাবাকেই জানিয়েছেন তিনি, ‘অনুষ্ঠানে আসার আগে বাবাকে বলেছিলাম পুরস্কার পেতে পারি। পুরস্কার জিতেই সবার আগে ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। বাবা ভীষণ খুশি।’