দেশসেরাদের হারিয়ে টিটিতে খই খই–চমক

বাংলাদেশের আগামীর টেবিল টেনিসের মুখ খই খই সাই মারমাসংগৃহীত

নাম তাঁর খই খই সাই মারমা। বাংলাদেশের আগামীর টেবিল টেনিসের মুখ। রাঙামাটি থেকে উঠে এসে এরই মধ্যে দেশের টিটিতে সাড়া ফেলেছেন মেয়েটি। দেশের প্রতিষ্ঠিত দুজন তারকাকে হারিয়ে উঠে আসার বার্তাই দিয়েছেন খই খই। ভবিষ্যতে মেয়েটি দেশের শীর্ষ নারী টিটি খেলোয়াড় হতে চলেছেন—এমন আশাবাদ অনেকেরই।

বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন আয়োজিত প্রাইজমানি র‌্যাঙ্কিং টিটি প্রতিযোগিতায় গত রাতে দ্বিমুকুট জিতেছেন ১৬ বছরের খই খই। বালিকা অনূর্ধ্ব-১৯ একক ও মেয়েদের সিনিয়র এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। গত বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার জুনিয়রে সেরা হন খই খই। সিনিয়রে এই প্রথম সেরা।

সিনিয়রে সেরা হওয়ার পথে খই খই কাল ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছেন বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নড়াইলের মাশরাফি ফাউন্ডেশনের সাদিয়া রহমানকে (মৌ)। সাদিয়া হেরেছেন ৩-১ ব্যবধানে। সাদিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বেশ কয়েকবার। তাঁকে হারানো সহজ নয়। খই খই যেন বড় একটা চমকই দিয়েছেন।

শুধু তা–ই নয়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোরে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় খই খই হারিয়েছেন দেশের আরেক শীর্ষ টিটি তারকা পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সোনাম সুলতানাকেও (সোমা)। গত বছর চট্টগ্রামে হওয়া  জাতীয় প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার ফোইনালে সোনাম সুলতানার কাছেই হেরেছিলেন খই খই। এবার সেই সোনামকে কোয়ার্টার ফাইনালে দাঁড়াতেই দেননি খই খই। হারিয়ে দিয়েছেন ৩-০ সেটে। বালিকা এককে হারিয়েছেন নড়াইলের মাশরাফি ফাউন্ডেশনের সামান্তা হোসেনকে (৩-২)। সিনিয়রের সেমিতে সামান্তাকে সেমিফাইনালে হারান খই খই।

আরও পড়ুন

খই খই টিটিতে পেয়েছেন বিকেএসপির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। দুই বছর আগে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন বিকেএসপিতে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। তার আগে বান্দরবানের লামায় কোয়ান্টাম স্কুলের ছাত্রী ছিলেন, যে স্কুলের ছাত্র ছিলেন জাতীয় টিটিতে পুরুষ বিভাগে বর্তমানে সেরা রামহিম লিয়ান বম। কোয়ান্টাম স্কুল অবৈতনিক। তাই বাড়ি থেকে অনেক দূরে হলেও খই খইকে এই স্কুলে পাঠায় পরিবার। আর সেখানেই তাঁর টিটির হাতেখড়ি।  

টিটিতে পুরুষ বিভাগে বর্তমানে সেরা রামহিম লিয়ান বমের সঙ্গে খই খই
সংগৃহীত

সেই সময়টা নিয়ে খই খই বললেন, ‘কোয়ান্টামে আমি ভর্তি হই ২০১৫ সালে। ওখানে বাছাই হতো কাকে কোন খেলায় দেবে। কোচেরা আমাকে দেন টিটিতে। প্রথম প্রথম মজা করে টিটি খেলতাম। পরে খেলাটা ভালো লেগে যায়। ভালোমতো শুরু করি ২০১৭-১৮ সালের দিকে।’

রাঙামাটির রাজস্থলি উপজেলা চুশাকপাড়ায় খই খইয়ের বাড়ি । বাসার সামনে নারা খিইয়ং খাল। সেটি পার হয়ে বাজারে যেতে হয়। খালে পানি বাড়লে আর বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। সে কথা জানিয়ে বাংলাদেশ টিটি ফেডারেশনের সহসভাপতি খন্দকার হাসান মুনীর বলেন, ‘কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে প্রবল বর্ষণ হলে ওদের বাড়ির সামনে একটি খাল আছে নাম‌, নারা খিইয়ং, ওটার ওপরের পুলটি ভেঙে গিয়ে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ছুটি শেষে যখন ক্যাম্পে ডাকছিলাম, তখন ও ভিডিওতে আমাকে দেখাল। কারণ, আমি বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলাম না যে বাড়ি থেকেই বের হওয়া যায় না।’

আরও পড়ুন

হাসান মুনীর মুগ্ধ খেলার প্রতি খই খইয়ের একাগ্রতা দেখে, ‘একটা মেয়ের এই খেলার প্রতি কতটা ভালোবাসা, অদম্য উৎসাহ ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে এ রকম একটি প্রতিকূল পরিবেশ থেকে উঠে এসে জাতীয় পর্যায়ের সেরা হয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পতাকা তুলে ধরে। তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’ টিটি ফেডারেশনের সহযোগিতার কথা বারবার বলছে খই খই। তাঁর কথা, ‘কোয়ান্টাম থেকে আমাদের চারজনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন হাসান মুনীর স্যার।’

খই খই টিটিতে পেয়েছেন বিকেএসপির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
সংগৃহীত

খই খইয়ের একমাত্র বোন স্লা হ্লা উ নার্সিং কোর্স করে নার্স হয়েছেন। পরিবারের আর্থিক অভাব আছে। খই খই বললেন, ‘আমাদের নিজস্ব জমি আছে। বাবা-মা দুজনই সেই জমিতে কাজ করেন। আমাদের মূল চাষ কলা, কচু, আদা, হলুদ—এসব।’

এখন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন খই খই। স্বপ্ন দেখেন নিজেকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার। দেশেকে এনে দিতে চান আন্তর্জাতিক সাফল্য। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জার্সিতে মালদ্বীপ, ভারতে জুনিয়র টুর্নামেন্ট খেলা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও নেপালে সিনিয়র বিভাগে খেলেছেন। সব জায়গাতেই রেখেছেন প্রতিভার ঝলক। কোরিয়ায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে, সেই জয়ের অংশ ছিলেন খই খইও।

আরও পড়ুন