- ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর শুরু
- বৃষ্টিস্নাত প্যারিস
- লেডি গাগার প্রস্তুতি
- জিদানের হাতে অলিম্পিক মশাল
- সিন নদীতে মার্চপাস্ট শুরু
- অলিম্পিক শরণার্থী দল ও ফ্রান্সের পতাকা
- গাগা শো
- মার্চপাস্ট ও উৎসবের আরও কিছু ছবি
- বৃষ্টিতে পিয়ানোর মূর্ছনা ও আয়া নাকামুরা
- গ্র্র্যান্ড প্যালেসের ছাদ থেকে জাতীয় সংগীত
- ভালোবাসার প্যারিস!
- মার্চপাস্ট ও উৎসবের আরও কিছু ছবি
- বৃষ্টিভেজা ফিফা সভাপতি
- ফাইনাল কাউন্টডাউন ও মার্চপাস্টে ফাইনাল দল ফ্রান্স
- মার্চপাস্ট শেষ, সিনের বুকে ঘোড়ায় চড়া জোয়ান অব আর্ক!
- আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি বললেন...
- আইফেল টাওয়ারে আলোর ঝরনাধারা
- মশাল প্রজ্বালন এবং তারপর...
- ...এবং সেলিন ডিওনের ফেরা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি
- অলিম্পিকে আলোকিত রাত
‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর শুরু
খেলাধুলায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উৎসবে স্বাগতম! বিশ্বের প্রায় সব দেশের ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলা অলিম্পিকের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। প্যারিসের সিন নদী থেকে শুরু হচ্ছে প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
ফুটবল ও রাগবি সেভেন শুরু হয়ে গেছে দুই দিন আগেই। গতকাল শুরু হয়েছে আর্চারি আর হ্যান্ডবলও। এখন বাকি ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য আয়োজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
প্যারিস অলিম্পিকে উড়বে ২০৬টি দেশের পতাকা। ৩২টি খেলার ৩২৯টি ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবেন ১০ হাজার ৫০০ জন অ্যাথলেট।
বৃষ্টিস্নাত প্যারিস
মেঘলা আবহাওয়ার পূর্বভাস দেওয়া হয়েছিল আগেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বৃষ্টিতে ভিজেছে প্যারিস। দুশ্চিন্তাও দেখা দিয়েছিল। অলিম্পিক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যারিসের দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্ক। কিছু ট্রেনযাত্রা বাতিল করায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে প্যারিসে আসা নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে দর্শকদের।
লেডি গাগার প্রস্তুতি
জিদানের হাতে অলিম্পিক মশাল
সিন নদীতে মার্চপাস্ট শুরু
অলিম্পিক ইতিহাসে এই প্রথম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে স্টেডিয়ামের বাইরে। প্যারিসের সিন নদীতে জাতীয় পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণকারী সব কটি দেশের অ্যাথলেটদের মার্চপাস্ট শুরু হয়েছে।
স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক, মার্চপাস্টে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিস থাকে সবার শুরুতে, সবার শেষে আয়োজক দেশ। অর্থাৎ মার্চপাস্টে সবার শেষে থাকবে ফ্রান্স।
অলিম্পিক শরণার্থী দল ও ফ্রান্সের পতাকা
গাগা শো
মার্চপাস্ট ও উৎসবের আরও কিছু ছবি
বৃষ্টিতে পিয়ানোর মূর্ছনা ও আয়া নাকামুরা
বৃষ্টি নেমেছিল। সিন নদীর পাড়ে ভিজতে ভিজতেই পিয়ানোয় সুর তুললেন বাদক। বৃষ্টি ও পিয়ানোর শব্দ মিলেমিশে একাকার!
মালি বংশোদ্ভূত ফরাসি সংগীতশিল্পী আয়া নাকামুরা পারফর্ম করেছেন। ফ্রান্সের রিপাবলিকান গার্ডের ৬০ জন সুরকার ও সামরিক বাহিনীর ৩৬ জন গায়কের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি। বিশ্বে ফরাসি ভাষার শিল্পীদের মধ্যে নাকামুরাকে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম করা হয়।
গ্র্র্যান্ড প্যালেসের ছাদ থেকে জাতীয় সংগীত
প্যারিসের ঐতিহাসিক ভবন গ্র্যান্ড প্যালেসের ছাদে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত গাইলেন ২০২৩ ভয়েস অব ওভারসিজ টেরিটরিজ জয়ী গায়িকা অ্যাক্সেলে সেইন্ট-সিরেল।
ভালোবাসার প্যারিস!
