আর্জেন্টাইন ১১ বছর বয়সী ‘দাবার মেসি’র বিশ্ব রেকর্ড, সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার হাতছানি

ফাউস্তিনো ওরোওরোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

১১ বছর বয়সী ছেলেটির নাম ফাউস্তিনো ওরো। দাবায় অমিত প্রতিভাধর হওয়ায় অনেকে তাঁকে ‘চেস মেসি’ মানে ‘দাবার মেসি’ বলেও ডাকেন। ফুটবলের মেসিকে দাবায় টেনে আনার কারণও আছে। ছেলেটি যে আর্জেন্টাইন। মেসির নামের সঙ্গে মিলিয়ে কেউ কেউ তাকে ‘চেসি’ও বলেন।

গত সপ্তাহে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত লেজেন্ডস অ্যান্ড প্রডিজিস টুর্নামেন্টে অপরাজিত (৯ খেলায় ৭.৫ পয়েন্ট) চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের বয়স ক্যাটাগরিতে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ওরো।

গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পথে ১.৫ পয়েন্ট হাতে রেখে প্রথম নর্মটি পেয়েছে ওরো (খেতাবটি পেতে তিনটি নর্ম প্রয়োজন হয়)। ফিদের অক্টোবরের তালিকায় তাঁর জিএম রেটিং পয়েন্ট ২৫০৯। ওরো-ই দাবার ইতিহাসে অনূর্ধ্ব-১২ বছর বয়সী প্রথম খেলোয়াড়, যাঁর রেটিং ২৫০০-এর ওপরে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিমন্যু মিশ্রর গড়া সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের রেকর্ড ভাঙতে এখন ওরোকে আগামী চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় নর্ম পেতে হবে। ওরোর সামনে এ সময়ে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টও আছে—ভারতের গোয়ায় বিশ্বকাপ, গ্রিসে ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপ এবং আর্জেন্টিনার একটি ক্লোজড টুর্নামেন্ট।

অল্প বয়সেই দাবায় নজর কেড়েছে ওরো
ফিদে ফেসবুক পেজ

২০২১ সালে ১২ বছর ৪ মাস ২৫ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার রেকর্ড গড়েন অভিমন্যু। যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচটি ও বুদাপেস্টে আটটি টুর্নামেন্ট খেলে ২০০২ সালে সের্গেই কারিয়াকিনের গড়া রেকর্ড ভাঙেন অভিমন্যু। রাশিয়ান কারিয়াকিন ২০১৬ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ম্যাগনাস কার্লসেনের সঙ্গে ৬-৬ গেমে সমতায় ছিলেন। তবে র‍্যাপিড টাই-ব্রেকে হেরে যান। সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের তালিকায় দ্বিতীয় গুকেশ ডমরাজু বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

সম্প্রতি প্রথম সন্তানের বাবা হওয়া কার্লসেন অবসর নেওয়ার পর ওরো দাবার নতুন বৈশ্বিক তারকা হিসেবে তাঁর শূন্যতা পূরণ করবেন, এমনটাই মনে করছে এই খেলার সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম। ওরোর নামটাও সংক্ষিপ্ত এবং মনে রাখার হতো, যেটা তাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাগ্নানন্দা রমেশবাবু, নোদিরবেক আবদুসাত্তোরভ, ইয়ান নেপোমনিয়াশ্চি কিংবা নতুন রুশ প্রতিভা রোমান শোগঝিয়েভের চেয়ে এগিয়ে রাখে। গত বছর বুলেট ব্রল দাবায় কার্লসেনকেও হারিয়ে দেয় ওরো।

ওরোর খেলার ধরন সর্বজনীন। দীর্ঘ এন্ডগেমে যেমন লড়তে পারে তেমনি অবস্থানগত আক্রমণে প্রতিপক্ষকে চূর্ণও করতে পারে। কখনো আবার ১০ চালের মধ্যেই ড্র মানে কিংবা কল্পনাশক্তির দুর্দান্ত ব্যবহারে আক্রমণ সাজাতে পারে।  গত বছর জুনে দাবার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে আন্তর্জাতিক মাস্টারের খেতাব অর্জন করে ওরো। ২০১৯ সালে অভিমন্যুর ১০ বছর ৯ মাস ৩ দিন বয়সে গড়া রেকর্ড ভেঙে ১০ বছর ৮ মাস ১৬ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার নতুন রেকর্ড গড়ে ওরো।

২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর বুয়েনস এইরেসে জন্ম নেওয়া ওরোর দাবা খেলার শুরু ২০২০ সালে। দাবার প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন যার কাছে, সেই আন্তর্জাতিক মাস্টার হোর্হে রোসিতো গত বছর বুয়েনস এইরেস টাইমসকে বলেছেন, ‘ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে ফাউস্তির (ওরো) খেলার শুরু ২০২০ সালের মে মাসে। তখন কোভিড মহামারি চলছিল। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফাউস্তির বাবা আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমি তাকে প্রথম (দাবার) পাঠ দিই। তখন তার বয়স ৬ বছর।’

ওরোর খেলার ধরন নিয়ে রোসিতো তখন বলেছিলেন, ‘ওরোর সবচেয়ে বড় গুণ হলো হিসাব করার ক্ষমতা। এই বয়সে একটি বাচ্চার ছেলের এমন মানসিক দক্ষতা বোঝানো কঠিন। পাশাপাশি সে কৌশলগত দিক থেকেও দারুণ, যা আসলে বিস্ময়কর।’