সুনামিতে বাবাকে হারানো সাসাকির স্বপ্নপূরণের গল্প

এলএ ডজার্সের জার্সি গায়ে রোকি সাসাকি, গতকালের ছবিএএফপি

১৪ বছর আগে ভয়ংকর এক দিন এসেছিল জাপানে। ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের পর ভয়াল থাবা বাড়িয়ে ডাঙায় উঠে এসেছিল মহাসমুদ্র। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল হাজারো মানুষকে, লন্ডভন্ড করেছিল পুরো উপকূল।

সেই সুনামির দিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল ৯ বছর বয়সী এক ছেলে। তবে বাবা ও দাদা-দাদিকে হারানোর শোক সইতে হয়েছিল তাকে। সেই সময়ে আলাদা করে এই গল্প বলা হয়নি কোথাও। স্বজন হারানোর এমন গল্পই তো ছিল ঘরে ঘরে।

১৪ বছর পর সেই গল্প বিশ্ববাসী জানল সেই ছেলের কারণেই। ছেলে যে এখন বড় হয়েছে, হয়েছে তারকাও। ছেলেটির নাম রোকি সাসাকি, জাপানের বেসবলের বড় তারকা। ২৩ বছর বয়সী সাসাকিকে গতকালই দলে টানার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসবল লিগ মেজর লিগ বেসবলের (এমএলবি) দল লস অ্যাঞ্জেলস ডজার্স। সাসাকির আগমনে যুক্তরাষ্ট্রের বেসবল অঙ্গনে হইচই পড়েছে বেশ।

২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উঠে আসা সুনামি নাম-নিশানা মুছে দিয়েছিল সাসাকিদের শহর রিকুজেনতাকাতার। তাঁদের বাড়ি ভেসে গিয়েছিল। সেই সুনামি কেড়ে নেয় তাঁর বাবা কোতা সাসাকি ও দাদা-দাদিকেও।

জাপানি বেসবল খেলোয়াড় রোকি সাসাকি
এএফপি

ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সাসাকি ও তাঁর দুই ভাইকে নিয়ে তাঁদের মা আশ্রয় নেন অস্থায়ী এক আশ্রয়শিবিরে। এরপর কাছের আরেক শহরে বসত গড়েন তাঁরা। সেখানেই ধীরে ধীরে আবারও সবকিছু গোছাতে শুরু করে সাসাকি পরিবার। আর সেই সময়েই বেসবলে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান সাসাকি।

সুনামির ১০ বছর ২০২১ সালে সাসাকি বলেছিলেন বেসবল খেলাটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ, ‘আমি খেলাটার মধ্যে হারিয়ে যাই, ভুলে যাই কঠিন সেই দিনগুলোর কথা। ভাগ্যিস বেসবল খেলতে শুরু করেছিলাম।’

আরও পড়ুন

সুনামি যখন আঘাত করে সাসাকি স্কুলে ছিলেন। সাসাকি ও তাঁর সহপাঠীরা সে সময়ে পাশের টিলায় উঠে জীবন বাঁচান। সাসাকির বাবা-দাদা-দাদিসহ সেই সুনামি ১৮ হাজার মানুষ নিহত কিংবা নিখোঁজ হয়ে যান।

জাপানের বেসবলে অনেকগুলো রেকর্ড গড়েছেন রোকি সাসাকি
এএফপি

সেই ঘটনায় কতটা প্রভাব ফেলেছে তাঁর জীবনে সেটিও জানিয়েছেন সাসাকি, ‘আপনি যে জীবনটাকে নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন, সেই জীবনটা যদি হঠাৎই নাই হয়ে যায়, তাহলে কী হবে সেটি ভুক্তভোগী না হলে আপনি বুঝতে পারবেন না।’

সাসাকি শোক ভুলে বেসবলে মগ্ন হওয়ার পুরস্কার পেয়ে যান তাড়াতাড়িই। হাইস্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর নামডাক ছড়িয়ে পড়ে জাপানের বেসবলে। ২০১৯ সালে নিপ্পন প্রফেশনাল বাস্কেটবল ড্রাফটে সবার আগে তাঁকেই দলে নেয় চিবা লোত্তে মেরিনস।

আরও পড়ুন

সেই সাসাকি ২০২২ সালে ২০ বছর বয়সে বেসবল দুনিয়াকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেন। টানা ১৩টি স্ট্রাইকআউট করে জাপানি রেকর্ড গড়েন। সেই মৌসুমে জাপানি লিগের ১৬তম খেলোয়াড় পারফেক্ট গেমের কীর্তিও গড়েন সাসাকি। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কারাও বেসে পৌঁছাতে না পারাকেই বেসবলের পরিভাষায় পারফেক্ট গেম বলা হয়।

২০২৩ সালে জাপানকে ওয়ার্ল্ড বেসবল ক্ল্যাসিকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা রাখেন সাসাকি। সেই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি ম্যাচে ১০২.৫ মাইল গতির ফাস্টবল ছোড়েন সাসাকি। এরপরই আমেরিকান দলগুলো তাঁকে দলে নিতে কাড়াকাড়ি শুরু করে। যে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছে ডজার্স।

আরও পড়ুন