মার্চপাস্ট ও উৎসবের আরও কিছু ছবি
বৃষ্টিভেজা ফিফা সভাপতি
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে বেশ একপশলা ভিজতে হলো ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে গ্যালারিতে রেইনকোটও পরতে হলো তাঁকে। বেচারা!
ফাইনাল কাউন্টডাউন ও মার্চপাস্টে ফাইনাল দল ফ্রান্স
নদীর পাড়ে পাটাতনের মতো জায়গায় চলছে নাচ ও পার্টি সং। স্পিকারে ঝড় তুলেছে ‘ইউরোপ’ ব্যান্ডের ‘ফাইনাল কাউন্টডাউন’ গান। বড় উৎসবে গানটি যেন অপরিহার্য! লা বুঁশে ব্যান্ডের ‘বি মাই লাভার’ গানের সঙ্গেও তাল মেলালেন অনেকে।
ওদিকে অলিম্পিক মার্চপাস্টে রওনা হয়েছে স্বাগতিক ও শেষ দল ফ্রান্স।
মার্চপাস্ট শেষ, সিনের বুকে ঘোড়ায় চড়া জোয়ান অব আর্ক!
দৃশ্যটা অদ্ভুত। অবিশ্বাস্য। আইকনিক!
মার্চপাস্ট শেষে সিন নদীর বুকে ছুটল ধাতব ঘোড়া! তাতে নাইটদের মতো রুপালি পোশাকের একটি মেয়ে বসে। রুপালি হুডিতে মুখটা ঢাকা। মুখেও কি রুপালি মুখোশ? পিঠে তার অলিম্পিকের পতাকা। অর্পণ করতে ছুটে আসছে!
প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতব ঘোড়া সিনের বুক পাড়ি দিয়েছে। দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। সম্ভবত এবারের প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আইকনিক দৃশ্য হয়ে থাকবে। নদী পাড়ি দিয়ে সাদা ঘোড়ায় চড়ে সরাসরি মঞ্চে গিয়ে পতাকা অর্পণ করেছে মেয়েটি।
মেয়েটির পরিচয় এখনো অজানা। তবে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ফ্রান্সের মুক্তিকামী বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের সাজ দেওয়া হয়েছে তাকে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি বললেন...
পতাকা অর্পণ শেষে মঞ্চে কথা বলেন ফ্রান্সের তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন টনি এস্তাগুয়েত। এরপর মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ। তিনি টেকসই, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, লিঙ্গবৈষম্যহীন এবং সবার অংশগ্রহণমূলক অলিম্পিকের নিশ্চয়তা দিলেন। বললেন, ‘অলিম্পিক গোটা বিশ্বকে একসূত্রে গাঁথে। আমাদের অলিম্পিক–বিশ্বে কোনো দক্ষিণ বা উত্তর নেই।’
আমাদের অলিম্পিক–বিশ্বে কোনো দক্ষিণ বা উত্তর নেইটমাস বাখ, আইওসি সভাপতি
দুই কিংবদন্তি এবং মশাল হাতবদল
ছবিতে মুখটা দেখে নিশ্চয়ই চেনা যাচ্ছে! বাঁ হাত দিয়ে মশালটি নিচ্ছেন ২২ বার গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী স্পেনের টেনিস কিংবদন্তি রাফায়েল নাদাল। স্যুট পরা যে ভদ্রলোক উল্টো মুখে দাঁড়িয়ে নাদালকে বুকে টেনে নিয়ে মশাল হাতবদল করছেন, তাঁর নাম জিনেদিন জিদান। ফ্রান্সের হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি!
আইফেল টাওয়ারে আলোর ঝরনাধারা
মশাল প্রজ্বালন এবং তারপর...
প্যারিসেই প্রথম গরম বাতাসের বেলুন উড়িয়েছিলেন মন্টগলফিয়ের ভাইয়েরা। সেটি ১৭৮৩ সালের কথা। সেই প্যারিসেই অলিম্পিকের মশাল প্রজ্বালনের পর তা ওড়ানো হলো গরম বাতাসের বেলুনে। ইতিহাস ফিরে এল অলিম্পিকের আগুনের শিখায় চড়ে!
