ক্রীড়াঙ্গনে ৮৪২ কোটি টাকা বাজেট বেড়েছে, একজন সাকিব কিংবা সিদ্দিকুর কি বেরিয়ে আসবে

প্রথম আলো গ্রাফিকস

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে—এই খবর ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে আশার সঞ্চার করবে। গতকাল সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের প্রস্তাবিত বাজেটে মন্ত্রণালয়টির জন্য ২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮৪২ কোটি টাকা বেশি।

মিনি স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, ইনডোর স্টেডিয়াম, প্রশিক্ষণ–সুবিধার আধুনিকায়ন, আইটি প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সিং কর্মসূচি, এমনকি কক্সবাজারের নারীদের জন্য ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ প্রকল্প—সবই আছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বাজেট কি ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণ ফিরিয়ে আনবে? ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্ন বাড়াবে?

আরও পড়ুন

বছর বছর বাজেট বাড়ে, প্রকল্প বাড়ে। অথচ মাঠে দেখা যায়, যে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প এক দশক আগে শুরু হয়েছিল, তার দ্বিতীয় পর্ব এখনো চলছে। কত উপজেলায় এখনো খোলা মাঠই নেই, সেখানে স্টেডিয়াম তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। বিকেএসপিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার কথা ছিল বহু আগে, অথচ সেখানে বহু কোচ অস্থায়ী চুক্তিতে, অনেক খেলোয়াড়ও সুযোগ না পেয়ে হারিয়ে যায়।

বাজেটের বেশির ভাগ অর্থই চলে যায় অবকাঠামো আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। আমরা বহু বছর ধরে সরকারকে বলে আসছি ভারোত্তোলনের নতুন সরঞ্জাম লাগবে, কিন্তু সেটা আমরা আর পাই না। খেলার সরঞ্জামের জন্যই যদি যুদ্ধ করতে হয়, তাহলে আর খেলার উন্নয়ন কীভাবে হবে, স্বপ্ন বাড়বে কীভাবে? তাতে বাজেট বেড়েই–বা কী লাভ আমাদের?
ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা

যুব উন্নয়নের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের যে প্রতিশ্রুতি, তা কি আসলেই পৌঁছাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের হাতে? নাকি থাকবে রাজধানীর সীমিত পরিসরে প্রজেক্ট অফিসের ফাইলে?

সাকিবের মতো আরেকজন ক্রিকেটার এখনো তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ
শামসুল হক

প্রতিবার বাজেটে একটি বাক্য থাকে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, ক্রীড়াবিদদের পুরস্কার, প্রতিভা অন্বেষণ...’—এই বাক্যগুলো এত বছর শুনতে শুনতে পুরোনো হয়ে গেছে, ঠিক যেমন পুরোনো হয়ে গেছে কিছু নির্দিষ্ট মুখ, সংস্থা ও রাজধানীকেন্দ্রিক মূল উন্নয়ন–পরিকল্পনা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দু-একজন সাফল্য এনে দিলে বাজেটের গুণগান হয়, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া হাজার হাজার ক্রীড়াবিদের গল্পটা থেকে যায় আড়ালে। তাঁদের খোঁজ আসলে কেউ রাখে না।

আরও পড়ুন

ক্রীড়াঙ্গনের মানুষেরা চান বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, বিকেন্দ্রীকরণ, পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা। যে টাকা বরাদ্দ হয়, তা যেন চলে যায় আসল প্রাপকদের হাতে। বিশাল গ্যালারিসমেত স্টেডিয়াম নয়, বাস্তবে চাই খেলার মাঠ। গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন নতুন ক্রীড়াবিদের চোখে আলোর ঝিলিক দেখা গেলে তবেই সেই বাজেট থেকে ফলপ্রসূ হয়।

কিন্তু বাজেট বাড়ার কথা শুনে নিরাশ কণ্ঠে ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজেটের বেশির ভাগ অর্থই চলে যায় অবকাঠামো আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। আমরা বহু বছর ধরে সরকারকে বলে আসছি ভারোত্তোলনের নতুন সরঞ্জাম লাগবে, কিন্তু সেটা আমরা আর পাই না। খেলার সরঞ্জামের জন্যই যদি যুদ্ধ করতে হয়, তাহলে আর খেলার উন্নয়ন কীভাবে হবে, স্বপ্ন বাড়বে কীভাবে? তাতে বাজেট বেড়েই–বা কী লাভ আমাদের?’

সিদ্দিকুরের মতো গলফারের দেখাও পায়নি বাংলাদেশ
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে

ক্রীড়াঙ্গনে বাজেট শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধ না থেকে হোক স্বপ্ন বাস্তবায়নের সেতু, যেটা গড়ে তোলে ভবিষ্যতের একজন সাকিব আল হাসান, একজন সিদ্দিকুর রহমান।
কীভাবে ফেডারেশনগুলোর চাহিদা পূরণ করা হবে, ফেডারেশনগুলোর জন্য বরাদ্দ কেমন বাড়ছে? এসব নিয়ে জানতে আজ সকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলে অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন বলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।