লুভ্যর জাদুঘর ও প্লেস দে লা কনকর্ডের মাঝে অবস্থিত তুঁলেরিয়েস গার্ডেনে প্রজ্বলিত হলো ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের মশাল। ১৯৪৮ অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ে সোনাজয়ী ও ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি বয়সী বেঁচে থাকা সোনাজয়ী সাইক্লিস্ট চার্লস কোস্তে অলিম্পিকের মশাল তুলে দেন জুডোকা টেডি রেনার ও সাবেক স্প্রিন্টার মেরি-হোসে পেরেককে। তাঁরা দুজন মশাল প্রজ্বালন করেন। তবে হুইলচেয়ারে বসে থাকা ১০০ বছর বয়সী কোস্তে মশাল প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করেন।
...এবং সেলিন ডিওনের ফেরা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি
সাদা পোশাকে মঞ্চে ফিরলেন কানাডার কিংবদন্তি গায়িকা সেলিন ডিওন। গাইলেন ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা প্রয়াত এডিথ পিয়াফের ‘লা’হাইম এ লা’আমুর’ গানটি। স্টিফ পারসন সিনড্রোম রোগে ভোগার ঘোষণা দেওয়ার পর জনসমক্ষে কনসার্টে এটাই ডিওনের প্রথম উপস্থিতি।
আর এই গানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
অলিম্পিকে আলোকিত রাত
জমকালো, ইতিহাস ও আধুনিকতার মিশেল, ছন্দময়, নাচুনে ও বাহারি সব উৎসবের রাত নেমেছিল প্যারিসে। চার ঘণ্টার বেশি সময় কীভাবে যেন কেটে গেল!
সিন নদীর দুই পাড়ে ধুন্ধুমার নাচ চলেছে। নদীর পাড়ে পাটাতনের মতো মঞ্চেও ছিল নাচ ও গানের আয়োজন। আর নদীতে রকমারি সব পোশাক পরা দলগুলোকে নিয়ে ভেসেছে জলযান। সিনের বুকে যখন এসব চলছিল, তখন শর্টফিল্মে মুখোশধারী এক লোককে মশাল হাতে ঘুরতে দেখা গেল। তাঁর সঙ্গে জিনেদিন জিদানের দেখা হলো। লুভ্যর থেকে মোনালিসা হারিয়ে গেল! পরে খুঁজে পাওয়া গেল সিনের বুকে—জলে ভাসছে।
পর্দায় কল্পনার জগতের রং ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে বাস্তবেও। উৎসবের মেজাজে নিজ নিজ দলের মার্চপাস্টে সমর্থন দিয়েছেন উপস্থিত প্রায় তিন লাখ দর্শক। দলগুলোর মার্চপাস্টের একটি জায়গায় ফ্রান্সের ১০ জন অসাধারণ নারীর ভাস্কর্যও উন্মোচন করা হলো। তারপর সেই আইকনিক মুহূর্ত! অলিম্পিকের পতাকা অর্পণ করতে কৃত্রিম ঘোড়ায় চড়ে সিন পাড়ি দিলেন কৃত্রিম জোয়ান অব আর্ক!
প্যারিস অলিম্পিকের পতাকা উত্তোলন হলো তারপরই।
আয়োজকেরা বক্তব্য দিলেন। আশার কথা শোনালেন। ওদিকে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে রেলে দুষ্কৃতকারীরা হামলা করেছে। বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী তাই একটু বেশিই তৎপর ছিল। তবে নিরাপত্তার চাদরে মুড়েই প্যারিস উপভোগ করেছে আইফেল টাওয়ারের আলো। সে আলো ১০০ বছর পর ভালোবাসার নগরীতে অলিম্পিক ফেরার আলো। মশাল প্রজ্বালনের আগে ১০০ বছর বয়সী সাবেক সাইক্লিস্টকে নিয়ে এসে বেশ চমকেই দেওয়া হয়েছে।
প্যারিস অলিম্পিক এই চমকটা ধরে রাখুক। আজ এ পর্যন্তই।